Cvoice24.com

ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে মেয়র নাছিরের জিরো টলারেন্স ঘোষণা
হ্যালো ওসি! ফুটপাত নাকি ফলমন্ডি?

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ২৯ জানুয়ারি ২০২০
হ্যালো ওসি! ফুটপাত নাকি ফলমন্ডি?

ছবি : সিভয়েস

ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে মেয়র নাছিরের জিরো টলারেন্স ঘোষণা দেয়ার পরও হাঁটার জায়গাজুড়ে বিভিন্নরকম ফলের পসরা আর হকারদের ব্যস্ততা। দেখে বোঝার উপায় নেই, এটি ফুটপাত নাকি ফলমন্ডি। পথচারীরা ফুটপাতে জায়গা না পেয়ে রাস্তায় হাঁটবেন? না! সেখানেও একই অবস্থা। রাস্তা আর ফুটপাত দখল করে আছে অবৈধ গাড়ি পার্কিং আর বাহারি হকার।

জানাতে চেয়েছিলাম নগরীর ‌‘বিপনী বিতান (নিউ মার্কেট) সামনে থেকে কোতোয়ালি থানার মোড়’ রোড়ের পরিস্থিতি। ভাসমান ফলের দোকান, ব্যবসা সামগ্রী আর হকারদের ধাক্কিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে প্রতিদিনই হয়রানি পোহাচ্ছেন পথচারীরা এবং শিক্ষার্থীরা। বৈধ-অবৈধ টেম্পু পার্কিং আর ফুটপাত দখলের কারণে ‘নিউ মার্কেট’ মোড় এলাকায় প্রতিনিয়ত জ্যাম লেগে থাকে।

একদিকে ফুটপাত দখল অপরদিকে সড়কে এলোমেলো গাড়ি চলাচল, এই নিয়ে জনমনে ক্ষোভের পরিমাণ একটু বেশি। কারণ সিএমপি’র সেরা থানা কোতোয়ালি। তবে কোতোয়ালি থানামুখী এই রোডের ফুটপাত ও দখলে থাকে সারাবছর। হ্যালো ওসি’র মাধ্যমে ওসিরা জনদূর্ভোগের কথা শুনলেও, ওনাদের কানে পৌঁছায় না, এই জনর্দুভোগের কথা।

ফিরিঙ্গিবাজার এলাকার বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক ফরিদুল আলম সিভয়েস’কে বলেন, হ্যালো ওসি’র মাধ্যমে সিএমপি’র ওসিরা সাধারণ জনগণের কথা শুনলেও ফুটপাত দখলে তারা দারুণ নিরব ভূমিকায় থাকেন। আমি হ্যালো ওসি’কে অনুরোধ করবো, এইটা ফুটপাত নাকি ফলমন্ডি এসে দেখে যেতে!

বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকুরীজীবি মনিরুল ইসলাম বলেন, ফুটপাত জুড়েই নানা রকমের দোকান। পথচারীদের হাঁটার জায়গা দখল করে নানা রকমের ফলের বাজার সাজিয়ে রেখেছে অবৈধ দখলদার। ফুটপাত দিয়ে হাঁটার মতো পরিস্থিতি নেই। তাই বাধ্য হয়ে পথচারীরা নেমে এসেছে মূল সড়কে। যে কারণে যানচলাচলে বিঘ্ন ঘটছে, সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। সঙ্গে থাকছে পথচারীদের দুর্ঘটনার আশঙ্কাও। কোতোয়ালি থানার ওসি নাকি অনেক জনবান্ধন অথচ ওনার থানার অল্প দূরুত্বে চরম মাত্রায় জনদূর্ভোগ, তা ওনার নজরে আসেনা।

পাথরঘাটা এলাকার বাসিন্দা ফারবিন সোলতানা সিভয়েস’কে বলেন, একদিকে ফুটপাত দখল অন্যদিকে রাস্তায়ও ঠিকভাবে হাঁটার অবস্থা নেই। এই পথেই মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যাওয়া আসা করি। একদিকে ফলের দোকানের সারি আর অন্যদিকে রাস্তায় গাড়ির প্রচন্ড ভিড়। প্রতিনিয়ত মেয়েকে নিয়ে ভয়ের মধ্যে থাকতে হয়। প্রসাশন মাঝে মাঝে লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করলেও ১/২ দিন পর টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যায়।

বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, নিউমার্কেট এলাকা জুড়ে ফুটপাতে দোকানের আধিক্য অসহনীয়। ফুটপাতগুলো হকাররা দখল করে ব্যবসা করলেও এর নেপথ্যে আছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। হকাররা নিজেরাও এসব সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি। প্রতিদিনই চলছে মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজি। কোনো এক অদৃশ্য শক্তির কারণে তাদের এ আধিপত্য। যে কারণে বারবার উচ্ছেদ করার পরও দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না ফুটপাতগুলো। ফুটপাতের দোকানের জন্য প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত আর জুতা ও আরেকটু বড় দোকানের জন্য ২০০ থেকে ২৫০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয় তাদের।

জিপিও’র সামনের মূল সড়ক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে স্কুল শিক্ষার্থী রাকিব। পেছনেই পিকআপের ড্রাইভার হর্ন বাজিয়ে বলছেন ‘পিচ্ছি একটু সাইড দাও’। চালকের কথার উত্তরে রাকিব বলছে, কোথায় যাব? ফুটপাতে দোকান, রাস্তায় গাড়ি। রাস্তায় বড়রা ঠিকমত হাঁটতে পারে না আর আমরা ছোটরা কিভাবে হাঁটবো?

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী স্বরুপ বড়ুয়া সিভয়েসকে জানায়, ফুটপাত থেকে নামতেই রাস্তার পাশজুড়ে সারি সারি বৈধ-অবৈধ টেম্পু দাঁড়িয়ে থাকে। আর ফুটপাতে আসে নানা রকম পরিবর্তন। কিছুদিন ফলের দোকান, কাপড়ের দোকান। আর কিছুদিন লেইস-ফিতার দোকানসহ নানা রকম হকারের আগমন ঘটে এখানে। পথচারীদের বিড়ম্বনা থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রশাসনকেই কঠোর উদ্যোগ নিতে হবে।

বিপনী বিতান মার্কেটের ব্যবসায়ী নিয়াজ হোসেন সিভয়েস’কে বলেন, যে সরকার ক্ষমতায় আসে সে সরকারের অনুগত্য সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ থাকে এসব ফুটপাত। ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করার কারণে প্রতি মাসে কয়েক লাখ টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় মার্কেটের ব্যবসায়ীদের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফুটপাতের এক ফল ব্যবসায়ী সিভয়েস’কে বলেন, অনেক বছর ধরেই এভাবে ফুটপাত আর রাস্তায় ব্যবসা করছি। কেউ বাধা দেয় না। প্রতিদিন ১০০ থেকে ৩০০ টাকা দিতে হয়। অনেক শক্তিশালী সিন্ডিকেট আছে যারা প্রতিদিন চাঁদা নেয়। যে কারণে বারবার উচ্ছেদ অভিযানের পরও আমরা ফিরে এসে আবার দোকান নিয়ে বসতে পারি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন বলেন, বিকাল ৩টা থেকে ফুটপাতে হকার বসার অনুমতি আছে এবং হকার বসার বিষয়ে নীতিমালা আছে। নীতিমালার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এই নীতিমালা তৈরি করেছেন।

এ বিষয়ে চসিক’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফিয়া আক্তার ও আইন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসিম উদ্দীন সিভয়েসকে বলেন, হকার বসার নীতিমালা প্রসঙ্গে তারা অবগত নন।

-সিভয়েস/এসসি

তাপস বড়ুয়া

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়