Cvoice24.com


খানাখন্দে ভরা বাঁশখালী পিএবি সড়ক, ভোগান্তির শেষ নেই

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২২ জানুয়ারি ২০২০
খানাখন্দে ভরা বাঁশখালী পিএবি সড়ক, ভোগান্তির শেষ নেই

ছবি: সিভয়েস

খানাখন্দ আর অসংখ্য ছোট-বড় গর্তে ভরা আনোয়ারা বাঁশখালী পিএবি সড়ক। চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের বিকল্প এ প্রধান সড়ক। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন সড়কে চলাচলকারী হাজারো মানুষ। মাঝপথে বিকল হয়ে যাচ্ছে ছোট বড় অসংখ্য যানবাহন। শুধু ভোগান্তি নয় ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

সড়কে এ্যাম্বুলেন্সযোগে যাতায়াতকারী বিভিন্ন রোগী ও গর্ভবতী মহিলাসহ সাধারণ যাত্রীদের চলাচলে দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। 

প্রতিদিন পেকুয়া, চকরিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া সহ দক্ষিণাঞ্চলের অসংখ্য যানবাহন ও কয়েক লক্ষাধিক মানুষ চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে এ সড়ক দিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি বেহাল দশা অবস্থায় পড়ে থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর কাড়েনি। ফলে চরম ভোগান্তির মধ্য দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে পাঁছ ছয়টি উপজেলার যাত্রীরা। সড়কগুলোর এমন বেহাল দশার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের। এই সড়কে চলতে গিয়ে সময় নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি একের পর এক দুর্ঘটনার শিকারও হতে হচ্ছে।

এদিকে দোহাজারী সড়ক বিভাগ থেকে সড়কটি সংস্কারের জন্য ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। তবে কবে নাগাদ সড়কটির কাজ শুরু হবে এই নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। 

জানা গেছে, দোহাজারী সড়ক বিভাগের অধীনে পটিয়া-আনোয়ারা-বাঁশখালী (পিএবি) সড়কের প্রায় ৭০ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে বাঁশখালী অংশটি তৈলারদ্বীপ সেতু থেকে টৈটং পর্যন্ত ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৫ কিলোমিটার সড়কের ৯.৭ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার করলেও বাকি অংশটুকুতে বিশাল বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্ত ভরাটের জন্য সড়ক বিভাগ থেকে জরুরী ভিত্তিতে সংস্কার কাজ চালালেও কার্পেটিং গুলো উঠে গিয়ে পুনরায় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়ক বিভাগের অধীনে আনোয়ারা কালা বিবির দিঘী থেকে জলদী পর্যন্ত সড়কের জ্বরাজীর্ণ অংশে ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ১৮ ফুট প্রস্থ স্থায়ী ভাবে রাস্তা সংস্কারের জন্য টেন্ডার আহবান করা হয়েছে।

সরজমিনে দেখা যায়- উপজেলার পুকুরিয়ার এক্কাইত্যা পুকুর পাড়, সাধনপুরের বাণীগ্রাম বাজার ও সোনার টিলা কালীপুর ছফিরের দোকান, বৈলছড়ি বাজারের উত্তরাংশ, সরলের পাইরাং ও দেলাইয়ার দোকান, পৌরসভার উত্তর জলদী ও দক্ষিণ জলদী, শীলকূপ টাইম বাজার, চাম্বলের সিকদার দোকান থেকে শেখেরখীল রাস্তার মাথা পর্যন্ত ও পুইছড়ির প্রেম বাজার, নাপোড়া বাজারের উত্তরাংশে সড়ক জুড়ে অসংখ্য গর্ত ও খানাখন্দকে ছেয়ে গেছে। সিমেন্ট, রড ও মাটি বোঝাই অতিরিক্ত ভারী যানবাহন চলাচলের ফলে সড়কটি ছিন্ন ভিন্ন হয়ে পড়েছে। ওই গর্ত গুলোতে পড়ে একদিকে যেমন বিভিন্ন যানবাহনের যন্ত্রাংশ ক্ষয়ক্ষতি হয়, তেমনি যাত্রীরাও বিভিন্ন ভাবে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। এসব গর্ত গুলোকে এড়িয়ে চলতে গিয়ে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হয় অসংখ্য যানবাহন ও সাধারণ মানুষ। বিগত কিছুদিন পূর্বে সড়কের কিছু কিছু অংশে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গর্ত ভরাট কার্যক্রম পরিচালনা করা হলেও উক্ত কাজ যথাযথ মানসম্মত ভাবে না করার অভিযোগ উঠেছিল। বর্তমানে পাথর বিটুমিনযুক্ত কার্পেটিং গুলো উঠে গিয়ে পুনরায় পূর্বের ন্যায় গর্ত হয়ে গেছে। সড়কের এহেন অবস্থায় নিত্য দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছে যাত্রীসাধারণ। অপরদিকে যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গাড়ীর মালিকগণ। সড়কের কার্পেটিং উঠে যাওয়ায় ধুলাবালিতে অতিষ্ঠ সাধারণ পথচারীরাও। তাছাড়া পুরো উপজেলার সড়কের নিকটাবর্তী বসবাসকারী শিশু থেকে শুরু করে সকল শ্রেনীর মানুষের মাঝে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। এই ধুলি মানব জীবনে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে মারাত্মক বলে অভিজ্ঞ ডাক্তারদের অভিমত। অপরদিকে উপজেলার গুনাগরি ও চাম্বল বাজারে রাস্তায় ফুতপাত বসানোর কারণে তীব্র যানজট যেন নিত্য দিনের সঙ্গী। এমন কোন দিন নাই এই বাজারে যানজটের কবলে পড়তে হয়না সাধারন পথচারীদের। প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ী এই সড়কে চলাচল করলেও রাস্তা প্রশস্ত হওয়ার কারণে যেমন দূর্ঘটনা তেমন যানজটে নকাল সাধারন পথচারীরা।

দ্রুত সড়ক সংস্কার কাজের গতি বাড়ানো সহ কাজের গুণগত মান সঠিক নির্ণয়ে সওজ কর্তৃপক্ষসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন উর্ধ্বতন মহলের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সাধারণ জনগণ।

পৌরসভার নোয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও শিক্ষক মৌলানা ওসমান জানান, পৌরসভার শুরু অলি মিয়ার দোকান থেকে জলদী মিয়ারবাজার পযর্ন্ত  সড়ক দিয়ে চলাচল করা যায় না বললেই চলে। শিগগিরই সড়কটি মেরামত করা না হলে জনগণের দুর্ভোগ আরো বাড়বে। 
বাঁশখালী-আনোয়ারা ও পেকুয়া মগনামা   রুটে চলাচলকারী স্পেশাল পরিবহনের চালক শাহেদ বলেন, খানাখন্দ ছাড়াও রাস্তার ওপর পড়ে থাকা ইট-পাথরের সুড়কির ওপর দিয়ে গাড়ি চালালে টায়ারের বারোটা বেজে যায়। ফলে প্রাইভেট কার থেকে রিকশা পর্যন্ত সব যানবাহনকে থেমে থেমে চলতে হয়।

চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রতিদিন আসা নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক এক পথযাত্রীর বলেন ‘সারা দিন চট্টগ্রাম শহর থেকে নিজের কর্মস্থলে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে গুনাগরী ও চাম্বল বাজারে প্রায়ই যানজটে আটকা পড়ি। এতে কষ্টের পরিমাণ বহুগুণ বেড়ে যায়।’

দোহাজারী সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ) নিবার্হী প্রকৌশলী সুমন কুমার সিংহ বলেন, ‘বাঁশখালী প্রধান সড়কটি সংস্কার এবং স¤প্রসারণের জন্য বরাদ্দ চেয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগে পত্র প্রেরণ করা হয়েছিল। কালা বিবির দিঘী থেকে জলদী পর্যন্ত ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে শীঘ্রই সড়কটির সংস্কার কাজ শুরু হবে। জলদী থেকে টইটং বাকী অংশে কাজের জন্য ২৫ কোটি টাকার টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। শিগ্রই গর্তভরাট সহ পুরো সড়কের সংস্কার কাজ করা হবে।'

মিজান বিন তাহের, বাঁশখালী

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়