Cvoice24.com


প্রতিশ্রুতিতেই সীমাবদ্ধ চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার দাবি

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ৮ ডিসেম্বর ২০১৯
প্রতিশ্রুতিতেই সীমাবদ্ধ চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার দাবি

ছবি : সংগৃহীত

নগরীর বিভিন্ন রুটে ৮ হাজারেরও বেশি বাস চলাচল করে। এসব গণপরিবহনের মধ্যে হাতে গোনা মাত্র কয়েকটিতে হাফ ভাড়ার প্রচলন রয়েছে। অধিকাংশ বাসেই হাফ ভাড়া দিতে গেলে নিগ্রহের শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, ১৯৬৪ সালে বিআরটিসি চারটি বাস দিয়ে সরকারিভাবে গণপরিবহন সেবা দেয়া শুরু করে। তখন থেকে সরকারের নির্দেশে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নেয়া হত। কিন্তু এটা ছিল সম্পূর্ণ সরকারি সেবা। পরবর্তীতে যখন সরকারি বাসের সাথে সাথে বেসরকারি বাস গণপরিবহনের সেবা দেয়া শুরু করে তখন সরকারি বাসের নিয়মে বেসরকারি বাসেও ছাত্রদের হাফ ভাড়া নেয়া হত। যা পরবর্তীতে বেশ কিছুদিন চলে।

কিন্তু বেসরকারি বাস কোম্পানির সাথে সরকার কোনো চুক্তি না করায় হাফ ভাড়া নিতে তারা বাধ্য নয় এমন অজুহাত গণপরিবহন শ্রমিকদের। যার ফলে হাফ ভাড়া দিতে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গণপরিবহনের শ্রমিকদের ঝামেলার ঘটনা ঘটছে অহরহ।

শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার দাবিতে আমাদের দেশে আন্দোলন করতে হলেও অন্যান্য দেশের চিত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ, এমনকি উন্নত দেশেও গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের স্পেশাল ছাড়, হাফ ভাড়া এমনকি ফ্রি যাতায়াতের সুযোগ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন কিংবা নেদারল্যান্ডের আমস্টারডাম, মাল্টা-মরিশাসসহ আফ্রিকা-ইউরোপের অনেক দেশেই চালু রয়েছে শিক্ষার্থীবান্ধব হাফ ভাড় প্রথা।

শিক্ষার্থীদের বিনা ভাড়ায় চলাচলের জন্য বাজেটে অর্থ বরাদ্দ রেখেছে ভারতের কর্ণাটক রাজ্য সরকার। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপ-আফ্রিকার অনেক দেশেও এটা চালু রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো ট্রান্সপোর্ট অথরিটি শিক্ষার্থীদের জন্য কার্ড চালু করেছে; যা দিয়ে বাস ও ট্রেনে অর্ধেক ভাড়ায় যাতায়াত করতে পারে। দিল্লিতে ১০০ রুপির (১৩০ টাকা প্রায়) কার্ড দিয়ে সাধারণ বাসে সারা মাস যাতায়াত করতে পারে শিক্ষার্থীরা। আর এসি বাসে অন্য যাত্রীদের মাসে এক হাজার ২৭৫ রুপির কার্ড লাগে, ছাত্র-ছাত্রীদের দিতে হয় ২০০ রুপি। ভারতের কেরালা রাজ্যে বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া আট রুপি। এর সঙ্গে বাড়তি এক রুপি দিয়ে ৪০ কিলোমিটার যাতায়াত করতে পারে শিক্ষার্থীরা।

নগরীর গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়া কার্যকরের দাবিতে ব্যানার-প্ল্যাকার্ড হাতে বিভিন্ন সময় পথসভা করলেও এখন পর্যন্ত তার ফলপ্রসু কোনো সমাধান পায়নি সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলছে, আমরা তো বেশ কয়েকবার এই দাবি জানিয়েছি সরকারের কাছে। এমনকি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আমাদের এই বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিলেও তা প্রতিশ্রুতিতেই সীমাবদ্ধ থেকে গেছে।

এদিকে, গণপরিবহনে অর্ধেক ভাড়ায় শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে যাতায়াতের বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চট্টগ্রামে এসে সংবাদ সম্মেলন করে গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া আদায় করার নির্দেশ দেন। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর না হওয়ায় মন্ত্রী ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। কিন্তু মন্ত্রীর নির্দেশ এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।

শিক্ষাথীরা বলেন, সম্প্রতি নিরাপদ সড়কের আমরা দাবিতে রাস্তায় নেমেছিলাম এবং তখন সেখানে আমরা নয় দফা দাবি তুলি, এর মধ্যে একটি দাবি ছিলও ”প্রতিটি বাসে স্টুডেন্টদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।” আন্দোলন স্থগিত হলেও এখনও গণপরিবহনগুলোতে হাফ ভাড়া নেয়া হয় না।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়ার বিষয়ে সিভয়েসকে বলেন, 'সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য গণপরিবহনে অর্ধেক ভাড়া কার্যকর করা খুবই প্রয়োজন এবং এই দাবিটি আসলেই যৌক্তিক। আমরা যখন গণপরিবহনে যাতায়ত করতাম তখন এই নিয়মটি প্রচলিত ছিল। তবে এই বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম বা নীতিমালা না থাকায় ন্যায্য অধিকারটি থেকে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে।

সিটি কর্পোরেশন থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়েছি। ইতিমধ্যে সিটি কর্পোরেশন থেকে সাধারণ জনগণের জন্যে ১০০ বাস রাস্তায় নামছে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য গণপরিবহনের বিষয়টি আমরা চিন্তা করছি।

বিশ্লেষকদের মতে, সাধারণ যাত্রীদের সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে বেসরকারি গণপরিবহন সঙ্গে সরকারের যদি চুক্তি থাকত, বিআরটিএ’র নির্ধারিত ভাড়া ছাড়া অতিরিক্ত ভাড়া না নেয়াসহ শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া বিষয়ে চুক্তি থাকত, তাহলে এই নিয়ে এত বেশি তর্ক-বিতর্ক এবং ভেগান্তি হত না। তাদের ভাষ্য, বিশ্বের প্রায় সব দেশেই বেসরকারি গণপরিবহনের সাথে সরকার চুক্তি করে থাকে। সরকারের চুক্তি এবং লিখিত কোনো আইন না থাকায় হাফ ভাড়ার এই প্রথা ধীরে ধীরে উঠে যাচ্ছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আবু হাসান সিদ্দিকি এ বিষয়ে সিভয়েসকে বলেন, ’নির্দিষ্ট কোনো আইন ছাড়া আমরা এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারি না। ভবিষ্যতে যদি সরকার গণপরিবহনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার বিষয়ে চুক্তি করে, বিআরটিএ’র নির্ধারিত ভাড়া ছাড়া অতিরিক্ত ভাড়া না নেয়ার নিয়ম চালু করে তবে সেই ক্ষেত্রে আমরা তা কার্যকর করার জন্য সর্বাত্তক সহায়তা করবো।’

-সিভয়েস/এসসি     

 

জোবায়েদ ইবনে শাহাদত

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়