ব্যাচেলরদের জীবনের এক গল্প

প্রকাশিত: ০৯:২২, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯
ব্যাচেলরদের জীবনের এক গল্প

ছবি : প্রতীকি

নগরীতে ব্যাচেলরদের বাড়ি ভাড়া পেতে আগেও ভোগান্তি ছিল। তবে সাম্প্রতিক নানান পরিস্থিতি বিষয়টিকে আরো জটিল করে তুলেছে। পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন অনেক ব্যাচেলর। যাদের একটি বড় অংশ শিক্ষার্থী। চাকরিজীবীদের মধ্যেও এর সংখ্যা কম নয়। অনেকে আছেন পড়াশোনা করছেন নগরীর কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কেউ আবার লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে অপেক্ষায় আছেন চাকরির আশায়। আবার অনেকে বিবাহিত, কিন্তু স্ত্রী থাকেন গ্রামের বাড়িতে এমন ব্যক্তির বাসাভাড়া পেতে পেরেশান হতে হচ্ছে।

নগরীর ব্যাচেলররা অনেক খোঁজাখুঁজির পরে মেস পেলে সেগুলোর অধিকাংশই বসবাসের অযোগ্য। মালিকরা ভালো বাড়িগুলো ব্যাচেলরদের ভাড়া দিতে চান না। আবার যে গুলো পাওয়া যায় তাও ছাড়পোকায় ভরা আলো-বাতাসহীন জরাজীর্ণ ঘর। পরিবার নিয়ে কেউ ওসব বাসায় উঠতে চান না বলেই, সেগুলো ব্যাচেলরদের ভাড়া দেওয়া হয়।

নগরীর ব্যাচেলর শিক্ষার্থী-চাকরিজীবীরা অভিযোগ করেছেন, দেশের সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন  জঙ্গি কর্মকাণ্ডের অযুহাত দেখিয়ে ব্যাচেলদের বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ এবং নতুন ব্যাচেলর ভাড়া দিচ্ছে না  বাড়ির মালিকরা। ব্যাচেলর ভাড়া দিতে পুলিশের কোনো বাধা নিষেধ নেই এবং প্রত্যেক ভাড়াটিয়ার ক্ষেত্রে পরিচয়পত্রসহ জীবনবৃত্তান্ত থানায় জমা দেওয়ার আইন করেছে সরকার, তারপরও ব্যাচলরদের বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয় না ব্যাচেলরদের। কোথাও একটা দুইটা বাড়িভাড়া পাওয়া গেলেও শর্ত জুড়ে দেয় বাড়ির মালিকরা। শুধু তাই নয় নোংরা পরিবেশ, টয়লেট,পানি সংকটসহ নানা রকম ভোগান্তির স্বীকার হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

এই বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে নগরীর ২নং গেইট চাশমা হিলের হাবিব ম্যানশনের মালিক আসলাম হাবিব সিভয়েসকে বলেন, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ সারা দেশে জঙ্গী সন্দেহে ব্যাচেলর ভাড়াটিয়াদের কেন্দ্র করে পুলিশের তল্লাশিসহ বিভিন্ন জায়গায় বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়াদের সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এতে বাড়ির মালিকেরা ব্যাচেলর ভাড়া দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছেন।

তবে ভিন্নমত পোষণ করেছেন কালাম গেইট ব্যাচেলর ভাড়া প্রধানকারী বাড়িওয়ালা আকবর আলম সিভয়েসকে বলেন, শহরের ব্যাচেলরদের বাড়ি ভাড়া নিয়ে কষ্টের সীমা থাকে না। বাড়িওয়ালারা ব্যাচেলর ভাড়া দিতে চাইছে না।

তিনি আরো বলেন, সরকার ব্যাচেলর ভাড়া নিয়ে কোনো নিদিষ্ট আইন না করলেও, বাড়িওয়ালারা বিভিন্ন সমস্যার অযুহাত দেখিতে ব্যাচেলর ভাড়া দেয় না। কিন্তু আমি যখন ঢাকা ব্যাচেলর হিসেবে ছিলাম তখন প্রতিনিয়ত বাড়িভাড়া নিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলাম, তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ব্যাচেলরদের বাসা ভাড়া দিয়ে কিছু ব্যাচেলর ভাড়াটিয়ার কষ্ট লাঘব করার চেষ্টা করছি এবং প্রত্যেক ভাড়াটিয়ার তথ্য থানায় দিচ্ছি।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী ফারিয়া জান্নাতুল সিভয়েসকে বলেন, মেয়েদের ও নানা রকম ঝামেলার মধ্যদিয়ে বাসা ভাড়া নিতে হয়,হোস্টেলে খাবারের মানসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে বাসাবাড়া নিয়েছি। কিন্তু প্রতিনিয়ত আমাদের অনেক সমস্যার মধ্যদিয়ে চলতে হয়।

ভুক্তভোগী সরকারি কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী স্বরুপ বড়ুয়া জানান,নগরীর অলিগলিতে ‘টু-লেট’ লেখা বিভিন্ন সাইনবোর্ড, ব্যানার, পোস্টার এবং লিফলেট চোখে পড়ে। কিন্তু ভাড়ার জন্য যোগাযোগ করলে সবার আগে জানতে চাওয়া হয়, ফ্যামিলি নাকি ব্যাচেলর? ফ্যামিলি হলে সমস্যা নেই, কিন্তু ব্যাচেলর হলে মুখের উপর না বলে দেন। গুটিকয়েক জঙ্গির কারণে লাখো ব্যাচেলর ছেলেমেয়ে মানসিক ও অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিএমপির খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রনব কুমার চৌধুরী  সিভয়েসকে বলেন, বাড়িওয়ালারা যদি ব্যাচেলর দের সঠিক তথ্য থানায় জমা দেন, সেক্ষেত্রে কোন সমস্যা হয় না। কিন্তু অনেক বাড়িওয়ালা বাড়িটিয়াদের তথ্য গোপন করেন যা পরবর্তীতে কোন সমস্যার সম্মুখীন হলে, বাড়িওয়ালাদের ও আইনের সম্মুখীন হতে হয়।সঠিক তথ্য থানায় জমাদিলে, প্রশাসন থেকে কোনো  বাধানিষেধের নির্দেশনা নেই।

-সিভয়েস/এসসি

তাপস বড়ুয়া

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়