Cvoice24.com

সিভাসু’র সাফল্য 
দেশীয় চ্যাপা শুটকীর মান ও স্বাদের জন্য অনুজীবসমূহ সনাক্ত 

প্রকাশিত: ১১:২১, ১৪ জানুয়ারি ২০২০
দেশীয় চ্যাপা শুটকীর মান ও স্বাদের জন্য অনুজীবসমূহ সনাক্ত 

দেশীয় পুঁটি মাছের প্রক্রিয়াজাতকৃত চ্যাপা শুটকী এর বিশেষায়িত স্বাদ ও সুগন্ধের জন্যে খুবই জনপ্রিয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে এই শুটকী বানানোর প্রচলন থাকলেও মূলত ময়মনসিংহ, জামালপুর ও নরসিংদীর উৎপাদিত চ্যাপা শুটকীর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। প্রতি বছর দেশে এ শুটকী ব্যাপকভাবে বাজারজাত করা হয় এবং এক্ষেত্রে প্রচুর পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম ভেটেরিনরি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় এর একদল গবেষক দেশীয় চ্যাপা শুটকী বা সিদল শুটকী নিয়ে অত্যাধুনিক ডিএনএ প্রযুক্তি এর গবেষণায় সাফল্য লাভ করেছেন।

দীর্ঘ এক বছর গবেষণার সিভাসু এর প্যাথলজি ও প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এম এ এম জুনায়েদ ছিদ্দিকী এবং ফিশিং ও পোষ্ট-হারভেষ্ট টেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাহসিন সুলতানা এর নেতৃত্বে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মাছ এবং শুটকীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর সিভাসু এর গবেষণাগারে এই নমুনাসমূহের রাসায়নিক পরীক্ষা ও ডিএনএ সিকোয়েন্স সম্পন্ন করা হয়। 

প্রচলিত পদ্ধতিতে পুঁটি মাছের (পুন্টিয়াস প্রজাতি) এর বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাতকরণের পর ভূগহ্বরে মাটির পাত্রে প্রায় ৪-৫ মাস দীর্ঘ গাঁজন পদ্ধতির মাধ্যমে এই বিশেষায়িত চ্যাপা শুটকী প্রস্তুত করা হয়। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যাক্টেরিয়া ও অন্যান্য অনুজীবসমূহ গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দীর্ঘ গবেষণার পরে সিভাসু এর গবেষক দল এই ব্যাক্টেরিয়াসমূহ প্রকৃতি ও পরিমান এবং অঞ্চলভেদে স্বাদের তারতম্যের জন্যে তাদের ভূমিকা উদঘাটনের সফলতা লাভ করেছেন। 

এই গবেষণার উল্লেখযোগ্য দিক হলো অত্যাধুনিক এনজিএস সিকোয়েন্সিং প্রযুক্তির সমন্বয়ে বায়োইনফরমেটিক্স বা জৈব তথ্যবিজ্ঞান এর মাধ্যমে ল্যাবরেটরীতে কোনরুপ কালচার ছাড়াই সংশ্লিষ্ট ব্যাক্টেরিয়া সনাক্তকরণ। সিভাসুতে অবস্থিত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটার সার্ভারে এ সংক্রান্ত ডাটা এনালাইসিস করা হয়েছে এবং বাংলাদেশে এ ধরনের গবেষণা সক্ষমতা অত্যন্ত আশাব্যাঞ্জক।

গবেষণা সহকারী সিভাসুর এম এস এ শিক্ষার্থী মাহফুজুল আলম মিঠু জানান, চ্যাপা শুটকী প্রোটিন, স্থিতিশীল লিপিড ও খনিজ-লবণ এর একটি সমৃদ্ধ উৎস এবং এটি সুষম এ্যামাইনো এসিড বহন করে যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং নানাবিধ রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। এর পাাশাপাশি অন্যান্য বিষয় নিয়ে আরো গবেষণার সুযোগ রয়েছে। 

তিনি আরো জানান, চ্যাপা শুটকী উৎপাদনকারী হতে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে এর পুষ্টিমান ধীরে ধীরে কমে যায়। সাধারণত এটি নির্ভর করে এর সংরক্ষণকালের উপর। এছাড়াও পণ্যে গুণগতমান এর কাঁচামাল ও উৎপাদন প্রক্রিয়ার উপর বহুলাংশে নির্ভর করে। আমাদের দেশে কালের পরিক্রমায় চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে এ পণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণ পদ্ধতির উন্নয়ন ঘটেনি।

ফিশিং ও পোষ্ট-হারভেষ্ট টেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাহসিন সুলতানা জানান, সকল শুটকীর নমুনা থেকে বিভিন্ন ব্যাক্টেরিয়া ও অনুজীব সমূহের ডিএনএ তথা জীন এর অনুসন্ধান করেন এবং অত্যাধুনিক জীন গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহার করে দেখতে পেয়েছেন এক অনন্য সাফল্য। তারা অনুজীবসমূহের প্রকৃতি ও প্রাচুর্য এর তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তুলনা করেন বিভিন্ন জেলা থেকে সংগৃহীত নমুনাসমূহের মাঝে। লক্ষ্য করা গেছে যে তথাকথিত পন্থায় প্রস্তুতকৃত শুটকীসমূহের মাঝে পাওয়া গেছে ক্ষতিকর অণুজীব যা মানব দেহের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরুপ হতে পারে। কিন্তু গবেষণাগারে নিরাপদ পরিবেশে প্রস্তুতকৃত শুটকীতে মিলেছে উপকারী ব্যাক্টেরিয়া তথা অনুজীব যা মানবদেহের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। 

প্যাথলজি ও প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড.এ এম এ এম জুনায়েদ ছিদ্দিকী জানান, নানা সংস্কৃতির বিলাসী খাদ্যের জনপ্রিয়তায় বাঙ্গালীর নিজস্ব খাদ্য-বৈচিত্র্য যখন হারিয়ে যেতে বসেছে তখনও চ্যাপা শুটকী আমাদের একান্ত নিজস্ব, আদি উৎপাদনকারীরা এর মান নিয়ন্ত্রণে সচেতন নয় ফলে এখনও তারা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এসব মৎস্য পণ্য উৎপাদন করে থাকে। এছাড়াও এ মৎস্য পণ্য উৎপাদনের বিভিন্ন ধাপের সাথে জড়িত অধিকাংশ মানুষই অক্ষর-জ্ঞানহীন ফলে মান নিয়ন্ত্রণ করে পণ্য উৎপাদনের গুরুত্বের বিষয়টিতে তারা এখনও সচেতন হয়ে উঠতে পারেনি। বহুমাত্রিক গবেষণা, পণ্যের গুণগত মান উন্নয়নের জন্য টেকসই ও প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও উন্নয়ন, সম্প্রসারণ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমাদের দেশের এসব ঐতিহ্যবাহী মৎস্য-পণ্যকে আরও উন্নত করে তোলা সম্ভব।

সিভাসু এর মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. নুরুল আবছার খান জানান, সনাতন পদ্ধতিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এর কাঁচামাল পুঁটি শুটকী ও চ্যাপা শুটকী তৈরি, পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত থাকা বেশির ভাগই নিরক্ষর হওয়ায় মৎস্য পণ্য উৎপাদন ও সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত বৈজ্ঞানিক জ্ঞান থাকে না। ফলে পণ্যের মান অত্যন্ত নিম্নমানের হয়। এই উন্নত পদ্ধতি অবলম্বন করলে অদূর ভবিষ্যতে চ্যাপা শুটকী রপ্তানি যোগ্য পণ্যে পরিণত হতে পারে যা আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন, ফিশিং ও পোষ্ট-হারভেষ্ট টেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান জনাব মো. ফয়সাল। 

-সিভয়েস/এমএম

মিনহাজুল ইসলাম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়