Cvoice24.com


চমেকে 'গৃহের আলো'র নতুন উদ্যোগ,অজ্ঞাত রোগীদের মিলবে আশ্রয়

প্রকাশিত: ১০:২৭, ৩ নভেম্বর ২০১৯
চমেকে 'গৃহের আলো'র নতুন উদ্যোগ,অজ্ঞাত রোগীদের মিলবে আশ্রয়

ছবি : সিভয়েস

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বজনহীন অজ্ঞাত রোগীরা চিকিৎসা শেষে আশ্রয় পাবেন। অজ্ঞাত অনেক রোগী থাকে, চিকিৎসা শেষ হওয়ার পর তারা কোথায় যাবে তা নিয়ে চিন্তিত থাকেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রায় সময় অজ্ঞাত রোগীরা  চিকিৎসা পরবর্তী তাদের রাস্তার আশেপাশে পরে থাকতে দেখা যায়। এছাড়া অনেকে চিকিৎসা করার পর পুনারায় আগের অবস্থানে চলে যায়।

আগে অজ্ঞাত রোগীদের ওষুধ, অস্ত্রোপচারের জন্য সার্জিক্যাল আইটেম, নতুন জামা-কাপড়, বিশুদ্ধ পানি দেয়ায় হলেও এবার অজ্ঞাত রোগীদের জন্য বাসস্থান তৈরি করার পরিকল্পণা করতে যাচ্ছে 'অজ্ঞাত রোগীদের বন্ধু' হিসেবে পরিচিত সাইফুল ইসলাম নেছার।

নেছার পেশায় একজন প্রকৌশলী। গত বছর তার হাত ধরেই দেশে এই প্রথমবারের মতো অজ্ঞাত রোগীদের চিকিৎসার জন্য 'অজ্ঞাত রোগী সেল' চালু করা হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে। অজ্ঞাত রোগীদের নিয়ে একযুগ ধরে কাজ করা সাইফুল ইসলাম নেসারের ব্যক্তিগত উদ্যোগে সেবাটির নাম দেওয়া হয়েছে  "গৃহের আলো"।

প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম নেছার বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে অজ্ঞাত রোগীদের ওষুধ অস্ত্রোপচারের জন্য সার্জিক্যাল আইটেম, নতুন জামা-কাপড়, বিশুদ্ধ পানি, অজ্ঞাত রোগীদের চেনার স্বার্থে হালকা কমলা রংয়ের বিশেষ পোশাক দেওয়া হতো। এখন ওদের জন্য নতুন করে বাসস্থান তৈরি করার পরিকল্পনা করছি। অজ্ঞাত রোগীদের জন্য যদি একটি বাসস্থান করা যায় তাহলে ওদের জন্য অনেক সুবিধা হবে।

আগে চিকিৎসা শেষ হওয়ার পর অজ্ঞাত রোগীরা কোথায় যাবে তা নিয়ে চিন্তিত থাকতো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আমারা যদি নতুন করে বাসস্থান তৈরি করতে পারি তাহলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আর চিন্তা করতে হবে না। নতুন বাসস্থানের জন্য চমেক হাসপাতালের আশেপাশে জিইসি চকবাজার এলাকায়  ভাড়া বাসা অথবা পরিত্যক্ত বাড়ির জন্য আমরা খোঁজ লাগিয়েছি। যদি পেয়ে যাই তাহলে স্বজনহীন রোগীরা অনেক বেশি উপকৃত হবেন।

প্রসঙ্গত, দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে সাইফুল ইসলাম নেছার চমেক হাসপাতালে অজ্ঞাত রোগীদের সেবা দিয়ে আসছে। তিনি নিজের পকেটের টাকায় বা পৃষ্ঠপোষক জোগাড় করে এ কাজ করছে। চিকিৎসা শেষে ঠিকানা বের করে অনেককে বাড়িও পৌঁছে দেন।

সাইফুলের দেয়া তথ্যমতে, ২০১৬ সালে চমেক হাসপাতালে অজ্ঞাত রোগী ভর্তি হয়েছিল ৯৩ জন, তন্মধ্যে ২৬ জন বাড়ি ফিরেছেন। মারা গেছেন ১৭ জন অজ্ঞাত রোগী। ২০১৭ সালে ভর্তি হওয়া ৫৭ জন অজ্ঞাত রোগী মধ্যে ৯ জন মারা গেছেন। স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে ৯ জনকে।২০১৮ সালে ভর্তি হওয়া ৬৩ জন অজ্ঞাত রোগী ও স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে ২৪  জনকে। ২০১৮ সালে ৬৩ জন অজ্ঞাত রোগী সেবা নিয়েছে।স্বজনের কাছে ফিরে গিয়েছে ২৪ জন। চলতি বছর অজ্ঞাত ৬০ জনকে সেবা দেয়া হয়েছে। মারা গেছে ১ জন। স্বজনের কাছে ফিরে পেয়েছে ২২ জন।

সাইফুল ইসলাম নেছার ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া পৌরসভার হিছাছড়া গ্রামের মৃত শামসুল হকের ছেলে। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ। ২০১২ সালে ফেনী পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা পাস করে। বিনা চিকিৎসায় বাবার মৃত্যুর ঘটনা থেকে এ কাজে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন নেসার।

নেছার বলেন, ২০০৭ সালে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান পিতা শামসুল হক। পারিবারিক আর্থিক অসচ্ছলতায় তার যথাযথ চিকিৎসা করাতে পারিনি। চোখের সামনে বাবাকে চিকিৎসার অভাবে ছটফট করতে দেখেছি। নিয়ে যেতে পারিনি কোনো ভালো হাসপাতালে। কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা দিতে না পেরে বাড়ির অদূরে গিয়ে নীরবে কেঁদেছি। তখন থেকেই সংকল্প করি জীবনে কখনো আর্থিক রোজগারের সুযোগ হলে অসহায় রোগীর জন্য নিজের আয়ের একটি অংশ ব্যয় করব।

বাবার মৃত্যুর পর থেকে তিনি অজ্ঞাত রোগী সেবায় জড়িয়ে পড়েন। এমনকি লেখাপড়া চলাকালীন সময়েও তিনি হাসপাতালে অজ্ঞাত রোগীর সেবা করেছেন। বাবার চিকিৎসাকালীন সময়ে নিজের এবং পরিবারের এই অসহায়ত্ব আজো কাঁদায় আমাকে। তাই চাকরি শেষে ছুটে আসেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তিকৃত অজ্ঞাত রোগীর খবরাখবর নিই।

সিভয়েস/এমআই/এএইচ

মিনহাজুল ইসলাম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়