Cvoice24.com


গুইমারায় বিরামহীন বালু উত্তোলন, ধ্বংসের মুখে ফসলি জমি

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ১৭ জানুয়ারি ২০২০
গুইমারায় বিরামহীন বালু উত্তোলন, ধ্বংসের মুখে ফসলি জমি

ছবি : সিভয়েস

গুইমারায় অবৈধ বালু উত্তোলনে সাবাড় হচ্ছে খালবিল। উপজেলায় কোনো বৈধ বালু মহাল না থাকলেও  বিভিন্ন স্থান থেকে স্ক্যাভেটর দিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে প্রভাবশালী একটি চক্র। প্রতিনিয়ত বালু উত্তোলনের ফলে ভেঙ্গে যাচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন রাস্তঘাট, ধ্বসে পড়ছে ব্রীজ-কালভার্টের সংযোগ সড়ক, হুমকির মুখে সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বালু খেকোরা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে খালেরপাড় কেটে অবাধে বালু হিসেবে বিক্রি করছে।

উপজেলার তৈর্কমাপাড়া, চাইন্দামুনি, চিংগুলিপাড়া, বাইল্যাছড়ি ও সিন্দুকছড়িসহ প্রায় ১৬টি স্থান থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আবার স্ক্যাবেটর দিয়ে কেউ কেউ কাটছে পাহাড়ি ছড়ার পাড়, কেউবা আবার খাল থেকে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ড্রেজার মেশিন দিয়ে বিরামহীনভাবে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে।

সরেজমিনে গুইমারা উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের মধ্যে হাফছড়ি ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি পাহাড় কাটার দৃশ্য চোখে পড়েছে। মোট ১৮টি স্ক্যাভেটর দিয়ে কেটে ৩২টি ড্রাম ট্রাক ও ২০টি ট্রলিতে পরিবহন করছে এসব বালু ও মাটি। একদিকে শত শত একর ফসলি জমি নষ্ট করে উর্বর মাটি বিক্রি করা হলেও এসব নিয়ে মাথা ব্যথা নেই কৃষি বিভাগের। অন্যদিকে বালু উত্তোলন করে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ কৃষকরা।

হাফছড়ি এলাকার ক্যাজরি মারমা জানান, বালু উত্তোলনের ফলে এলাকার বেশিরভাগ কৃষি জমির উপরের অংশ (টপ সয়েল) দরিদ্র কৃষকরা বিক্রি করে দিচ্ছে। গত কয়েক বছর আগে যেসব জমির টপ সয়েল বিক্রি করা হয়েছে, সেসব জমিতে আর ফলনই হচ্ছে না।

স্থানিয় কৃষক ন্যাপা র্মামা ও অংগ্যজাই র্মামা জানান, বালু খেকোদের এমন আগ্রাসীকাণ্ডে এলাকার ফসলি জমি ধ্বংসের মুখে। তারা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। গড়ে উঠেছে প্রভাবশালীদের নিয়ে বালু ব্যবসার একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। যে কারণে গণমাধ্যমকর্মীরাও সংবাদ প্রকাশে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন। এছাড়াও বালুবাহী ভারি ট্রাকের অবাধে যাতায়াতের কারণে গস্খামীণ রাস্তাঘাট অসময়েই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।

স্থানীয় রাপ্রু মারমা জানান,তার পরিবার বালু ব্যবসায়ী মেহেদুল মাঝি’র নিকট একলক্ষ আশি হাজার টাকায় তার বসতঘর সংলগ্ন খালের পাড় বিক্রি করেছেন।তবে তার জায়গা থেকে বালু তোলার মৌখিক অনুমতি দিয়ে বিপদে পড়েছেন তিনি। কারণ ওই মেহেদুল মাঝির তার সম্পূর্ণ টাকা এখনো দেয়নি। এনিয়ে পারিবারিক ভাবে কলহ চলছে।

বালু ব্যবসায়ীরা জানান,তাদের কাছে বালু উত্তোলনের বা খালের পাড় কেটে বিক্রির বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই। তবে অবৈধ জেনেও এ ব্যবসা কিভাবে করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তারা জানান, বিভিন্ন উপায়ে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের এ ব্যবসা।

তৈর্কমা এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অংক্যচিং চৌধুরী জানান, বালু উত্তোলন ও খালেরপাড় কেটে বিক্রি করায় কৃষকদের ফসলা জমি ক্ষতিগ্রস্তের মুখে। বিষয়টি তিনি অবগত হয়ে উপজেলার সাপ্তাহিক মিটিংয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।

খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলন-এর সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী বলেন, গুইমারা এলাকাটি খাগড়াছড়ি জেলার অন্যতম উর্বর ও কৃষিভিত্তিক জনপদ। এই অঞ্চলের কৃষিজমি এবং প্রাকৃতিক পানির উৎস ছড়াও খালের মাটি-বালু বেপরোয়াভাবে কেটে নেয়ার ফলে এই এলাকায় পরিবেশের বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। দীর্ঘ মেয়াদে এসব বেআইনী কর্মকাণ্ড চলতে থাকলে কৃষি ফলন থেকে শুরু করে এলাকাবাসির জীবন-জীবিকা বিপন্ন হতে পারে। তিনি এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করেন।

হাফছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান চাইথোয়াই চৌধুরী জানান, বালু উত্তোলন ও খালের পাড় কেটে বিক্রির বিষয়গুলো বিভিন্ন মাধ্যমে তিনি শুনেছেন।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পার্বত্য চট্রগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক ফেরদাউস আনোয়ার জানান, গুইমারায় অবৈধ বালু উত্তোলন ও খালের পাড় কেটে বিক্রির বিষয়টি তারা অবগত হয়েছেন। লোকবলের সংকটের কারণে খাগড়াছড়িতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যক্রম জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। তবে গুইমারায় বালু উত্তোলনের বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তর বিধিসম্মতভাবে দেখবেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার তুষার আহমেদ জানান, বালু উত্তোলন ও খালের পাড় কেটে বিক্রির বিষয়ে দ্রুততম সময়ে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন,২০১০এর ১৫। (১)এই আইনের ধারা ৪ এ বলা হয়েছে ,অনুমতি ব্যতিরেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করিলে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ব্যক্তিবর্গ (এক্সিকিউটিভ বডি) বা তাহাদের সহায়তাকারি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ অনূর্ধ্ব ২(দুই) বৎসর কারাদন্ড বা সর্বনিম্ন ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা হইতে ১০ (দশ) লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দন্ডে দণ্ডিত হইবেন।

-সিভয়েস/এসসি

প্রদীপ চৌধুরী

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়