Cvoice24.com


কুয়াইশ-অক্সিজেন সড়ক নিয়ে ওয়াসা-সিডিএ'র মাতামাতি !

প্রকাশিত: ০৭:৫১, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯
কুয়াইশ-অক্সিজেন সড়ক নিয়ে ওয়াসা-সিডিএ'র মাতামাতি !

ছবি : সিভয়েস

এক দিকে সংস্কার অপর দিকে ভাঙন এভাবেই চলছে নগরীর সড়ক উন্নয়ন কাজ। ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কুয়াইশ-অক্সিজেন আউটার সংযোগ সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সংস্কারের অভাবে। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি ভরে গেছে খানাখন্দকে। নিত্য দুর্ঘটনার ফাঁদে পরিণত হয়েছে সড়কটি।  সড়কের এই বেহাল দশার জন্য সিডিএ’কে দায়ী করছেন ওয়াসা এবং স্থানীয়রা।

কুয়াইশ-অক্সিজেন আউটার সংযোগ সড়কটি চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ আবাসিক এলাকা “অনন্যা আবাসিক” এর যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম। ৫ কি. মি. এই সড়কে ওয়াসার কাজ শেষে গত বছরের ৩ এপ্রিলে ৭ কোটি ৮৯ লক্ষ ১২ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণসহ সিডিএ’কে বুঝিয়ে দেয় ওয়াসা। কিন্তু দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও সিডিএ সড়কটি সংস্কার করছে না। ফলে সড়কটি দিন দিন বেহাল থেকে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। এমনকি সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হলেও নিরুপায় হয়ে স্থানীয়দের এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। কিন্তু এতে প্রায় সময় ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। তারপরও সিডিএ’র ঘুম ভাঙছে না।

সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নগরীর অক্সিজেন থেকে কুয়াইশ আউটার সংযোগ সড়কটির ডান এবং বাম পাশে নেই কোন কার্পেটিং। সড়কের অধিকাংশই ভাঙাচুরা আর খানাখন্দকে ভরা। সিএনজি অটোরিকশা, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস গর্তে আটকে যাচ্ছে। এমনকি লোকজনের পায়ে হেঁটে চলাচল করতে কষ্ট হচ্ছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেড় বছর আগে ওয়াসা পাইপ লাইনের কাজ করতে গিয়ে রাস্তাটি খোঁড়াখুঁড়ি করে। এতে অনেক বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। ওয়াসার কাজ শেষে ক্ষতিপূরণের টাকাসহ সড়কটির সংস্কার করার জন্য দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয় সিডিএ’কে। কিন্তু বছর পেরিয়ে গেলেও সড়ক সংস্কারে হাত দেয়নি সিডিএ। যার কারণে এলাকাবাসীকে চরম দুর্ভোগ আর ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

চৌধুরী পাড়ার বাসিন্দা আমজাদ আহমেদ এ বিষয়ে সিভয়েসকে বলেন, “মানুষ কষ্ট করে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এ রাস্তায় চলাচল করছে। ওয়াসা খোঁড়াখুঁড়ি করে আর অমরা শিকার হই ভোগান্তির। কপালে ভাঙ্গা রোড আছে সিডিএ বা ওয়াসা কে কি দোষ দিবো। ওয়াসার কাজ শুরু করার পর থেকেই এ এলাকার যাত্রীরা কষ্ট পাচ্ছেন। এক বছর হলেও রাস্তাটা মেরামত হচ্ছে না। রাস্তার সুফল এলাকাবাসী ভোগ করতে পারছে না। মনে তো হয় না এই রাস্তার কাজ আগামী কয়েক বছরেও হবে।”

ঐ সংযোগ সড়কটিতে রয়েছে স্কুল-কলেজসহ অনেক প্রতিষ্ঠান। ছাত্র-ছাত্রী ও চাকরিজীবিদের প্রত্যহ এই সড়কটি অনিচ্ছা স্বত্তেও ঝুকি নিয়ে ব্যবহার করতে হচ্ছে। এমনকি স্কুলগামী কোমলমতি শিশুদেরও পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে।

লিটল এনজেল স্কুলের ৩য় শ্রেণীর ছাত্রী মিথিলা মা ক্ষোভ নিয়ে বলেন, ‘আমরা কোন দেশে বসবাস করছি তা নিয়ে মাঝে মাঝে সন্দেহ হয়। প্রত্যেকদিন আমাদের দেড় থেকে দুই ঘন্টা সময় হাতে রেখে বাসা থেকে বের হতে হয়, অজোপাড়া গ্রামেও তো এত বাজে রাস্তা আছে বলে আমার মনে হয় না। বাচ্চারা প্রতি নিয়ত কষ্ট পাচ্ছে। এক মাস আগে আমি আর আমার মেয়ে এই সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় রিক্সা উল্টে পড়ে গিয়েছি। শুনেছি ওয়াসা কাজ শেষ করেছে আজ থেকে দেড় বছর হয়েছে। কিন্তু এখনও সড়কটা বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। আরও কতদিন এ দুর্ভোগ পোহাতে হবে কে জানে। রাস্তা তো আর ঠিক হবে বলে মনে হচ্ছে না, তাই এখন চিন্তা করছি এখান থেকে বাসা পরিবর্তন করে ফেলব।’

সিএনজি চালক মিজান হাওলাদার বলেন, শুধু বর্ষা নয় শুষ্ক মৌসুমেও বন্দর নগরী চট্টগ্রামের বেশির ভাগ প্রধান সড়কের বেহাল দশা থাকে। ভাঙ্গা চোরা সড়ক ও খানাখন্দের কারণে আমাদের রাস্তায় গাড়ী চালাতে খুবই কষ্ট হয়। গাড়ী তো কয়েকদিন পর পরই নষ্ট হয়। এছাড়া সাধারণ যাত্রীদের তো প্রতিনিয়ত পড়তে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে। মোট কথা এই রোড়ের গাড়ী চালকদেরও ভোগান্তির শেষ নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার চিফ ইঞ্জিনিয়ার মাকসুদ আলম সিভয়েসকে বলেন, ‘গত বছরের ফেব্রুয়ারীতে আমরা এ সড়কের কাজ শুরু করি, কাজ শুরুর পূর্বে সিডিএর কাছ থেকে ওয়াসা আনুমানিক ৮ কোটি টাকা দিয়ে কাজ করার অনুমতি নেয়। ৫ কি. মি. এই সড়কে আমাদের কাজ শেষ হয়ে গেলে গত বছরের ৩ এপ্রিলে আমরা ৭ কোটি ৮৯ লক্ষ ১২ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণসহ সিডিএ’কে বুঝিয়ে দেয়েছি।’

তিনি আরো বলেন, ঠিক মতো কাজ করলে সর্বোচ্চ দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে কুয়াইশ-অক্সিজেন আউটার সংযোগ সড়কটি জনসাধারণের চলাচলের জন্যে স্বাভাবিক করা সম্ভব। প্রায় দেড় বছর হয়ে গেলেও কেনো এই সড়কটি সিডিএ’র পক্ষে সংস্কার করা সম্ভক হয়নি তা আমার বোধগাম্য নয়। সাধারণ জনগণ তো প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে তেমন অবগত না, তারা আমাদেরই দোষারপ করছে।

এ বিষয়ে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সদস্য ও সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের চেয়ারম্যান নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী আলী আশরাফ বলেন, এই  ধরণের অনিয়ম তো নতুন কিছু নয়। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ যদি ঠিকভাবে তাদের কাজ করতো তাহলে চট্টগ্রাম একটি আইডিয়াল সিটিতে রুপান্তরিত হতো। প্রশাসনের তদারকির অভাবেই এই বেহাল দশা। জনগণের জন্য চউক নাকি চউক এর জন্যে জনগণ তা বোঝা দায় হয়ে পড়েছে।

বিষয়টির সত্যতা জানতে চেয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ জসীম উদ্দীন চৌধুরীর সাথে বেশ কয়েকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে তাকে আর পাওয়া যায়নি।

-সিভয়েস/এসসি

জোবায়েদ ইবনে শাহাদত

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়