Cvoice24.com


থমকে আছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ !

প্রকাশিত: ১৬:৫৬, ১৫ নভেম্বর ২০১৯
থমকে আছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ !

ছবি : সিভয়েস

জটিলতার কারণে বন্ধ রয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ। তবে এটার নকশায়  আনা হচ্ছে পরিবর্তন। সাথে রয়েছে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয়বৃদ্ধির আশঙ্কা।

চট্টগ্রামের লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রস্তাবিত নকশার ভিন্নতার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা জটিল হবে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের শেষ প্রান্ত বর্তমানে কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণাধীন জি-১ রোডে হলে যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এক্সপ্রেসওয়ের নকশা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ।

জানা যায়, সর্বশেষ এ বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের অ্যালাইনমেন্টটি কর্ণফুলী টানেল ও চিটাগাং আউটার রিং রোডের অ্যাপ্রোচ রোডের অ্যালাইনমেন্টের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না করার বিষয়ে জটিলতা এড়াতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সভাকক্ষে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর এক্সপ্রেসওয়ের নকশা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ক্ষেত্রে মেয়াদ ও ব্যয়বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সভায় কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ বলেছিলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠানের তৈরি করা ডিজাইন অনুযায়ী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের শেষ প্রান্ত কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণাধীন জি-১ রোডে হলে যানজট সৃষ্টি হবে।

সভায় তিনি আরও বলেন, ’কর্ণফুলী টানেলের সামনে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংশোধিত নকশা অতিদ্রুত সেতু কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে। এরপর সেতু কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে নিরাপত্তা ফেন্সিং দিয়ে কাজ শুরু করার অনুমতি দিতে পারবে।’ 

তাই এর পরিবর্তে সুবিধাজনক স্থান নির্ধারণের অনুরোধ করেছেন তিনি। 

সিডিএ সূত্রে জানা যায়, দুই হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্প সিডিএ বাস্তবায়ন করলেও এর অর্থায়ন করবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। 

মূল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে ওয়াসা, টাইগারপাস, আগ্রাবাদ, বারিক বিল্ডিং, নিমতলা, কাস্টমস, সিইপিজেড, সিমেন্ট ক্রসিং ও কাঠগড় মোড়ে মোট নয়টি স্থানে উঠা-নামার জন্য ‘এনট্রি ও এক্সিট’ র‌্যাম্প থাকবে। সাড়ে পাঁচ মিটার প্রস্থের এসব র‌্যাম্পের মোট দৈর্ঘ্য হবে ১২ কিলোমিটার।

এ প্রকল্পের কাজ পেতে ১০টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র সংগ্রহ করে। এর মধ্যে চার প্রতিষ্ঠান শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়। ছয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সর্বনিম্ম দরদাতা হিসেবে ২ হাজার ৮৫৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকায় কাজটি পায় ম্যাক্স  র‌্যাংকিন জেভি। প্রতিষ্ঠানটি এর আগে সিডিএর একাধিক প্রকল্পের কাজ পেয়েছে।

নকশায় পরিবর্তনের ফলে একদিকে যেমন সময় বাড়ছে, তেমনি ব্যয় বাড়ার আশঙ্কাও থেকে যায়। বর্তমান ডিজাইনের পরিবর্তন করা হলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য আর ২ কিলোমিটার বাড়তে পারে এবং এরই সাথে বাড়বে প্রকল্পের মেয়াদও।

এ বিষয়ে জানতে সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী ও এলিভেডেট এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান সিভয়েসকে বলেন, ‘সম্পূর্ণ প্রকল্পের কাজকে আমরা ৪ ভাগে ভাগ করেছি। যার মধ্যে সিমেন্ট ক্রসিং থেকে পতেঙ্গা বিচ পর্যন্ত কাজ চলছে পুরোদমে। 
সল্টগোলা ক্রসিং থেকে সিমেন্ট ক্রসিং অংশে আমরা কাজ শুরু করেছিলাম। তবে কাজ শুরু পর যানজট বেড়ে গেছে জানিয়ে সম্প্রতি বন্দর কর্তৃপক্ষ ওই এলাকায় বিকল্প সড়ক চালু করে ওই অংশে কাজ করার প্রস্তাব দেয়। 

মূলত ওই অংশে কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে বন্দরকেন্দ্রিক যানজটের কারণে তবে ঐ অংশে রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ চলছে।

তিনি আরও বলেন, এলিভেডেট এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের শেষ প্রান্ত নির্ধারণ নিয়েও জটিলতা ছিলো। কর্ণফুলী টানেলের কারণে সেখানে নকশায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। কর্ণফুলী টানেল ও শাহ্ আমানত বিমানবন্দরের সংযোগ সড়কে মিলিত হবে নির্মাণাধীন এলিভেডেট এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের শেষ প্রান্ত। সিইপিজেড থেকে আউটার রিং রোড পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে। আউটার রিং রোড প্রকল্পের আওতায় সংযোগ সড়কটি নির্মাণ করবে সিডিএ।’

মো. মাহফুজুর রহমান আরো বলেন, ‘লালখান বাজার থেকে আগ্রাবাদ বারেক বিল্ডিং অংশের কাজ শিগগিরই কাজ শুরুর কথা ছিলো কিন্তু পিসি রোড ও এক্সেস রোডের নির্মাণ কাজ এখনো শেষ হয়নি। পিসি রোড ও এক্সেস রোডের কাজ শেষ হলে এক্সপ্রেসওয়ের ঐ অংশের কাজও শুরু করা হবে। 

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বরে রোড দুটির কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে এবং আশা করছি রোডগুলো চালুর পর এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক সিভয়েসকে বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ডিজাইন অনুযায়ী পাইলিং এর চলমান কাজে বন্দরের মূল রাস্তা ব্লক হয়ে যাওয়ায় সৃষ্ট যানজটের কারণে কার্গো ট্রানজেকশনে বিঘ্ন ঘটছিলো, বন্দরের কার্যক্রমে যাতে কোনো বাধা না আসে তার জন্যেই আমরা এক্সপ্রেসওয়ের নকশায় পরিবর্তন আনার পরামর্শ দিয়েছি।’

একই প্রসঙ্গে কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের পরিচালক মো. হারুনুর রশীদের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘কিছুটা জটিলতা তৈরি হলেও এখন আর তা নেই। আমরা সমন্বিতভাবেই এ প্রকল্পের কাজ করছি। ডিজাইনে পরিবর্তনের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে এবং প্রকল্পটি যাতে সাংঘর্ষিক না হয় তার জন্যে আমরা পরিবর্তিত ডিজাইনও দিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে সল্টগোলায় বিদ্যমান রাস্তার মাঝখানে ১২ মিটার নিরাপত্তা ফেন্সিং দিয়ে ফ্লাইওভারের কাজ শুরু হয়েছে। ফেন্সিংয়ের বাইরে রাস্তা প্রশস্তকরণের পর বর্তমানে গাড়ি চলাচলের জন্য ২৫ ফুট রাস্তা রয়েছে। যা অপর্যাপ্ত এবং কোনো কোনো জায়গায় পিডিবির বৈদ্যুতিক পোল থাকায় বিদ্যমান রাস্তার প্রশস্ততা ১৯ ফুটে দাঁড়িয়েছে। ফলে দুটি ট্রেইলর চলাচল করা সম্ভব নয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে সল্টগোলা থেকে সিমেন্ট ক্রসিং অংশে কাজ শুরু হলে বন্দর অচল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

বারিক বিল্ডিং থেকে সল্টগোলা ক্রসিং অংশে ফ্লাইওভারের অ্যালাইনমেন্ট পরিবর্তিত অ্যালইনমেন্টের মতো সল্টগোলা থেকে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত অংশে ফ্লাইওভারের অ্যালাইনমেন্ট বিদ্যমান রাস্তার বাইরে স্থানান্তর করে কাজ করার অনুরোধ জানান তিনি।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ডিসেম্বরে পিসি রোড ও এক্সেস রোডের কাজ শেষ হবে। সেগুলো চালুর পর এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজ শুরু করা হবে। বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তার ডানপাশে দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ হবে। ওই অংশে বন্দরের একটি ফ্লাইওভার রয়েছে, সেটির পাশ দিয়ে যাবে এক্সপ্রেসওয়ে।

এ বিষয়ে জানতে সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ব্যস্ত আছেন, পরে কল দেওয়ার কথা বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে একাধিকবার তার মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সিভয়েস/আই

জোবায়েদ ইবনে শাহাদত

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়