Cvoice24.com


আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে ন্যায় বিচারের আশায় রোহিঙ্গারা

প্রকাশিত: ১৫:০৫, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯
আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে ন্যায় বিচারের আশায় রোহিঙ্গারা

রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর গণহত্যার অভিযোগে নেদারল্যান্ডের হেগে ‘আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে (আইসিজে)’ বিচারকার্য শুরু হওয়ায় ন্যায়বিচার পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করছেন রোহিঙ্গারা। আদালতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হলে রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়াসহ মিয়ানমারে ফিরতে পারবে। এজন্য বাংলাদেশে আশ্রীত রোহিঙ্গারা তাকিয়ে আছে আইসিজের ঘোষিত রায়ের দিকে।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রক্তাক্ত এক সামরিক অভিযান চালিয়ে ৭ লাখ ৪০ হাজারের বেশি মানুষকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। রক্তাক্ত এ অভিযানে ধর্ষণ, গণধর্ষণ, হত্যা, জ্বালাও-পোড়াও চালানো হয়। প্রাণে বাঁচতে সেই সময় রোহিঙ্গাদের ঢল নামে বাংলাদেশে। এরআগে থেকে এ দেশে অবস্থান করছিলেন আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। সীমান্তবর্তী জেলা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ৩৪টি শিবিরে বর্তমানে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়। এর পূর্ব থেকে গত ৭০ বছর ধরে রোহিঙ্গাদের উপর চলমান জাতিগত নির্যাতন-নিপীড়নের অভিযোগে মিয়ানমারকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো সম্ভব হয়নি। কিন্তু এবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক মহলের তৎপরতায় মিয়ানমারকে বিচারের মুখোমুখি করানো সম্ভব হয়েছে।

আদালতে গণহত্যার স্বপক্ষে বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণাদিসহ স্বাক্ষ্য দিতে আইসিজে’তে কক্সবাজারের উখিয়ার ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের ৩ জনের একটি প্রতিনিধি দল নেদারল্যান্ডের হেগেতে অবস্থান করছেন। এদিকে নেদারল্য্যান্ডের হেগে অবস্থিত আইসিজে’তে বিচারকার্য হওয়ার খবর উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে ছড়িয়ে পড়লে খুশিতে আশায় বুক বাঁধে রোহিঙ্গারা। এ নিয়ে তারা ক্যাম্পগুলোর বিভিন্ন মসজিদ ও মাদ্রাসায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল করেছে। মিয়ানমারে এ গণহত্যার জন্য অং সান সুচি’কে দায়ী করছে রোহিঙ্গারা। আদালতে ন্যায়বিচার নিশ্চিতের পাশাপাশি নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়াসহ বেশ কয়েকটি দাবী নিশ্চিত হলে মিয়ানমারে ফিরে যাবে বলে জানান রোহিঙ্গারা।

উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা যুবক নুর মোহাম্মদ জানান, আমাদের উপর যে নির্যাতন হয়েছে তার বিচার বিশ্ববাসীকে দিয়েছি। এরই প্রেক্ষিতে আজকে অং সান সুচি’কে আর্ন্তজাতিক বিচারের কাটগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে। এটি আমাদের জন্য খুশির খবর। আমরা চাই তার বিচারের পাশাপাশি আমাদের জাতীয়তাসহ দাবী পুরনের মাধ্যমে নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে।

একইভাবে রোহিঙ্গা নারী রাবেয়া খাতুন জানান, মিয়ানমার আমাদের সাথে যে অন্যায় করেছে তা বর্ণনা করার মত না। তারা আমাদের সন্তান-স্বামী কেড়ে নিয়েছে। তারা মায়ের সামনে মেয়েকে আর মেয়ের সামনে মাকে ধর্ষণ করেছে। বিশ্বের আদালতে এই অত্যাচারের বিচার হওয়ায় আমরা খুবই খুশি। আমরা ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করছি। আশা করি এই অন্যায়ের বিচার আল্লাহ করবেন।   

এ ব্যাপারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অবস্থান স্থল উখিয়ার উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে শুরু হওয়া বিচারকার্যটি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ কূটনৈতিক সফলতার প্রাথমিক ধাপ। সঠিক বিচারের মধ্য দিয়ে মিয়ানমার বাধ্য হবে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বসহ সহায়-সম্পত্তি ফিরিয়ে দিয়ে পুনর্বাসন করতে।

বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক মহলের কূটনৈতিক তৎপরতার কারণে মিয়ানমার সরকার বিচারের মুখোমুখি হতে বাধ্য হয়েছে। রোহিঙ্গারা আশাবাদী গণহত্যার জন্য মিয়ানমার আদালতের কাছে দোষী সাব্যস্ত হবে। আন্তর্জাতিক মহলের তৎপরতায় রোহিঙ্গারা ন্যায়বিচারের মধ্য দিয়ে নিজ গৃহে নিরাপদে ফিরতে পারবে।

প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালতে করা মামলার শুনানি বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) শেষ। নেদারল্যান্ডের হেগে অবস্থিত পীস প্যালেসে মামলার পক্ষে প্রথমে যুক্তি উপস্থাপন করবে গাম্বিয়া। পরে মামলার বিপক্ষে তর্ক উপস্থাপন করবে মিয়ানমার। এরআগে মামলার প্রথম দিন গণহত্যার অভিযোগ উপস্থাপন করেন গাম্বিয়া ও দ্বিতীয় দিন গণহত্যার বিপক্ষে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন মিয়ানমার স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি।

-সিভয়েস/এমএম

ওমর ফারুক হিরু

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়