Cvoice24.com


খাগড়াছড়িতে ব্যাঙের ছাতার মত ইটভাটা,ধ্বংস হচ্ছে বনাঞ্চল,কাটা হচ্ছে পাহাড়

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯
খাগড়াছড়িতে ব্যাঙের ছাতার মত ইটভাটা,ধ্বংস হচ্ছে বনাঞ্চল,কাটা হচ্ছে পাহাড়

ছবি : সিভয়েস

খাগড়াছড়িতে ঠিক কতটি ইটভাটা আছে, কোন উপজেলায় কয়টি এবং এরমধ্যে কতটি বৈধ-অবৈধ; তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান দিতে পারে না জেলা প্রশাসন। তবে লাইসেন্স পাবার এবং নবায়নের আবেদনের রেজিস্ট্রার থেকে যে তথ্য মেলে তা বাস্তবের সাথে আকাশ-পাতাল তফাৎ।

চোখের সীমানায় পড়ে এমন ৩০টি অবৈধ ইটভাটায় এখন চলছে সমানে কাঠ পোড়ানো আর পাহাড় কাটার মহোৎসব। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন এবং ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘন করে ভাটাগুলোতে চলছে উৎপাদন কার্যক্রম।

কৃষিজমি, পাহাড়-টিলার মাটি কেটে ও অশ্রেণিভুক্ত বনাঞ্চলের কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু বেধড়ক পরিবেশ-প্রকৃতি ধ্বংসের এই বেআইনী কর্মকাণ্ডে এখন পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

খাগড়াছড়ির ৯ উপজেলায় চলতি ইট তৈরির মৌসুমে ৩০টিরও বেশি ইট ভাটায় উৎপাদন শুরু করেছে। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন অনুসারে ভাটা স্থাপনে স্থানীয় জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে লাইসেন্স সংগ্রহের নিয়ম থাকলেও আইনে উল্লেখিত শর্ত পূরণ না হওয়ায় বিগত ৩-৪ বছর ধরে নতুন কোনো লাইসেন্স প্রদান কিংবা নবায়ন দিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন। তবুও থেমে নেই অবৈধ ভাটাগুলোর তৎপরতা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সরকারি দল ও বিএনপি’র প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে অবৈধ ইটভাটাগুলোতে আশপাশ থেকে পাহাড় কেটে মাটি মজুতের পাশাপাশি বিভিন্ন পাহাড়ি গ্রাম ও সরকারি অশ্রেণিভুক্ত বনাঞ্চলের গাছ নির্বিচারে পোড়াচ্ছে।

তরুণ পরিবেশকর্মী বিপ্লব সরকার জয় অভিযোগ করেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে খাগড়াছড়িতে পাহাড় ধ্বসে জীবন ও সম্পদহানির ঝুঁকি বাড়ছে। সরকারি খাস বনের প্রাকৃতিক গাছ-গাছালি নির্বিচারে ইঁভাটায় পোড়ানোর ফলে পাহাড় ন্যাড়া হয়ে যাচ্ছে। তারপরও পাহাড় কাটা চলছে সমানতালে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন ফলজ বাগানের আশপাশে ইটভাটা গড়ে উঠার কারণে বাগান নষ্ট হচ্ছে। গাছে ভালো মুকুল আসলেও ফলন ভালো হয় না। এছাড়াও উপরিভাগ খনন করে ভাটাগুলোতে মাটি নিয়ে যাওয়ায় উর্বরতা হারাচ্ছে কৃষি জমি। এতে করে প্রতিবছর ফসল উৎপাদন কমছে বলে মত কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের।

খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলন-এর সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আবু দাউদ মনে করেন, পার্বত্য এলাকার উন্নয়নের জন্য ইটভাটার প্রয়োজন আছে। তবে তিন পার্বত্য জেলার ভৌগলিক বাস্তবতায় যথাযথ আইন মেনে ইটভাটা স্থাপন অসম্ভব। আর যদি সেটি সম্ভব না হয় তাহলে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে পার্বত্যাঞ্চলের জন্য এ সংক্রান্ত আইন শিথিল করার প্রশ্ন উঠতে পারে।

তবে এই সংগঠনের দুই নেতা পার্বত্য এলাকার ইটভাটাগুলোতে কাঠ ও পাহাড়কাটা মাটির অবাধ ব্যবহার বন্ধসহ ইটের আকার-মান-গুণ এবং মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর নজরদারি দাবি করেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)-এর চট্টগ্রাম প্রতিনিধি মো. হাসান জানান, তিন পার্বত্য এলাকায় ইটভাটা স্থাপন, পাহাড়কাটা, বন উৎাড়সহ পরিবেশ-প্রকৃতি সুরক্ষায় উচ্চ আদালতের একটি নির্দেশনা রয়েছে। এটির যদি ব্যত্যয় ঘটে তাহলে মানুষের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। বর্তমান পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখে তিনি বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানাবেন বলে নিশ্চিত করেন।

এ বিষয়ে বেশ কয়েকজন ইটভাটা মালিককে মোবাইলে কল দেয়া হলেও তাঁরা ফোন ধরেননি।   

খাগড়াছড়ির বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (উপ-বন সংরক্ষক) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, স্থাপিত ইটভাটা গুলোতে জ্বলানি কাঠ পোড়ানোর অভিযোগ পেলে বনসংরক্ষণ আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে প্রশাসনের সহযোগীতায় মোবাইল র্কোট পরিচালনা করা হবে।   

এ বিষয়ে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, কীভাবে ইটভাটা পরিচালিত হয় সেটির একটি আইনী গাইডলাইন আছে। এর ব্যত্যয় প্রমাণিত হলে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া প্রশাসনের রুটিন ওয়ার্ক।

-সিভয়েস/এসসি

প্রদীপ চৌধুরী :

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়