Cvoice24.com


ক্ষতি পোষানোর আশায় মৎস্যজীবীরা, ৬ দিনেই ধরা ১৫১ মেট্রিক টন মাছ

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৬ নভেম্বর ২০১৯
ক্ষতি পোষানোর আশায় মৎস্যজীবীরা, ৬ দিনেই ধরা ১৫১ মেট্রিক টন মাছ

ছবি: সিভয়েস

মৎস্য সম্পদ রক্ষার্থে ২২ (৯ থেকে ৩০ অক্টোবর) দিন নিষেধাজ্ঞা শেষে পুনরায় সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ সহ নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। বন্ধ শেষে মাত্র ৬ দিনে ধরা পড়েছে ১৫১ মেট্রিক টন সামুদ্রিক মাছ। যা গত বছরের তুলনায় ৯৪ মেট্রিকটন বেশি। আর ওখান থেকেই ২০ টন বিদেশে যাচ্ছে বলে জানান মদস্য অবতরণ কেন্দ্র। 

সমুদ্রে প্রচুর মাছ পাওয়ায় আনন্দিত দীর্ঘদিন কষ্টে থাকা জেলে, বোটমালিকসহ মৎস্য শিল্পের সাথে জড়িতরা। সাথে মাছের দাম হাতের নাগালে থাকায় খুশি ক্রেতারা।

মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কদিন আগেও নীরব-নিস্তব্ধ থাকা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিরে পেয়েছে প্রাণ চাঞ্চলতা। প্রায় কয়েক হাজার মানুষের ব্যস্ত সময় কাটছে ট্রলার থেকে মাছ নামানো, ঝুঁড়ি নিয়ে একজায়গা থেকে অন্যজায়গায় মাছ সরানো, মাছের স্তূপ করে ব্যবসায়ীদের দাম-দর হাঁকানো, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মাছ পাঠাতে ট্রাকে মাছ বোঝাই, বরফ দিয়ে পেকিটিং করা সহ নানা কাজে।

জেলেদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম জানান, যে ২২ দিন মাছ ধরা বন্ধ ছিল সেই দিনগুলো ছিল আমার কাছে ২২ বছরের সমান। এমনিতে আমারা কোম্পানির কাছ থেকে নেওয়া ঋণের জালে আটকা পড়েছি। তার মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত ২০ কেজি চালও পাইনি।  বন্ধ শেষে সাগরে প্রচুর মাছ ধরা পড়ছে। আর এভাবে মাছ পড়লে আমরা ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারব।

ফিশারিঘাটে মাছ কিনতে আসা রফিকুল ইসলাম জানান, মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে দেওয়ার ফিশারি ঘাটে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশসহ বিভিন্ন মাছ আসছে। দামও সহনীয়। তাই বেশ কিছু মাছ কিনে নিলাম।

ট্রলার মালিক ফরিদুল ইসলাম জানান, বর্তমান সময়ে একটি ট্রলার সাগরে পাঠাতে খরচ হয় দুই থেকে তিন লাখ টাকা। অনেক সময় সাগরে মাছ পাওয়া যায়, আবার অনেক সময় পাওয়া যায় না। বন্ধ শেষে এখন প্রচুর মাছ পাওয়া যাচ্ছে।

মৎস্য সম্পদ রক্ষার্থে সরকারের পদক্ষেপকে ধন্যবাদ জানিয়ে কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি ও কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম চিশতি জানান, বন্ধের দিনগুলোতে মৎস্য শিল্পের সাথে জড়িতদের খুবই কষ্টে দিন কাটে। ওই সময়টাতে তাদেরকে যেন সরকারের সহযোগিতা নিশ্চিত করা হয়।

মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রর মার্কেটিং অফিসার দেলোয়ার হোছেন জানান,  ২২ দিন মাছ শিকার বন্ধ থাকায় মৎস্য আহরণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ৩১ অক্টোবর ফিশারি ঘাটে লেন্ডিং হয়েছে ৬ টন মাছ, ১ অক্টোবর ১১ টন, ২ তারিখে ২৫ টন, ৩ তারিখে ৫০ টন। এভাবে দিন দিন মাছের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকছে।

কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইসানুল হক জানান, নিষেধাজ্ঞা শেষে গত ৫ দিনে ইলিশ ও রূপচাঁদাসহ ১৫১ মেট্রিক টন সামুদ্রিক মাছ আহরণ হয়েছে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে। সেই জায়গায় গত বছর (২০১৮ সালে) মাছ আহরণ হয়েছিল মাত্র ৫৭ মেট্রিকটন। হিসাব করে দেখা যায় এ বছর ৯৪ মেট্রিকটন মাছ বেশি পাওয়া গেছে। তার মধ্যে শুধু ইলিশই হচ্ছে ২৮ মেট্রিক টন ও রূপচাঁদা ১৩ মেট্রিক টন। বাকিগুলো অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ। 

সমুদ্রেপ্রাপ্ত এসব মাছ থেকে দেশের চাহিদা মিটিয়ে ২০ মেট্রিক টন মাছ বিদেশে রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। সুতরাং প্রতিবছর এইভাবে ২২ দিন মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করলে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধি পাবে।

সিভয়েস/আই

ওমর ফারুক হিরু

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়