Cvoice24.com


আলোহীন চোখে ফয়সালের চবি জয়ের গল্প

প্রকাশিত: ০৪:৪৪, ৩ জানুয়ারি ২০২০
আলোহীন চোখে ফয়সালের চবি জয়ের গল্প

ছবি : সিভয়েস

দুই চোখে আলো নেই। নিভে গেছে ৯ বছর আগেই। ফয়সালের জীবনের গল্পটা অন্যদের থেকে আলাদা। ২০১১ সালে ফটিকছড়ি উপজেলার জাফতনগর লতিফ রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায়। স্কুল ছুটির পর বন্ধুদের সাথে মাঠে ক্রিকেট খেলছিলেন। হঠাৎ প্রতিপক্ষ দলের ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে বল আঘাত আনে আরাফাতুল ইসলাম ফয়সালের চোখে। সে আঘাত ফয়সলের ধীরে ধীরে নিভে যায় সুন্দর এ পৃথিবী দেখার ক্ষমতা। একটি সময় এক চোখে দেখতে পারলেও অবশেষে সেটিও নষ্ট হয়ে যায়। তার এক চোখে আঘাতে রেটিনার সমস্যার কারণে আরেক চোখে আক্রান্ত।

পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত নিজে লিখেই পরীক্ষা দিতে পেরেছিলো ফয়সাল। কিন্তু চোখে আঘাতের তারপর থেকে চোখের সামনে সবকিছু ধূসর হতে থাকে। অদম্য ইচ্ছাশক্তি দমিয়ে রাখতে পারেনি তার প্রখর প্রতিভাকে। দৃষ্টিহীন অবস্থায় পড়ালেখা করে ভর্তি হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি ২০১৯-২০২০ সেশনে চান্স পেয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগে। সম্প্রতি গত ৩১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায়ের কোটার রেজাল্ট দিয়েছেন।

ফটিকছড়ি উপজেলার জাফতনগর ইউনিয়েনের ফতেপুর তেলপারই গ্রামের নজরুল ইসলামের ও পারভিন আক্তার দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে আরফাতুল ইসলাম ফয়সাল। আরো দুই সন্তান রয়েছে তারা হলেন, আরিফুল ইসলাম নোমান হাজেরাতু বিশ্ববিদ্যালয়ে কলেজ এইচএসসি ও আশরাফুল ইসলাম রায়হান নগরীর জামেয়ী মাদরাসার শিক্ষার্থী।

চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ বিভিন্ন চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও চোখ ভালো হয়নি। সর্বশেষ চেন্নাই শংকর নেত্রনালয় আই হসপিটালে ২বার আপরারেশন হয়েছে। তাতেও চোখের আলো আসেনি। কিন্তু একটুও মনোবল হারাননি। এই অবস্থায় তাকে ভর্তি করা হয় । চট্টগ্রাম দৃষ্টি প্রতিবন্ধী স্কুলে। কৃতিত্বের সঙ্গে অষ্টম শ্রেণি পাশ করার পর তাকে ভর্তি করা হয় নগরীর রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে।

২০১৭ সালে এসএসসি পাশ করার পর ভর্তি হয়। তখন শ্রুতি লেখক হিসেবে ছিলেন হামজারবাগ রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী। এসএসসি জিপিএ-৪.৪৫। এবার ভর্তি হলেন যেখান থেকে আরফাত ২০১৯ সালে হাজেরা তাজু বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে থেকে এইচ এসসিতে মানবিক বিভাগ থেকে ৩.৬৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।  

পিতার ভাষ্যমতে, ২০১১ সালে ফটিকছড়ি উপজেলার জাফতনগর লতিফ রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ে মাত্র ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছেন আরাফাতুল ইসলাম ফয়সাল। স্কুল ছুটির পর বন্ধুদের সাথে মাঠে ক্রিকেট খেলছিলেন। হঠাৎ প্রতিপক্ষ দলের ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে বল চোখে আঘাত হানে তার। একটি সময় এক চোখে দেখতে পারলেও অবশেষে সেটিও নষ্ট হয়ে যায়।

পিতা নজরুল ইসলাম বলেন, ছেলের পড়ালেখার প্রতি যে অধম্য প্রচেষ্টা, আগ্রহ তা দেখে তাকে কোনভাবে পড়ালেখা থেকে দূরে রাখিনি । আনন্দে মনটা ভরে যাচ্ছে সে চট্টগ্রাম ‍বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে। ছেলের জন্য গ্রাম ছেড়ে চট্টগ্রাম শহরে স্বপরিবার চলে আসি ২০১৭ সালের দিকে। আজকে আজকে আমার ছেলের জন্য আসাটা সাফল্য পেয়েছি।

আরফাতুল ইসলাম ফয়সাল বলেন, ‘আমি বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করলেও আমার পরে যে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছি। এতটুকু আসা আসতে অনেক পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। পরিবার,শিক্ষক ও বন্ধুদের সাপোর্টের কারণে আজ এতোদূর আসা সম্ভব হয়েছে। আমি ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সমাজের জন্য কাজ করতে চাই। অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে পিএইচডি করতে চাই। লেখাপড়া শেষ করে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ভালো শিক্ষক হতে চান। মাত্র ৭ মাস আগে ভারতে গিয়ে জানতে পারি, আমার চোখের সমস্যাটাটি আর ভাল হবেনা। প্রকৃতি গত ভাবে ভাল হলে ভাল হবে। প্রথম ভার সফলভাবে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে সফল ভাবে অস্ত্রোপচার করে চোখের অবস্থা দ্রুত খারাপের দিকে চলে যায়।

পড়ালেখা নয়, চট্টগ্রাম ডিজঅ্যাবিলিটিস ক্লাবের তথ্য ও প্রযুক্তি বিষক সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তার স্বপ্নের সফল্যতার সাথে অনার্স ও মাস্টার্স করে পিএইচডি করা। পড়ালেখার সাথে সাথে দাবা, ক্রিকেট ও ডিবেটের সাথেও জড়িত ছিলেন স্কুল ও কলেজ জীবনে। তিনি একমাত্র ডিবেটোর ছিলেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী।

-সিভয়েস/এসসি

মিনহাজুল ইসলাম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়