Cvoice24.com


লোকসানে ধুঁকছে কর্ণফুলী পেপার মিল, ‘সম্ভাবনা’ পরিকল্পনায়

প্রকাশিত: ১৫:৩৪, ১৮ জানুয়ারি ২০২০
লোকসানে ধুঁকছে কর্ণফুলী পেপার মিল, ‘সম্ভাবনা’ পরিকল্পনায়

কর্ণফুলী পেপার মিল। ছবি: সিভয়েস

বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে কর্ণফুলী পেপার মিল (কেপিএম)। মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে আছে তার দানব আকৃতির দালান ও যন্ত্রপাতি। দালানগুলো যেন ভেঙে পড়বে কোনো ঝড়ো বাতাসে। যন্ত্রগুলো পড়ে আছে বিকল। নেই রক্ষণাবেক্ষণ, ব্যবস্থাপনা, পর্যাপ্ত ও দক্ষ শ্রমিক ও কাঁচামাল। সর্বোপরি চাহিদা অনুযায়ী নেই উৎপাদন । লোকসান নিয়ে হোঁচট খাচ্ছে ৭০ বছরের এ প্রতিষ্ঠানটি।

কর্ণফুলী পেপার মিল (কেপিএম) সরেজমিনে পরিদর্শন করে জানা যায়, কেপিএম-এর জমির পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ২৭ হাজার ৫৩০ একর। তার মধ্যে ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭৭ একর জমি বাঁশ কাঠ সংগ্রহের জন্য, যা কাঁচামালের খোরাক। এতে ২২ রকম কাগজ তৈরি করা হয়। কিন্তু বর্তমানে জনবল সংকট ও তিনটির মধ্যে দুইটি উৎপাদনকারী যন্ত্র কার্যকর না থাকায় এখন বর্তমান গড় উৎপাদন প্রায় ৩০ টন। অথচ এ মিলে উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ১৫০ টন। ২০০১ সালে জুলাই মাসে এ মিলে শ্রমিক ছিলো প্রায় দেড় হাজার। 

বর্তমানে এ মিলে কাজ করে প্রায় তিনশ শ্রমিক। ২০০৯-২০১০ অর্থ বছরের প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন ছিলো ১৭ হাজার ৯৫৫ মেট্রিক টন। যা বর্তমানে কমে ৫ হাজার ৬৫২ মেট্রিক টনে ঠেকেছে।

কেপিএম-এর ফোরম্যান শাহ আলম বলেন, 'আমি দীর্ঘ ৩৩ বছর ধরে এ মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছি। এমন একটি প্রতিষ্ঠান থেকে সরকার লাভ করতে না পারার কারণ হলো- দুর্নীতি। উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা সহ সিবিএ নেতাদের কারণে এ মিলের দুর্ভোগ নেমে এসেছে। গত বারো-তেরো বছর ধরে মিলটার খারাপ হতে হতে আজ মুমূর্ষু অবস্থা হয়েছে। এ মিল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত শ্রমিক নেই। বিশাল বাগান আছে। কিন্তু সে বাগানের বাঁশ-গাছ এখন কাটা হয় না। তাই মিলের জন্য বাইরে থেকে কাঁচামাল কিনতে হয়।'

মিলের সকল শ্রমিকদের দুর্ভোগের কথা তুলতে তিনি বলেন, ২০১২/১৪ সালে অবসরে যাওয়া শ্রমিকরা এখনো তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ড, ইন্সুরেন্সের টাকা পায় নাই। তাদের অনেকে মারাও গেছেন। অন্যদিকে আমরা যারা মিলে বর্তমানে কাজ করছি, তারা চলতি মাস সহ চার মাসের বেতন পাইনি। মিল এখন ১৬ আনার মধ্যে ২ আনা চালু আছে। তাই ১৯৫৩ সালের পূর্বে তৈরি করা আমাদের ঘরগুলোর কোনো সংস্কার নেই। নারী ও পুরুষের জন্য ১০০ শয্যার হাসপাতাল আছে। কিন্তু কোনো ডাক্তার নেই। একজন ডাক্তার আছেন, উনি শুধু আমাদের চিকিৎসাজনিত ছুটির দরখাস্তে স্বাক্ষর করেন। চিকিৎসার জন্য আমাদের বাইরে যেতে হয়।'

কাঁচামাল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'মিলের নিজস্ব বাগানতো অনেক বড়। এ বাগানের এক দিক থেকে গাছ কাটা শুরু করে অন্যদিকে গিয়ে দেখবেন শুরুর দিকে গাছ উঠে গেছে। এ বন শেষ হবার না। কিন্তু এখন বাগানের গাছ বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে শুকায়। আর মিলের কাঁচামাল হিসেবে বিদেশ থেকে পাল্প আনে। এছাড়া মাঝে মাঝে টেন্ডার দিয়ে গাছ কেনা হয়। তবে এ বিষয়গুলো নিয়ে মিলের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ভালো বলতে পারবেন।'

মিলের কি কি চালু আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'মিলে পাওয়ার প্ল্যান্ট, ওয়াটার প্ল্যান্ট, পেপার তৈরির মেশিন ২টি মেশিন চালু আছে। কেমিক্যাল, হাসপাতাল, সিভিল, মেনটেইন্যাস সহ অনেকগুলো ডিপার্টমেন্ট বন্ধ। আমাদের মিলে শ্রমিক বাড়ালে, মেশিন মেরামত করলে উৎপাদন বাড়বে। উৎপাদন বাড়লে মিল লাভবান হবে।'

কর্ণফুলী পেপার মিলের সিবিএ সভাপতি আব্দুল রাজ্জাক বলেন, 'আমরা যেকোনো কিছুর বিনিময়ে চাই আমাদের মিল চালু হোক। মিলের তিনটি মেশিন যদি সার্বক্ষণিকভাবে চালু রাখতে পারি, তাহলে মিলের উৎপাদন বাড়বে। উৎপাদন বাড়লে, মিলের শ্রমিকরা বেতন পাবে এবং মিল লাভজনক অবস্থায় গিয়ে রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবে।

কর্ণফুলী পেপার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক  ড. এম এ আব্দুল কাদের বলেন, 'মিল এখন জীর্ণ অবস্থায় আছে। মিল সংস্কার করতে গেলে অনেক খরচের মুখোমুখি হতে হবে। তাই সংস্কারের চেয়েও মিলের নতুন রূপ তৈরির চেষ্টা করতে হবে। এ নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা আছে। মন্ত্রণালয়ও চায়, এ মিল সচল হোক। তাই আশা করছি, খুব অল্প সময়ে আমরা আমাদের সমস্ত সংকট দূর করতে পারবো।'

সিভয়েস/এএস

শুভ্রজিৎ বড়ুয়া 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়