Cvoice24.com


এক সময়ের ঐতিহ্যের সোপান আজ বিলুপ্তির পথে

প্রকাশিত: ১১:২৬, ৯ ডিসেম্বর ২০১৯
এক সময়ের ঐতিহ্যের সোপান আজ বিলুপ্তির পথে

ছবি : সিভয়েস

শীতে বাংলার প্রতি ঘরে ঘরে পিঠা পায়েসের উৎসব ছিল এক নিত্য ঘটনা । হরেক রকমের পিঠা-পুলি খাওয়ার প্রয়াসে, একসময় তীব্র শীতের মাঝেও খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য ব্যস্ত থাকতেন গাছিরা। গত কয়েক বছরের ব্যবধানে ক্রমবর্ধমান মানুষের বাড়ি-ঘর নির্মাণ আর নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে ক্রমশই খেজুর গাছের সংখ্যা কমে গেছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায়। যার ফলে নতুন প্রজম্মের কাছে খেজুরের রসের পিঠা পায়েস আজ প্রায়ই অপরিচিত আর প্রবীণদের কাছে রসালো অতীত স্মৃতি। চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, বোয়াখালি, সীতাকুণ্ড, মিরসরাইসহ অন্যান্য উপজেলার গাছিদের মাঝে নেই আগের মত কর্মব্যস্ততা। বছর দশেক আগে শত মাইল জুড়ে খেজুর গাছ থাকলেও তা আজ যেন শুধুই রুপকথা।

মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে সরেজমিনে দেখা যায়, বেশির ভাগ খেজুর গাছ গোড়া থেকে কাটা। অবশিষ্ট গাছগুলো পড়ে আছে অবহেলায়। কোথাও ধূলোর আস্তরণে আবার কোথাও অযত্নে পড়ে থাকতে দেখা গেছে এক সময়ের এই ঐতিহ্যের সোপানকে। তবে এখনো গাছিরা কুয়াশার তীর্যক আলো গাছে ভেদ করে পৌঁছানোর অনেক আগেই রস নামানো শুরু করে। প্রচন্ড শীতেও লুঙ্গি গুছিয়ে গায়ে পরা চাদরকে এপাশ ওপাশ দিয়ে দ্রুত বেগে রস সংগ্রহ করে। সকল রস আহরণ করে এক স্থানে জড়ো করে। নানাবিধ হাঁড়ি থেকে অল্প কয়েক হাঁড়িতে রস একত্রিত করে। অন্য খালি হাঁড়িগুলোকে খাল কিংবা পুকুরের পানিতে ভালভাবে পরিস্কার করে রোদ মুখে রেখে বাড়িতে যাত্রা করে সে। তারপর, বাঁশের তৈরী বড় অংশের টুকরোর উভয় পাশে সমপরিমাণ হাঁড়ি নিয়ে বাঁশটির মাঝ বরাবর কাঁধে নিয়ে বিশেষ ভঙ্গিমায় হেলেদুলে রস বাজারে নিয়ে আসে।।

সীতাকুণ্ড গোত্তাখালি গ্রামের মুসলিম উদ্দিন এবং আবুল হাসান জানান, কিছু কিছু এলাকায় এখনো পর্যাপ্ত পরিমাণ খেজুর গাছ থাকলেও সঠিকভাবে তা পরিচর্যা না করা, নতুন করে গাছের চারা রোপণ না করা এবং গাছ কাটার পদ্ধতিগত ভুলের কারণে প্রতি বছর অসংখ্য খেজুর গাছ মারা যাচ্ছে। এছাড়া এক শ্রেণির মানুষ জ্বালানি হিসেবে খেজুর গাছ ব্যবহার করাতে ক্রমেই কমে যাচ্ছে খেজুর গাছের সংখ্যা।

মিরসরাই দমদম গ্রামের গাছি সলেমান বলেন, আগের মতো খেজুর গাছ না থাকায় এখন আর সেই রমরমা অবস্থা নেই। ফলে শীতকাল আসলে নিজের বাড়ির ৪-৫টা খেজুর গাছ শখের বসে কাটি এবং প্রতি হাড়ি খেজুর রস ১৫০-৫০০ টাকা বিক্রি করি।

বোয়াখালি উপজেলার প্রবীন অধ্যাপক রনজিত দেবনাথ বলেন, বর্তমানে ছেলে-মেয়েরা বিভিন্ন ধরনের কোমল পানীয়ের স্বাদ জানে, কিন্তু তারা খেজুর রসের স্বাদ জানে না। খেজুর রস আমাদের আর পাঁচটা সংস্কৃতির মতোই। আমাদের উচিত এটার প্রতি আরো যত্নবান হওয়া। আমরা অতীতমুখী নই, তবে সেখান থেকে আমাদের শিখতে হবে। আমরা কখনই ঐহিত্য বিমুখ হতে চাই না,’ বলেন তিনি।এক দশক আগেও শীতের সকালে চোখে পড়তো রসের হাড়ি ও খেজুর গাছ কাটার সরঞ্জামসহ গাছির ব্যস্ততার দৃশ্য। সাত সকালে খেজুরের রস নিয়ে গাছিরা বাড়ি বাড়ি হাঁক ডাক দিতেন। শীতের মৌসুম শুরু হতেই বাড়ি বাড়ি চলতো খেজুরের রস কিংবা রসের পাটালি গুড় দিয়ে মজাদার পিঠাপুলির আয়োজন। সে আয়োজন শিখিয়ে দিত একান্নবর্তী পরিবার বা সমাজে সকলে একসঙ্গে থাকার স্বাদ ও মানবিকতাও।।

সাতকানিয়া উপজেলার সমাজকর্মী আবদুল ফয়সাল বলেন, আগের তুলনায় খেজুর গাছের সংখ্যা কমেছে। নতুন করে খেজুর গাছ রোপন না করা এবং বিভিন্নভাবে জ্বালানী হিসেবে খেজুর গাছ ব্যবহার করায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে দ্রুত খেজুর গাছ হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে এ জনপদের মানুষ এখন খেজুর রসের মজার মজার খাবার হারাতে বসেছে।

এই বিষয়ে মিরসরাই উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ সহকারি কর্মকর্তা কাজী নুরুল আলম সিভয়েসকে বলেন, সরকারি ভাবে খেজুর গাছ রক্ষার কোনো নির্দেশ আমাদের দেওয়া হয়নি। তবে আমরা প্রতি সিজনে নতুন করে মাঠপর্যায়ে খেজুর গাছ নিয়ে বিভিন্ন রকম পরামর্শ প্রদান করে থাকি।

খেজুর গাছ রক্ষা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপাতত খেজুর গাছ রক্ষায় আমাদের কোনো পরিকল্পনা নেয়া হয়নি! তবে নির্দেশনা পেলে ভবিষ্যতে আমরা এই বিষয়টি আরও গুরুত্ব সহকারে দেখবো।

-সিভয়েস/এসসি

 

তাপস বড়ুয়া

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়