Cvoice24.com


প্রবীণদের বাধনহারা তারুণ্যে হার মেনেছে বার্ধ্যক্য

প্রকাশিত: ১২:১৪, ২২ নভেম্বর ২০১৯
প্রবীণদের বাধনহারা তারুণ্যে হার মেনেছে বার্ধ্যক্য

ছবি : সিভয়েস

বাধ ভাঙা উল্লাস আর আবেগ মেশালি উচ্ছ্বাসের রেশ যেন কাটছেই না চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের।

শুক্রবার (২২ নভেম্বর) নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারের বিশ^বিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের ১ম পুনর্মিলনী উৎসবের দ্বিতীয় দিনের আয়োজনেও সেই উন্মাদনা দেখা গেছে।

প্রথম দিনের মতোই ধারাবাহিক ছিল দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটি আসা হাজার হাজার প্রবীণেরা।
 
বয়সের ভারও যেন তাদের উল্লাসে বাঁধার কারণ হচ্ছেনা। সেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের তারুণ্যই ঘিরে ধরেছে তাদের। তাইতো বন্ধুদের সাথে খুনসুটি আর নেচে গেয়ে স্মৃতিগুলোর রোমন্থনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা।
    
সেই স্বপ্ন সারথিদের সঙ্গী হতে ছুটে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ২৭তম ব্যাচ ও ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী মো. মোখলেছুর রহমান। চোখের আলো না থাকলেও, মনের চোখেই তারুণ্যকে দিব্যি উপভোগ করছেন তিনি।
 

তিনি সিভয়েসকে বলেন, ‘আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী। এর আগে কোনো প্রতিবন্ধী এখানে পড়াশোনা করেনি। আমার আজকে খুব ভালো লাগছে। আজ সবাই এক পরিবার হয়ে গেছি। মনে হচ্ছে এখন আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের জারুলতলা, লাইব্রেরি চত্বরে আছি। যেখানে আমরা আড্ডা দিতাম।’

তিনি বলেন, ‘আমি সাধারণদের মতই তখন ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে চান্স পেয়েছিলাম। এখন তো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা কোটার মাধ্যমে ভাইভা দিয়েই ভর্তি হচ্ছে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দ ও গৌরবের কথা। আসলে কষ্ট এক-দুইজনকেই করতে হয়। পরবর্তী প্রজন্ম সুখ করবে এটাই স্বাভাবিক।’

বর্তমানে তিনি মুরাদপুরস্থ সমাজ সেবা অধিদপ্তরের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের কণ্ঠশিল্পী হিসেবেও কাজ করে যাচ্ছেন।

এলামনাই এসোসিয়েশন দিনে দিনে আরও সমৃদ্ধ হবে এমন কামনা করে তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের সাথে তো সবসময়ই থাকি। বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সময় দেয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়কে মনে করা খুবই প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। তাইতো আজকে ছুটে এসেছি।’

একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. মাহবুবুর রহমানকেও উৎসবে মেতে উঠতে দেখা গেছে। ষাটোর্ধ্ব এই প্রাক্তন বিশ্ববিদ্যালয়টির ম্যানেজমেন্ট বিভাগ থেকে অনার্স ও মার্কেটিং বিভাগ থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন তিনি। বর্তমানে নওয়াপাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ম্যানেজমেন্ট বিভাগে শিক্ষকতা করছেন।

অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি সিভয়েসকে বলেন, ‘এত বছর পর আজ প্রথম এলামনাইয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে ভেবে ভালো লাগছে। অনেক দিন পর পুরোনো বন্ধু আর পরিচিতজনদের সাথে দেখা হলো। আমারা তো এখন জীবনের শেষ সময়ে আছি, তাই পুনর্মিলনীতে এসে খুব বেশি আবেগময়ী হয়ে পড়েছি। আমার চোখে পানি আসার মতো অবস্থা হয়ে গেছে। খুব ভালো লাগছে।’

তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে সেই শাটল ট্রেন আর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতিগুলো উজ্জীবিত হয়ে গেছে। আমাদের সময় তো কাটা পাহাড় ছিলো না, তখন শাহজালাল হলের পাহাড় দিয়ে ঘুরে ফ্যাকাল্টিতে যেতাম। তখন মাত্র দুটি বিল্ডিং ছিল। বর্তমান কলা ফ্যাকাল্টিতেই আমাদের কমার্স ফ্যাকাল্টির ক্লাস হতো। এখন বিশ্ববিদ্যালয় অনেক বড় হয়েছে। দেখতেও খুব ভালো লাগে। তাই মাঝে মাঝে ঘুরতে চলে আসি।’

এলামনাই গঠন নিয়ে তিনি বলেন, ‘শুরুতে এলামনাই গঠন নিয়ে কিছুটা জটিলতা দেখা গিয়েছিলো। কিন্তু বর্তমানে সেটি কাটিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। বর্তমানে সরকারের অনেক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা এ সংগঠনটির দায়িত্ব নিয়েছে। তাদের দক্ষতায় আমরা বিশ্বাসি। যার দরূণ আজকের এই আয়োজন সম্ভব হয়েছে। আশা করছি ভবিষ্যতেও এটি বেশ ভূমিকা পালন করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইতিমধ্যে সংগঠনটির একটি জায়গার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেখানে একটি টাওয়ার করা হবে। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবারের সদস্যদের সাহায্যে কাজ করবে। আমি আশাবাদী এটি অনেক দূর এগিয়ে যাবে।’

শুধু তারা নয় এভাবে প্রায় ৮ হাজারের অধিক প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সম্মিলন ঘটেছে জিইসির কনভেনশন হলটিতে। গতকাল র‌্যালীতে থাকতে না পারা অনেকেই ব্যস্ততা কাটি রাতেই চট্টগ্রামের উদ্দ্যেশে রওনা দেন। পরে সকাল থেকেই তাদের উপস্থিতিতে যেন আবেগের নগরীতে পরিণত হয়েছে হল প্রাঙ্গন।

-সিভয়েস/এএফ/এসসি

ফয়সাল আব্দুল্লাহ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়