Cvoice24.com


খাগাড়াছড়িতে সিএনজি-থ্রি হুইলারের টোকেন বাণিজ্য রমরমা

প্রকাশিত: ০৮:৩২, ২৯ জানুয়ারি ২০২০
খাগাড়াছড়িতে সিএনজি-থ্রি হুইলারের টোকেন বাণিজ্য রমরমা

খাগড়াছড়িতে রেজিস্ট্রেশন বিহীন চলছে শত শত সিএনজি ও থ্রি হুইলার।ছবি/সিভয়েস

পুরো খাগড়াছড়ি জেলায় নিবন্ধিত সিএনজি ও থ্রি হুইলারের সংখ্যা মাত্র ৩৫০টি। কিন্তু জেলার ৯টি উপজেলা, আন্ত: উপজেলা সড়কের পাশাপাশি গ্রামীণ পর্যায়ে সড়কে চলাচল করছে ৫ হাজারের সিএনজি ও মাহিন্দ্র। এসব গাড়ি বৈধ না চোরাই তার হিসাবও নেই স্থানীয় বিআরটিএ, পরিবহন মালিক সমিতি ও প্রশাসনের কাছে। আর সেই কারণে পর্যটকদের নিয়ে কোনো দুর্ঘটনার পর পুলিশের কাছে অভিযোগ জানালেও ধরা ছোঁয়ার বাহিরে থেকে যায় দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ি ও চালক।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাজেক ভ্রমণের জন্য প্রতিদিন কয়েক’শ পর্যটক আসে খাগড়াছড়ি। এসব পর্যটকের মধ্যে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং ছোট পরিবারের মানুষরা ব্যয় সংকোচনের জন্য সিএনজি এবং থ্রি হুইলারের উপরই ভরসা করেন তারা। কিন্তু এসব যানবাহনের অনিয়ন্ত্রিত-লাগামহীন ভাড়ার বিষয়ে কেউই দায় নেন না।

অভিযোগ আছে, ট্রাফিক পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের সামনেই এসব গাড়ি চলাচল করলেও অজ্ঞাত কারণে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। চলছে টোকেনের মাধ্যমে। তবে টোকেনের মাধ্যমে টাকা নিয়ে এসব গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেওয়ার অভিযোগ সত্য নয় বলে জানান খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার এসপি আব্দুল আজিজ।

খাগড়াছড়ি সিএনজি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বলেন, পুলিশকে জানিয়েই টোকেনের মাধ্যমে এসব যানবাহন চলছে। বিআরটিতে একাধিকবার গিয়ে হয়রানির স্বীকার হওয়ায় এসব সিএনজি কিংবা থ্রি হুইলার মাহিন্দ্র হালকা যানবাহনগুলোর রেজিস্ট্রেশন করাতে পারেনি।

জেলার মাটিরাঙা সদরের বাসিন্দা আবু হালিম জানান, কিছুদিন আগে তিনি সিএনজি দুর্ঘটনায় পড়েছেন। থানায় মামলায় করতে গেলে থানা গাড়ি নাম্বার না থাকার অজুহাতে মামলা নেননি। এ ধরনের ঘটনা আর অভিযোগ যেনো খাগড়াছড়িতে অনেকটা নিয়মেই পরিণত হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, গাড়ির যদি রেজিস্ট্রেশান নাম্বার না থাকে, তাহলে শনাক্ত করা সম্ভব নয়।

ভ্রমণ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘গ্রীনট্যুর’-এর ব্যবস্থাপক জিয়াউর রহমানের অভিযোগ, অনেক সময় এসব যানবাহনের চালকদের সিন্ডিকেট ভাড়ার কারণে অনেক পর্যটকের পক্ষে সাজেক-ই যাওয়া হওয়া না। খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকগামী নির্ধারিত কোনো গণ-পরিবহন না থাকার সুযোগে হালকা যানবাহনের মালিক-শ্রমিকদের কাছে সব যাত্রীরাই জিম্মি হয়ে পড়েছেন।

ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী সাইমা সেঁজুতির অভিযোগ, মাত্র দেড়’শ কিলোমিটার পথ আসা-যাওয়ার জন্য আট হাজার টাকা ভাড়া নির্ধারণ বাংলাদেশের আর কোথাও নেই। তারা সাজেকে একটি সিএনজি দিয়ে যাওয়া-আসা করতে আট হাজার টাকা ভাড়া দিয়েছেন।

‘কনজিউমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)’-এর খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সা: সম্পাদক প্রদীপ চৌধুরী জানান, সাজেক পর্যটন স্পটের কারণে খাগড়াছড়ি জেলা শহরের আবাসিক ও খাবার হোটেল-রেস্টুরেন্ট, পরিবহন এবং পাহাড়ি হস্তশিল্পের বাজারে বৈপ্লবিক উত্থান ঘটেছে। শুধুমাত্র অসাধু সিএনজি-থ্রি হুইলারের মালিক-চালকদের উৎপাতে পর্যটকরা অর্থনৈতিকভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সাজেক ভ্রমণে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। এই অবস্থার নিরসন হওয়া জরুরী। তাছাড়া হাজার হাজার গাড়ি বছরেরর পর বছর রেজিস্ট্রেশনবিহীন কিভাবে চলে তাও রহস্যজনক।

খাগড়াছড়ি বিআরটিএ’র উপরিচালক প্রদীপ কুমার দেব বলেন, ‘এসব যানবাহনগুলোর অধিকাংশরই ফিটনেস, চালকদেরও লাইসেন্স নেই, যার ফলে তারা রেজিস্ট্রেশন করতে বিআরটিএতে আসতে পারছে না।’ তিনি বলেন, সড়ক কিংবা মহাসড়কে এসব রেজিস্ট্রেশনবিহীন হালকা যানবাহন  ট্রাফিক পুলিশের মুখোমুখি হলে সমিতির নেতাদের মাধ্যমে ছাড় পেয়ে যায়।’

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার এসপি আব্দুল আজিজ বলেন, ‘নতুন সড়ক আইনে এ বছরের জুন মাস পর্যন্ত মামলা না করার নিদের্শনা রয়েছে। তারপরও পুলিশ প্রশাসন হালকা যানবাহন মালিক ও চালকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করে যাচ্ছে। কোনও যানবাহন ও চালকের যদি আইনানুগ অনুমতি না থাকে তাহলে তাদের সড়কে অবস্থান করতে দেওয়া হবে না।’
          
জেলা প্রশাসক এবং জেলা পর্যায়ে ‘রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (আরটিসি)’-এর সভাপতি প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘এ জেলায় রেজিস্ট্রেশন ছাড়া সিএনজি কিংবা থ্রি হুইলার মাহিন্দ্র চলাচল করার কোনো সুযোগ নেই। অচিরেই জেলা প্রশাসন এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনতে বাধ্য করবে।’

-সিভয়েস/এসসি

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়