Cvoice24.com


নগরীতে জেলা নিবন্ধিত সিএনজি-টেম্পুর রাজত্ব

প্রকাশিত: ১৩:২২, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯
নগরীতে জেলা নিবন্ধিত সিএনজি-টেম্পুর রাজত্ব

ছবি : সিভয়েস

নগরীর বিভিন্ন সড়কে আইনের তোয়াক্কা না করে চলছে রুট পারমিটবিহীন ও জেলায় নিবন্ধিত সিএনজি অটোরিকশা। এছাড়া চলাচল করছে ফিটনেসবিহীন ফোরহুইলার ও ডাকসু।

বহদ্দারহাট মোড়ে পুলিশ বক্সের সামনে দিয়ে রুট পারমিটবিহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ অটোটেম্পো ও হিউম্যান হলার চলছে বেশ কয়েক বছর ধরে। এছাড়াও রুট পারমিটবিহীন অন্তত ১শ টমটম চকবাজার কাঁচাবাজার মোড় সংলগ্ন সড়কে লম্বা লাইনের মাধ্যমে চলছে। এছাড়া কলেজ রোড, মুরাদপুর, এ কে খান, অলঙ্কারসহ এক ডজনের অধিক স্পটে রুট পারমিটবিহীন, ও জেলার নিবন্ধিত টেক্সি ও টমটম চলছে। তারমধ্যে আবার কিছু গাড়ির নিবন্ধন -পারমিটে ত্রুটি নেই।

অভিযোগ আছে, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনগুলোকে মামলা ও জরিমানার বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে পুলিশ।

সরজমিনে, মুরাদপুর মোড় থেকে অক্সিজেন সড়কে চলাচলের জন্য সারিবদ্ধভাবে অটোটেম্পো পার্কিং করে রাখতে দেখা গেছে। এই রুট পারমিটবিহীন টেম্পোগুলোর মধ্যে রেয়েছে নিজস্ব সিরিয়াল ব্যবস্থা। একজন লাইনম্যানকে সিরিয়ালের বিষয়টি তদারকি করতে দেখা গেছে। যেটা সবার সামনে রয়েছে, সেটি আছে মূল সড়কের মুখে। সেখান থেকে যাত্রী তুলে টেক্সিগুলো একে একে মহাসড়ক হয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা দিচ্ছে।

বায়েজিদ থানায় যাওয়ার সড়কের প্রথমে রয়েছে একটি সিএনজি স্ট্যান্ড। বায়েজিদ তারা গেইট থেকে চন্দ্রনগর আবাসিক পর্যন্ত দৈনিক প্রায় ২৮টি জেলা নিবন্ধিত (চট্টগ্রাম) সিএনজি চলাচল করে। অপর দিকে বায়েজিদ থানা থেকে আমিন জুটমিল পর্যন্ত ৪২ টিরও বেশি। যানা গেছে, থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে গ্রাম সিএনজিগুলো অবাধে চলাচল করছে।

সিএনজি নানা গন্তব্যে যাত্রী আনা-নেয়া করছে জেলার নিবন্ধন নেওয়া রুট পারমিটবিহীন সিএনজি টেক্সিগুলো। এসব সিএনজি অটোরিকশা টেকনিক্যাল মোড় থেকে শুরু করে খুলশী রেল গেট পর্যন্ত চলাচল করছে। কিছু সিএনজির উপস্থিতি দেখা গেছে টাইগারপাস এলাকায়। এগুলো জেলায় নিবন্ধন নেওয়া। টাইগারপাস ট্রাফিক পুলিশ বক্সের বিপরীতে ও রেলওয়ে পুলিশ কার্যালয়ের সামনে থেকে এসব টেক্সির স্ট্যান্ড থেকে আমবাগান, পাহাড়তলীসহ বিভিন্ন গন্তব্যে ওই টেক্সিগুলো যাত্রী আনা-নেয়া করছে।

পরিচয় গোপন রেখে মুরাদপুর টেম্পোর যাত্রী হিসেবে একাধিক চালকের সাথে কথা বললে তারা বলেন, ‘পুলিশকে এবং লাইনম্যানকে নিয়মিত টাকা দিয়েই গাড়ি চালাতে হয়। টাকা দিলে লাইসেন্স বা গাড়ির কাগজপত্র লাগে না। টাকা না দিলে আমাদের গাড়ি হয়ে যায় রুট পারমিটবিহীন।’

চালকেরা জানায়, তারা ট্রাফিক পুলিশকে দৈনিক ১০০-১৫০ টাকা এবং লাইনম্যানকে ৫০ টাকা দিয়ে থাকে। লাইনম্যানকে ১০-১৫ টাকা বেশি দিলেই সিরিয়াল আগে পাওয়া যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বায়েজিদ রোডের সিএনজির এক চালক জানান, ’অনেক পুলিশ কর্মকর্তারই সিএনজি আছে, যারা তাদের সিএনজিগুলো চালায় তাদের কোনো ঝামেলায় পড়তে হয় না।’

এদিকে মহাসড়কে সিএনজি-অটোরিকশা নিষিদ্ধ করার পর একটি মহল দলীয় সাইনবোর্ড ব্যবহার করে নিজেদের পকেট ভারী করছে বলে জানা গেছে। কখন বিআরটিএ ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করবে সে সময়টি পর্যন্ত সোর্সের মাধ্যমে খবর পেয়ে সড়ক থেকে উধাও হয়ে যায় জেলায় নিবন্ধিত সিএনজিগুলো। নির্দিষ্ট সড়কে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনা শেষ হলে ফের সড়কে চলাচল করে ওই সিএনজিগুলো। এমতাবস্থায় বিআরটিএ কর্তৃক ভ্রাম্যমান আদালতের এই অভিযানকে আই ওয়াশ বলে মনে করছেন নিদিষ্ট রুটপারমিটধারী গাড়ির মলিকেরা।

এই বিষয়ে সিএনজি মালিক সানা উল্লাহ সিভয়েসকে বলেন, কাগজপত্র সঠিক থাকার পরও পারমিটের সীমাবদ্ধতার কারণে সিটির বাইরে আমাদের সিএনজিগুলো গেলে হাইওয়ে পুলিশ মামলা দেয়। কিন্তু শহরের মধ্যে প্রকাশ্যে গ্রাম সিএনজিগুলো চলাচল করলেও তাদের কিছুই হয় না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মোস্তাক আহামেদ সিভয়েসকে বলেন, আমাদের চোখের সামনে যেসব রুট পারমিটবিহীন যানবাহন পড়ছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে নিয়মিত ব্যবস্থা নিচ্ছি। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে, জরিমানা করা হচ্ছে। এগুলো নিয়মিত করছে পুলিশ। মুরাদপুর মোড় থেকে অক্সিজেন সড়কে অটোটেম্পোর চলাচল তেমনটা নেই। মাঝে মাঝে পরীক্ষার্থী, মুমূর্ষ রোগীদের আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে মানবিক দিক বিবেচনা করে শতভাগ আইন বাস্তবায়ন সম্ভব হয়ে উঠে না।

মোস্তাক বলেন, যাত্রী সাধারণের কথাও আমাদের বিবেচনা করতে হচ্ছে। শহরে যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী যানবাহন অপ্রতুলতা রয়েছে। এছাড়া আরো কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে এগুলোর বিষয়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দিতে হচ্ছে।

সাধারণত টেম্পো ও হিউম্যান হলারের মেয়াদ থাকে ২০ বছর। নগরীতে চলাচলকারী টেম্পোগুলো অনেক আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। মেয়াদোত্তীর্ণহীন এসব গাড়ি চলাচল করছে নগরীতে। অভিযোগ রয়েছে অসাধু পুলিশ সদস্যদের ম্যানেজের মাধ্যমে এসব গাড়ি রাস্তায় চালাচ্ছে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো।

বিআরটির আইনে অনিবন্ধিত, রুট পারমিটবিহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ যে কোনো ধরনের যানবাহন সড়কে চলাচল নিষিদ্ধ। আবার জেলায় নিবন্ধন নেওয়া সিএনজি অটোরিকশা নগরীতে চলাচল নিষিদ্ধ। তবুও ওইসব যানবাহন সড়কে চলছে। তাও আবার চলছে পুলিশের সামনেই।

এ বিষয়ে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আমির জাফর সিভয়েসকে বলেন, কেউ যদি রুট পারমিটবিহীন পন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে চাঁদা আদায় কাজে জড়িত থাকে, তাদের ক্ষেত্রে অভিযোগ পাওয়ার ভিত্তিতে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো ব্যবস্থা নিতে পারে। এগুলো বন্ধে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, বিআরটিএ ও পুলিশ সম্মিলিতভাবে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিলে এ সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে। এ ব্যাপারে সব সংস্থার সাথে আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ট্রাফিক পুলিশের অসাধু সদস্য ও পরিবহন মালিক শ্রমিক সংগঠনের সমন্বয়ে দেওয়া স্টিকার ও টোকেন সংগ্রহের পাশাপাশি মোড়ে মোড়ে চাঁদা দিয়ে ওইসব যানবাহন দীর্ঘদিন ধরে চলাচল করে আসছে। সড়কে অরাজকতার কারণ স্টিকার ও টোকেন বাণিজ্য, চাঁদা প্রদান, পরিবহনে অরাজকতা তৈরিতে অন্যতম কারণ বলে দাবি করেছে পরিবহন সংশ্লিষ্ট একটি অংশ। অতিরিক্ত টাকা দেওয়ার কারণে তা পুষিয়ে নিতে চালকেরা বিভিন্ন সময় অতিরিক্ত আয়ের সাথে জড়িয়ে পড়ছেন। এতে করে বিভিন্ন সময় সড়কে অসুস্থ প্রতিযোগিতা, ভাড়া নৈরাজ্য, ঝুকিপূর্ণভাবে অতিরিক্ত যাত্রী তোলা হচ্ছে।

দৈনিক ও মাসিক ভিত্তিতে টাকার বিনিময়ে স্টিকার ও টোকেন সংগ্রহ করে বিভিন্ন যানবাহন মালিক রুট পারমিটবিহীনভাবে তাদের যানবাহনগুলো রাস্তায় চালাচ্ছেন। এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন মোড়ে রুট পারমিটবিহীন যানবাহনের স্ট্যান্ড গড়ে উঠছে।

ট্রাফিকের উপ-কমিশনার (উত্তর) আমির জাফর বলেন, স্টিকার ও টোকেন বাণিজ্য আগের তুলনায় বর্তমানে অনেকটা কমে এসেছে। আগে নগরীর সড়কগুলোতে যে হারে এসব গাড়ি চলত এখন তেমনটা চলছে না। যেখানে এ ধরনের যানবাহন পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোর বিরুদ্ধে জরিমানা প্রদানসহ মামলা দেওয়া হচ্ছে। সড়ক ও পরিবহন আইন ২০১৮ এর প্রয়োগ হলে সামনে আরো কমে যাবে বলে জানান তিনি।

-সিভয়েস/এসসি

জোবায়েদ ইবনে শাহাদত

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়