Cvoice24.com


টাকার বিনিময়ে ছাড় পেল ইয়াবা ব্যবসায়ী; এলাকাবাসির ক্ষোভ

প্রকাশিত: ১৩:০৭, ৮ নভেম্বর ২০১৯
টাকার বিনিময়ে ছাড় পেল ইয়াবা ব্যবসায়ী; এলাকাবাসির ক্ষোভ

ছবি : সংগৃহীত

পরোয়ানাভূক্ত এক ইয়াবা ব্যবসায়ীকে আটক করেও পরে মোটা অংকের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে সাতকানিয়া থানার এএসআই মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে।
 
স্থানীয় ইউপি সদস্যের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনের পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয় বলেও অভিযোগ এলাকাবাসীর। তবে এলাকাবাসি সত্যতা খুঁজে পাওয়ার কথা জানালেও, পুলিশের তদন্তকারী দল বলছে ঘটনাস্থলে গিয়ে কোনো সত্যতা খুঁজে পাননি তারা। ফলে এলাকায় দেখা দিয়েছে চাপা ক্ষোভ আর হতাশা।
 
এদিকে পুলিশের তদন্তদলের কাছে সাক্ষ্য দেয়ায় শাহ আলম (৪৫) নামের এক ব্যক্তিকে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠেছে আসামি পক্ষের বিরুদ্ধে। পরে আহতবস্থায় তাকে স্থানীয়রা দোহাজারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। গত মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটে।

এলাকাবাসি সুত্রে জানা যায়, গত ৪ নভেম্বর (সোমবার) বিকেলে উপজেলাটির খাগরিয়া ইউনিয়নের মোহাম্মদখালী এলাকা থেকে মোহাম্মদ ছাদেক (৪৫) নামের ওই ইয়াবা ব্যবসায়ীকে আটকের পর ছেড়ে দেন এএসআই মোবারক হোসেন।

আটক ছাদেক মোহাম্মদখালী ৪নং ওয়ার্ডের আব্দুল গফুরের ছেলে। তাকে ধরতে এএসআই মোবারক হোসেন থানার কন্সটেবল ও মো. ফোরকান নামের এক সোর্সকে সাথে নেন। কিন্তু পুলিশ আসার খবর পেয়ে ছাদেক খাগরিয়ার শঙ্খ চরে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে একপর্যায়ে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে তাকে আটক করতে সক্ষম হয়।

এসময় আটক ছাদেককে নুরু মার্কেট এলাকায় নিয়ে আসা হলে স্থানীয় ইউপি সদস্য লেয়াকত আলী এএসআই মোবারকের সাথে কথা বলে তাকে ছাড়িয়ে নেন। কিন্তু বিষয়টি এলাকাবাসীর মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি করে। পরে তারা বিষয়টি সাতকানিয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামানকে অবহিত করেন।

এরই প্রেক্ষিতে একই দিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নির্দেশে এএসআই মোবারক কে সাথে নিয়ে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ ও এসআই মাহবুব ঘটনাস্থলে বিষয়টি সত্যতা যাচাই করতে যান। তখন এলাকাবাসীদের অনেকেই ইয়াবা ব্যবসার দায়ে আটক ছাদেককে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিয়েছে বলে মতামত দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শফিউল কবীর ও পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ বলেন, টাকা বিনিময়ের একটি অভিযোগ পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। কিন্তু এমন বিষয়ে কোনো সত্যতা পাইনি।

তবে এ বিষয়ে এলাকাবাসীরা অভিযোগ করে জানান, সত্যতা যাচাইয়ে আসা পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনার সত্যতা খুঁজে পেলেও কোনো পদক্ষেপ নেন নি। বরং ওসি ও তদন্ত ওসি সাংবাদিকদের কাছে টাকা লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

অভিযোগ অস্বীকার করে স্থানীয় ইউপি সদস্য লেয়াকত আলী বলেন, পুলিশ আসামীকে ধাওয়া দিয়ে ধরতে গেলে এলাকাবাসীরা ধারণা করেন সেখানো কোনো মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এসময় চারদিক থেকে লোকজন আসতে দেখে পুলিশ ওই আসামিকে ছেড়ে দেয়। আমাকে সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলকভাবো এখানো জড়ানো হচ্ছে।

এলাকাবাসী এ এস আই মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনে আরও জানান, তার সোর্স হিসেবে পরিচিত মো. ফোরকান জামায়াত শিবিরের নাশকতা মামলার আসামী। এছাড়া ফোরকানসহ খাগরিয়া ৩ নং ওয়ার্ডের চৌকিদার জালাল আহমেদ তার অর্থ যোগানদাতা। তারা দুইজন কালিয়াইশ, ধর্মপুর ও খাগরিয়া এলাকার ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসিক চাঁদা আদায় করে মোবারকের হাতে তুলে দেন।
 
এলাকা সূত্রে আরও জানা যায়, আসামী ছাদেকের আরো ৩ ভাই রয়েছে। তারা হলেন- মো. মোস্তাক, মো. মোস্তাফিজ ও মো. মোরশেদ। এর মধ্যে মোস্তাফিজ বিয়ে করেন কক্সবাজার জেলার টেকনাফ কুতুপালং এলাকায়। একই সাথে মোরশেদ বিয়ে করেন হ্নীলা এলাকায়। তাদের সাথে রোহিঙ্গা ইয়াবা কারবারীদের সাথে পূর্ব থেকে ভালো ঘনিষ্টতা রয়েছে।

এলাকাবাসির অভিযোগ, গত ৩ মার্চ ছাদেকদের বাড়ি থেকে ইয়াবা ও নগদ অর্থসহ কয়েকজন রোহিঙ্গা নারীকে গ্রেফতার করেন এএসআই মোবারক। কিন্তু সে সময় প্রায় ১০ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করা হলেও পুলিশ মাত্র ২৮শ পিস দেখিয়েছে।

এছাড়া গত দুই মাস পূর্বে জমি সংক্রান্ত বিরোধে মোবারক পক্ষাবলম্বন করায় ক্ষতিগ্রস্থরা তার বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেন। এরই প্রেক্ষিতে মোবারক ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযোগকারী পিতা ও ছেলেকে থানায় বেধড়ক মারধর করেন। পরে ভুক্তভোগীরা তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও দায়ের করেন।

সামগ্রিক অভিযোগ গুলোর বিষয়ে সাতকানিয়া থানার এএসআই মোবারক হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাকে মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
 
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে খাগরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ আজগর চৌধুরী সূজা বলেন, এলাকায় মাদকের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করি। তবে এলাকাবাসীর মুখে শুনেছি এক ইয়াবা ব্যবসায়ীকে আটক করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। যদি এর সত্যতা পাওয়া যায়, অবশ্যই ওই পুলিশ কর্মকর্তার শাস্তি হওয়া উচিত।

-সিভয়েস/এএফ/এসসি

সাতকানিয়া প্রতিনিধি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়