Cvoice24.com


চট্টগ্রামকে নিয়ে আমার সমস্ত ভাবনা: মনজুরুল হক

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯
চট্টগ্রামকে নিয়ে আমার সমস্ত ভাবনা: মনজুরুল হক

মনজুরুল হক। ছবি: সিভয়েস

চট্টগ্রামে আধুনিক রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ের পথিকৃৎ মনজুরুল হক। তাঁর হাতে ধরেই চট্টগ্রামের রেস্টুরেন্টে সৃষ্টি হয়েছে আধুনিক সংস্কৃতি ও সৃজনশীলতার। সিঙ্গাপুরের থেমস বিজনেস স্কুল থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতক শেষে তিনি তাঁদের পারিবারিক ব্যবসায় হাত দেন। কিন্তু তিনি খেয়াল করেন, এখানকার রেস্টুরেন্ট সংস্কৃতি সেই আদিম যুগে রয়ে গেছে। উন্নত দেশের রেস্টুরেন্ট সংস্কৃতি চট্টগ্রামে আনার উদ্দেশ্যে ২০১৩ সালে বারকোড ক্যাফে প্রতিষ্ঠা করেন।

২০১৩ সালে চার জন সদস্য নিয়ে ছোট্ট পরিসরে চট্টগ্রামে শুরু হয় বারকোড ক্যাফের পথচলা। তখন বসার ব্যবস্থা ছিল মাত্র ৫০ জনের। তবে খাবারের স্বাদ, মান এবং পরিবেশনের আন্তরিকতার কারণে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি এ রেস্টুরেন্টকে। একে একে প্রতিষ্ঠা করেন বারকোড ক্যাফে, বারগুইচ টাউন, মেজ্জান হাইলে আইয়্যুন, বীর চট্টলা, বারকোড জিইসি, বারকোড মেরিনা ক্যাপেলা, বারকোডিয়ান। এখন বারকোডের চট্টগ্রামে ১৩টি শাখা ও ঢাকার বনানীতে একটি শাখা রয়েছে। বারকোডে এখন কাজ করেন তিন শতাধিক সদস্য।

ভোজনরসিকদের আস্থাভাজন হয়ে ওঠা বারকোড অল্প সময়ের মধ্যেই সকলের স্বাদ ও সাধ্যের সমন্বয়ে দিতে চায় অন্য একটি নতুন চমক। বারকোডের প্রতিষ্ঠাতা মনজুরুল হক বলেন, ‘আমরা আমাদের সেবার মান, পণ্যের গুণগত মান ধরে রেখে নতুন একটি চমক দিতে চাই। এ চমক আমাদেরকে চট্টগ্রামবাসীর সাথে আরো ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে আশা করি।’

ব্যবসায়িক প্রসার নিয়ে তাঁর ভাবনার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি রেস্টুরেন্ট কালচারের উন্নয়নমূলক পরিবর্তনের কথা চিন্তা করে বারকোড শুরু করেছি। এবং এখন পর্যন্ত আমি নিজেকে সফল মনে করি। কেননা আমি রেস্টুরেন্ট শুরু করার পর চট্টগ্রামে প্রায় পাঁচশত মতো রেস্টুরেন্ট আধুনিকতার সাথে রেস্টুরেন্ট কালচারকে রিপ্রেজেন্ট করছে। কিন্তু এর বাইরেও আমার অন্য এক ধরনের আনন্দ আছে। সেটি হলো- এ রেস্টুরেন্টের মাধ্যমে আমি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারছি। চারজন সদস্য নিয়ে বারকোড শুরু করা হলেও বর্তমানে বারকোডে কাজ করছেন তিন শতের অধিক সদস্য।’

বারকোডকে অনেকটা চট্টগ্রামকেন্দ্রিক রাখার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম নিয়ে আমার ভাবনা একদম অন্য রকম। আমি এখন পর্যন্ত রেস্টুরেন্ট কালচার, ফুড টেস্টের ব্যাপারে কাজ করছি। চট্টগ্রামের পর্যটন নিয়েও কাজ করার পরিকল্পনা আছে। অনেকের অনুরোধে ঢাকার বনানীতে বারকোডের একটি শাখা করেছি। তবে এটি ছাড়া অন্য কোথাও আর বারকোডের শাখা করার চিন্তা-ভাবনা আমার নেই। আমি চট্টগ্রামে যুব সমাজকে সাথে নিয়ে চট্টগ্রামে বিশ্ব সংস্কৃতির চর্চা করতে চাই। যেন বিশ্বে চট্টগ্রামের আলাদা একটি সুখ্যাতি থাকে। তাই বলা যায়, চট্টগ্রামকে নিয়ে আমার সমস্ত ভাবনা।

যুব সমাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‌‘যেখানে আমি আনন্দ পাই, সেখানে ভালো কিছু করাটাই আমার লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। তবে যুব সমাজের সাথে সম্পৃক্ত থেকেই আনন্দ পাই। আর যুব সমাজই পারে যে কোনো স্রোতের গতি বাড়াতে, থামাতে, আবার উল্টো ঘুরিয়ে দিতে। তাই তাদের নিয়ে ভালো কিছু করতে পারলে, ভালোটা খুব দ্রুত হবে।’

প্রবীণদের নিয়ে তাঁর ভাবনার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেখুন, নবীন হাঁটতে শিখে প্রবীণের হাত ধরে। প্রবীণদের এমন বহু উদ্যোগ আছে যা আমাকে বরাবরই অনুপ্রাণিত করে। নতুন করে নতুন কিছু ভাবতে শেখায়। তাই প্রবীণদের অভিজ্ঞতা আমার কাছে পাঠ্যবইয়ের মতো। অন্য যে কোনো বই পড়ি বা না পড়ি, ভালো ফলাফলের জন্য পাঠ্য বই পড়তেই হবে।’

পারিবারিক ব্যবসায় কতটা সময় দিচ্ছেন তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পারিবারিক ব্যবসায়ে অবশ্যই সময় দিতে হয়। তবে এ রেস্টুরেন্ট আমার সন্তানের মতো। তাই রেস্টুরেন্টের প্রতি মনোযোগ একটু বেশি থাকে। রেস্টুরেন্ট ছাড়াও বর্তমানে সিক্স ইভেন্টস, এন মোহাম্মদ কনভেনশন সেন্টার, এন মোহাম্মদ পাওয়ার টেক, আমরা চট্টগ্রাম, এক্সক্লুসিভ ফার্নিশিং এন্ড ডেকোর পরিচালনা করছি।’

ব্যস্ততার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এসবের পাশাপাশি ব্যক্তিগত ভালোবাসার জায়গা থেকে কয়েকটি সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত থেকে সমাজের জন্য কিছু করা চেষ্টা করি।’

সংগঠনের নাম জানতে চাইলে তিনি জানান, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চট্টগ্রাম সিটি ইউনিট, মা ও শিশু হাসপাতাল, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম জোনের বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস কমিশন অব দ্যা গ্র্যাটার, ভাটিয়ারি গলফ ক্লাব, চট্টগ্রাম বোট ক্লাব ইত্যাদি।

উল্লেখ্য, মনজুরুল হকের জন্ম আবু-ধাবিতে। তাঁর পিতা নূর মোহাম্মদ ছিলেন এন মোহাম্মদ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা। এন মোহাম্মদ গ্রুপ ১৯৫৮ সাল থেকে বাংলাদেশ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে উভয়ই শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। তাঁর পিতা নূর মোহাম্মদ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক একাধিকবার বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) হিসেবে ভূষিত হয়েছিলেন।

-সিভয়েস/এমএম

শুভ্রজিৎ বড়ুয়া

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়