Cvoice24.com


খাগড়াছড়িতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় কাজে ধীরগতি

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ৭ নভেম্বর ২০১৯
খাগড়াছড়িতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় কাজে ধীরগতি

ছবি: সিভয়েস

প্রায় সাড়ে ৫শ' কোটি টাকার ‘'তিনটি পার্বত্য জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প’-এর বাস্তবায়ন কাজে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার কারণে স্থবিরতা নেমে এসেছে।

২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের কাজ শেষের মেয়াদ রয়েছে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু ২ বছর ১০ মাস সময় পার হলেও এখনো পড়ে আছে অধিকাংশ কাজ। এদিকে যতটুকু কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে সেখানেও রয়েছে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের জন্য স্থাপিত ১৫ মিটারের বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো গভীরতায় ৮ ফুট বোরিং করার কথা থাকলেও সেখানে করা হচ্ছে ৫-৬ ফুট। খুঁটির গায়ে দেওয়া বোরিং চিহ্ন থেকে দুই-আড়াই ফুট কম বোরিং করা হচ্ছে। ফলে ঝড়-তুফানে বৈদ্যুতিক খুঁটি হেলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। খুঁটির নিচে প্লেট দেওয়ার নীতিমালা থাকলেও সব খুঁটির নিচে প্লেট দেওয়া হচ্ছে না। যেকোন খুঁটি একবার দেবে গেলে বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে যাওয়ার যেতে পারে।

অভিযোগ উঠেছে, লাইন সরু না রেখে কি. মি. বাড়ানোর জন্য অযৌক্তিকভাবে বিনা প্রয়োজনে এক একটি প্রধান সড়কে শতাধিক বার ৩৩ হাজার ভোল্টের বৈদ্যুতিক লাইন এপার ওপার করা হচ্ছে।

সরেজমিনে খাগড়াছড়ি জেলার সবকটি উপজেলার প্রধান সড়কের পাশেই নজরে পড়বে এই খুঁটিগুলো। শুধু দীঘিনালার মধ্য বোয়ালখালী থেকে দাঙ্গা বাজার পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার সড়কে ৭০ বার সড়কের এপার ওপার করা হয়েছে। যেখানে পুরাতন লাইন সড়কের এপার ওপার করা হয়েছিল মাত্র ৫ বার । ৩৩ কেভি লাইন সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াা সড়ক অতিক্রম না করার বিধান রয়েছে। কিন্তু খাগড়াছড়িতে রহস্যজনক কারণে তা মানা হয়নি। যার ফলে জেলার সবকটি প্রধান সড়কে বৈদ্যুতিক নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।

এদিকে প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর ১০ মাস শেষ হয়েছে। বাকি রয়েছে আর মাত্র ২ মাস। এই দীর্ঘ সময় পার হলেও কিছু বৈদ্যুতিক খুঁটি বোরিং আর কিছু ইনসুলেটরের কাজ ছাড়া আর কোন কাজ শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। 

এখনও অধিকাংশ কাজ বাকি পড়ে আছে। এর মধ্যে খুঁটি বোরিং, ইনসুলেটর, তার সংযোজন, ফিটিং, আর্থিং তার, টানা ফুলবেন, ক্রস আর্ম, ৩ ফেইজের ৮৫ টি ট্রান্সফরমার ও সিংগেল ফেইজের ৭২ টি ট্রান্সফরমার স্থাপনের কাজ শুরুই হয়নি।

সরেজমিনে প্রকল্প কাজে নিয়োজিত মাঝি পরিচয়দানকারী আরিফ বলেন, ৮ ফুট নয়, অফিস থেকে বলা হয়েছে ৭ ফুট করে গর্ত (বোরিং) করতে। তবে আমরা অনেকসময় ৭ ফুট গর্ত করতে পারি না ৬ ফুট করেই গর্ত করতে হয়। জায়গা বুঝে কখনো কখনো আরও কম গভীরতার (বোরিং) গর্তও করতে হয়।

তিনি জানান, খুঁটিতে কালো রঙয়ের আস্তরণ দিয়ে যে দাগ দেয়া আছে, সে দাগ সমান গর্ত করার নিয়ম। সেটা হল ৮ফুট। খুঁটির নিচে প্লেট দিতে গেলে অনেক বড় গর্ত করতে হয়, অনেক সময়ের প্রয়োজন। আমরা সব গর্তে প্লেট দেই না"।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন প্রকল্পের খাগড়াছড়ি জেলার মাঠ তত্ত্বাবধায়ক যতী মানিক চাকমা বলেন, আমি মানুষ একজন। সব সময় সব সাইটে থাকতে পারি না। কোথায় কি অনিয়ম হচ্ছে না হচ্ছে তা তথ্য পেলে আমরা সেটা দেখব। পিডিবি থেকে আমরা যতটুকু মালামাল পেয়েছি, আমরা ততটুকু কাজ করেছি। পিডিবি সময়মত আমাদের মালামাল দিতে পারেনি। এছাড়াও বড় বড় ঠিকাদাররা এখানে কখনো আসেন না। উনারা সাব কন্ট্রাক দেয়, সাব কন্ট্রাাকটর আবার সাব কন্ট্রাক দেয়। কোন অনিয়ম হওয়ার তো কথা না। ভাল করে কাজ করতে সবাইকে বলা আছে।

খাগড়াছড়ি পিডিবি নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল উদ্দিন বলেন, বিদ্যুৎ উন্নয়ন প্রকল্প কাজ শেষ করে আমাদের বুঝিয়ে দিলে আমরা সেটা বুঝে নেব। অবশ্যই কাজ ভালভাবে করতে হবে এবং নীতিমালা দেখে কাজ করতে হবে। কোথাও কমবেশি করা যাবে না। তারা যদি কাজে কোন অনিয়ম বা গাফিলতি করে সেটা আমাদের জন্য ক্ষতিকর। আমরা চাই তারা আমাদের ভালমত কাজ বুঝিয়ে দিক, অনিয়ম হলে আমরা কাজ বুঝে নেবো না।

'তিনটি পার্বত্য জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পে'র খাগড়াছড়ি জেলার দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ সাকিব হোসেন কাজে ধীরগতির বিষয়ে বলেন, মালামাল সময়মত না পাওয়ায় কাজে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে। তবুও আমরা অনেক কাজ শেষ করতে পেরেছি। এই মেয়াদে কাজ শেষ না হলে আরও এক বছরের জন্য কাজের সময়ের মেয়াদ বাড়ানো হবে।

সব খুঁটির জন্য ৮ ফুট করে গর্ত করতে হবে, খুঁটির নিচে অবশ্যই প্লেট দিয়ে তা বোরিং করতে হবে। বিনা কারণে লাইন এপার-ওপার করা যাবে না। কাজে কোন অনিয়ম সহ্য করা হবে না। আমরা অবশ্যই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।

সিভয়েস/আই
 

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়