Cvoice24.com


রাখাইনে ‘যুদ্ধাপরাধের’ প্রমাণ পেয়েছে মিয়ানমার, গণহত্যার নয়!

প্রকাশিত: ০৯:০৮, ২১ জানুয়ারি ২০২০
রাখাইনে ‘যুদ্ধাপরাধের’ প্রমাণ পেয়েছে মিয়ানমার, গণহত্যার নয়!

ছবি : সংগৃহীত

সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর কোনো প্রমাণ তারা পায়নি বলে দাবি করেছে মিয়ানমার সরকারের নিযুক্ত একটি প্যানেল। রাখাইন রাজ্যে ‘যুদ্ধাপরাধের’ প্রমাণ পেয়েছে বলে সোমবার জানিয়েছে সরকার নিযুক্ত ওই তদন্ত কমিশন।

কমিশন বলেছে, ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীর দমনাভিযানের সময় সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ ও গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে মায়ানমার তদন্ত কমিশন। একই সাথে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর কোনো প্রমাণ তারা পায়নি বলে দাবি মিয়ানমার সরকারের নিযুক্ত একটি প্যানেলের।        

সোমবার (২১ জানুয়ারি) মিয়ানমার সরকার কর্তৃক নিযুক্ত ওই তদন্ত কমিশন জানিয়েছে। কমিশন জানায়, যুদ্ধাপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ওইসব ঘটনার মধ্যে ‘নিরাপরাধ গ্রামবাসীদের হত্যা ও তাদের বাড়িঘর ধ্বংস’ করার ঘটনাও আছে। এসব ঘটনার জন্য ‘বহু ভূমিকায়’ থাকা লোকজনের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও ছিল এমন সিদ্ধান্তে আসার মতো ‘বাস্তব প্রমাণ’ পাওয়ার কথা জানানো হয়।  

জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত মিয়ানমারের বিরুদ্ধে দায়ের করা গণহত্যার মামলার রায় দেওয়ার আগে এটি সত্যকে ‘ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা’ বলে মনে করছেন অধিকার আন্দোলনকারী গোষ্ঠীগুলো ও রোহিঙ্গা নেতারা।

তাদের বিবৃতিতে প্যানেল ৩০টি পুলিশ পোস্টে হামলার জন্য রোহিঙ্গা জঙ্গিদের দায়ী করে এসব হামলাই দমনাভিযানের ‘সূচনা’ করেছে মন্তব্য করে পরিস্থিতিকে ‘অভ্যন্তরীণ সশস্ত্র সংঘাত’ বলে বর্ণনা করেছে, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

বিবৃতিতে প্যানেল বলেছে, রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে মুসলিম বা অন্য কোনো সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার পরিকল্পনা বা অভিপ্রায় অনুসারে এসব হত্যা বা বাস্তুচ্যুতির কাজ করা হয়েছিল, এমন ধারণা করার মতো কোনো প্রমাণ আইসিওই (তদন্ত কমিশন) পায়নি।

এসব অপরাধ কোনো ধর্মীয় বা জাতিগত, নৃগোষ্ঠীগত বা জাতীয় গোষ্ঠীকে পুরোপুরি বা আংশিক ধ্বংস করার অভিপ্রায় নিয়ে বা গণহত্যার আন্তর্জাতিক অপরাধ হওয়ার মতো প্রয়োজনীয় মানসিকতা নিয়ে করা হয়েছে, এমন বিতর্ক করার পক্ষেই যথেষ্ট প্রমাণ নেই, সিদ্ধান্ত তো আরও দূরে।

অধিকার আন্দোলনকারী গোষ্ঠীগুলো ও রোহিঙ্গা নেতারা প্যানেলের প্রতিবেদনটিকে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য গোপনের চেষ্টা’ অভিহিত করে বাতিল করে দিয়েছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল বলে কথিত গু দার পাইন গ্রামে মোতায়েন সেনাবাহিনীর একটি রেজিমেন্টের সৈন্য ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নভেম্বর থেকে বিরল একটি বিচার শুরু করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।

২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দেশটির সেনাবাহিনীর চালানো নৃশংস দমনাভিযানের সময় কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা পাশবিক সহিংসতার মুখে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে প্রতিবেশী বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়।

জাতিসংঘ বলেছে, ওই সহিংসতা চলার সময় দলগত ধর্ষণ ও ‘গণহত্যার অভিপ্রায়’ নিয়ে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে। শত শত গ্রাম পুড়িয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার পর সবকিছু সরিয়ে নিয়ে পরিষ্কার করে ফেলা হয়েছে।

কমিশনের তদন্তে উদ্ঘাটিত এসব তথ্যের সঙ্গে মিয়ানমার সরকার ‘একমত’ বলে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট উয়িন মাইন্ট। তিনি বিশেষত বেসামরিক লোকজন ও রোহিঙ্গা জঙ্গিদের কথিত অপরাধের বিষয়ে আরও তদন্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।    

সামরিক বাহিনী চলামন তদন্ত যেনো আরও বিস্তৃত হতে পারে তার জন্য তিনি তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনটি সেনাবাহিনীর প্রধানের কাছে হস্তান্তর করেছেন বলে উয়িন মাইন্ট জানিয়েছেন।

-সিভয়েস/এসসি

সিভয়েস ডেস্ক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়