Cvoice24.com

কর্মদক্ষ তরুণরাই দেশকে বদলাবে: ইরফানুল আলম

প্রকাশিত: ১০:২৬, ১ মে ২০১৮
কর্মদক্ষ তরুণরাই দেশকে বদলাবে: ইরফানুল আলম

একটি ভবন নির্মাণ করতে লাগে প্রায় ২৬০ ধরনের উপকরণ । সবগুলোর সুন্দর সম্মিলনে তৈরি হয় একটি সুন্দর বাসভবন। বাসভবনের উপকরণ মেটাতে কাজ করে প্রায় দুই শতাধিক কোম্পানি। তাদের পেছনে কাজ করে আরো বিশাল অংকের মানুষ। বিশাল অংকের এতোসব মানুষের কর্মযজ্ঞে তিলে তিলে গড়ে উঠেছে আজকের আবাসন খাত। জনসংখ্যা ও জীবনযাত্রার মান উর্ধ্বমুখীতার কারণে আবাসন খাতের সম্ভাবনা সময়ের সাথে আরো প্রসারিত হচ্ছে। যা কখনো ফুরিয়ে যাবার নয়। এমনটায় দাবি সংশ্লিষ্টদের। তবে আবাসন খাতে সাফল্য পেতে সৃজনশীল ও উদ্যমী হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। ফলে এখানে তরুণদের কাজ করার বিশাল সুযোগ রয়েছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা হ্রাস, ব্যবহৃত উপকরণের দাম নিয়ন্ত্রণ এবং সরকারের সঠিক সহযোগিতা পেলে আবাসন খাত মধ্যবিত্ত বান্ধব হবে। যা ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত আবাসন সংকটে পরিকল্পিত আগাম প্রস্তুতিতে পরিণত হবে।

নগরীতে আবাসন খাতের সম্ভাবনা, প্রতিকূলতা, বর্তমান অবস্থা ও তরুণ উদ্যোক্তারা কিভাবে এগিয়ে আসতে পারে-এসকল বিষয় নিয়ে কথা হয় তরুণ উদ্যোক্তা পার্ল হোম লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ ইরফানুল আলমের সাথে। কথা ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে বিদেশে পাড়ি জমানোর। কিন্তু দেশকে ভালোবেসে,দেশের মানুষের স্বার্থে সবার সাথে কিছু করার মানস থেকে বিদেশ যাওয়ার টাকা দিয়ে শুরু করেছিলেন আবাসন খাতের ব্যবসা। স্রোতের বিপরীতে ব্যবসা করেছিলেন ঠিকই। কিন্তু তিনবছরের মাথায় এসে নিজকে সফল এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে আবিষ্কার করতে পেরেছেন। সফল এই মানুষটির সাথে কথা বলেছেন সিভয়েসের বিশেষ প্রতিনিধি ওয়াসিম আহমেদ। 
কথোপকথনের অংশটুকু পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:

সিভয়েস : কেমন আছেন? 

ইরফানুল আলম:  আলহামদুলিল্লাহ ভালো। সবাইকে নিয়ে ভালো আছি। আমার ভালো থাকার সাথে অনেকের ভালো থাকা নির্ভর করে। তাদের ভালো রাখতেই আমি ভালো থাকি।

সিভয়েস: আপনি তো খারাপ সময়ে আবাসন খাতে ব্যবসা শুরু করেছিলেন, তাও আবার খুব তরুণ বয়সে। নগরীতে এই খাতের বর্তমান অবস্থা কেমন বোধ করছেন ?

ইরফানুল আলম: দেখুন, আবাসন খাতের সম্ভাবনা ফুরানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। এক সময় দু’তলা ভবন যথেষ্ট ছিলো। আর এখন সেটা ভেঙ্গে করা হচ্ছে নয়-দশ তলা। আরো দশ বছর সেখানে বিশ তলা ভবনের চাহিদা তৈরি হবে। সুতারাং আবাসন খাত একটি আজীবন চলমান ব্যবসা খাতের নাম।

আর নগরীর কথা বলতে গেলে, বর্তমান শহরে সত্তর লক্ষ মানুষ বসবাস করে। আর আমরা শহর বলতে বুঝি সিটি গেইটের পর থেকে কর্ণফুলীর এপার পর্যন্ত। আগামী দশ বছরে বসবাসরত মানুষের সংখ্যা আরো দ্বিগুণ হবে। ফলে শহরের সীমানা কর্ণফুলী নদী ছাড়িয়ে যাবে। অর্থাৎ আবাসন খাতের সম্ভাবনা কমার কোনো সুযোগ নেই।

সিভয়েস: ক্রমবর্ধমান ফ্ল্যাটের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে কি কি কারন কাজ করছে? আর এভাবে চলতে থাকলে আবাসন তো একটি নির্দিষ্ট শ্রেণি ভিত্তিক খাতে রূপ নেবে। সেক্ষেত্রে আবাসন খাত কতটুকু বৃহৎ জনগোষ্ঠির কল্যাণে আসতে পারবে?

ইরফানুল আলম: উৎপাদন খরচ বাড়লে ফ্ল্যাটের দামও বাড়বে । সেটা স্বাভাাবিক একটি বিষয়। গত দু’বছরে যে হারে লোহা এবং সিমেন্টের দাম বেড়েছে তা অকল্পনীয় ছিলো। এছাড়াও ভূমির দামের চরম উর্ধ্বমুখীতা তো রয়েছেই। এক্ষেত্রে সরকারের অনেক খাস জমি পড়ে আছে। সেগুলো রিহ্যাবের সদস্য দেখে বরাদ্দ দিলে ফ্ল্যাটের দাম সম্পূর্ণরূপে মধ্যবিত্তের নাগালে চলে আসবে। আর এটি ছাড়া উপায় নেই। কেননা একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠিকে বাইরে রেখে কখনো আবাসন সংকট নিরসন করা যাবে না। এখন তো অনেক ব্যাংক দীর্ঘমেয়াদি হোম লোন দিচ্ছে। ফলে একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠি স্মার্ট আবাসনের আওতায় আসবে।এছাড়াও আবাসন খাতে বিভিন্ন ধরনের আমলাতান্ত্রিক কাজ রয়েছে। সেগুলোতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস দেয়া উচিত।

আবাসন খাত একটি বিশাল কর্মচক্র তৈরি করে। ফলে সরকার যদি এখাতে সঠিকভাবে মনোনিবেশ করে, তাহলে প্রথমত বেকার সমস্যা দূর হবে। দ্বিতীয়ত সরকার বিশাল অংকের রাজস্ব পাবে।

সিভয়েস: আবাসন খাতে তরুণ উদ্যোক্তার কিভাবে এগিয়ে আসতে পারে? 

ইরফানুল আলম: আমাদের মধ্যে একটি ধারণা রয়েছে, আবাসন খাতে ব্যবসা করতে প্রচুর টাকার প্রয়োজন। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। এ খাতটি পুরোপুরি একটি ম্যানেজিং সিস্টেম। একটি বাড়ি করতে ২৬০ ধরনের উপকরণ লাগে। সেখানে অনেকগুলো খাত রয়েছ যে খাতে কোনো ধরনের পুঁজি লাগে না। পুঁজি শুধু ইচ্ছাশক্তি ও কর্মদক্ষতা। আর কর্মদক্ষ উদ্যমী তরুণরাই দেশকে বদলাবে। তারা এখানে অ্যাপ্লিয়েন্ট মার্কেটিং  করে অনেক ভালো টাকা আয় করতে পারবে।

এছাড়াও রয়েছে অনেকগুলো ছোট ছোট কাজ। যেগুলো তরুণরা খুব সুন্দরভাবে করতে পারে। বর্তমানে তরুণরা দূরদর্শী চিন্তার হয়। তাদের মধ্যে সৃজনশীলতা রয়েছে। দূরদর্শী চিন্তা ও সৃজনশীল মন থাকলেই তরুণরা এই পেশায় সফল হতে পারবে।

সিভয়েস: আপনি একজন সফল তরুন ব্যবসায়ী। দেশের তরুণদের জন্য আপনার পরামর্শ কি থাকবে ?

ইরফানুল আলম: আমি নিজের কথাই বলি, ২০১৪ সালে আমি যখন পড়াশোনা শেষ করি। তখন আমার বিদেশে যাওয়ার কথা ছিলো। যদি আমি বিদেশ যেতাম তাহলে হয়তো কারো তৈরি করা কোনো কর্মক্ষেত্রে কাজ করতাম। আমার দ্বারা অন্যকোনো কর্মসংস্থান তৈরি হত না। 

কিন্তু আমি বিদেশে যাওয়ার টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করি। বর্তমানে আমি একটি কর্মক্ষেত্র তৈরি করেছি। যেখানে অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তাদের কাছে আমার পরামর্শ নিজেদের দক্ষ করে তুলতে হবে। কোনো ধরনের অজুহাত দেয়া যাবেনা। পুঁজি না থাকলে ব্রোকারি করুন। তারপর পুঁজি তৈরি করে ব্যবসা করুন। ব্রোকারি সারা বিশ্বে স্বীকৃত একটি স্মার্ট পেশার নাম ।  

সিভয়েস: দেশ ও সমাজের জন্য কিছু করার ইচ্ছা রয়েছে আপনার?

ইরফানুল আলম: আমার কাছে দেশপ্রেম হলো নিজের অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালন করা। তবে দেশের সমাজনীতি বলেন ,অর্থনীতি বলেন, সবধরনের নীতি নিয়ন্ত্রণ করে রাজনীতি। নিজেকে এখন প্রতিষ্ঠিত ভাবছি। দেশ ও সমাজকে সামগ্রিক কিছু দিতে রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

সিভয়েস: আপনার স্বপ্ন সফল হোক। ধন্যবাদ সময় দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য।

ইরফানুল আলম: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। সিভয়েসের সকল পাঠকের প্রতি রইল শুভেচ্ছা ।    
 
সিভয়েস/এইচআর/এমইউ
 

105

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়