Cvoice24.com


খ্যাতির বিড়ম্বনায় সরকারি কমার্স কলেজ

প্রকাশিত: ১৪:২৭, ২৩ অক্টোবর ২০১৯
খ্যাতির বিড়ম্বনায় সরকারি কমার্স কলেজ

ছবি: আকমাল হোসেন

খ্যাতির বিড়ম্বনায় যেন কাটছে না চট্টগ্রাম কর্মাস কলেজের সংকট ! বন্দর নগরী চট্টগ্রাম। সবচেয়ে বেশি পরিচিত দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে। বাণিজ্যিক এ রাজধানীতে বাণিজ্য শিক্ষা প্রসারে জেলার একমাত্র সরকারি বিশেষায়িত কলেজ চট্টগ্রাম সরকারি কর্মাস কলেজ। শুধুমাত্র বাণিজ্য শিক্ষার প্রসারের জন্য ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময়ে কলকাতার গভর্নমেন্ট কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউটের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয় বিশেষায়িত এ কলেজ। এ কলেজটি ভরপুর শিল্প, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যে। সর্বাধিক বিশেষায়িত প্রাচীন এ কলেজটির আভিজাত্যর সাথে রয়েছে অনেক সুখ্যাতি ।
খ্যাতির বিড়ম্বনায় কলেজ !

খ্যাতিই যেন বিড়ম্বনা হয়ে দাঁড়িয়েছে এ কলেজের। বাণিজ্য বিভাগে বিশেষায়িত এ কলেজটিতে দু’বছর আগে স্নাতক পর্যায়ে বাংলা ও ইংরেজী বিভাগ চালু করে ভাটা পড়ে আভিজাত্য। তবে হুটহাট সিন্ধান্তে বিভাগগুলো চালু করা হলেও এখনো মিলেনি বিভাগগুলোর শিক্ষক! বিভাগগুলোতে নিয়োগের জন্য সৃষ্টি হয়নি কোন পদও। উচ্চ মাধ্যমিকে নিয়োগ দেওয়া বাংলা বিভাগের ২জন এবং ইংরেজী বিভাগের ৩জন শিক্ষক চালিয়ে যাচ্ছেন অর্নাস বিভাগের শ্রেণি পাঠক্রমের কাজ ! একই সময়ে চালু হওয়া মার্কেটিং এবং ফিন্যান্স বিভাগেও সৃষ্টি হয়নি শিক্ষক পদ সংখ্যা। অন্যান্য বিভাগের শিক্ষকরাই নিচ্ছেন বিভাগ দু’টির ক্লাস। ফলে সৃষ্ট বিভাগ দুটির শিক্ষার্থীর তালিকা প্রণয়ন করা হলেও শিক্ষক তালিকায় নেই বিভাগ দুটির নাম। বিভাগগুলোর শ্রেণি পাঠক্রমের গুরু দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন হিসাববিজ্ঞান এবং ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষকরা। অতিরিক্ত বিভাগের চাপে পড়ে মার্কেটিং বিভাগের ক্লাস নেন হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকরা এবং ফিন্যান্স বিভগের ক্লাস নিচ্ছেন ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষকরা।

 শিক্ষক সংকটে জর্জরিত প্রাচীন বিভাগগুলোও। শুধু মাত্র দু’বছর আগে সৃষ্টি হওয়া বিভাগগুলো নয়, কলেজটির অন্যান্য প্রাচীন বিভাগগুলোও জরাজীর্ণ শিক্ষক সংকটে। উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক, স্নাতকোত্তর, বিবিএস (পাস কোর্স) পর্যায়ে কলেজটির ৭ টি বিভাগে শিক্ষর্থী সংখ্যা রয়েছে প্রায় ৮ হাজার। অথচ শিক্ষক রয়েছে মাত্র ২৬জন। অর্থাৎ ২৯৮ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে রয়েছে মাত্র একজন শিক্ষক। বছরান্তে শিক্ষর্থী এবং বিভাগের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও নেই কোন শিক্ষক, সৃষ্টি হয়নি কোন পদও। 

 দু’বছর আগে কলেজটির নতুন ৪টি বিভাগ সৃষ্টি হলেও এ বিভাগগুলোর শিক্ষক পদসংখ্যা সৃষ্টি না হওয়া এবং বিভাগ অনুসারে পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকার বিষয়ে অধ্যক্ষ সাগর কান্তি দে সিভয়েসকে বলেন, শিক্ষক সংকটের কারণে নিয়মিত ক্লাস গুলো নেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। তবে সৃষ্ট প্রায় সব পদে নিয়োগকৃত শিক্ষক রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষর্থী অনুপাতে শিক্ষকের সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ার কারণে টানা ক্লাস নেওয়া দুঃসাধ্য হয়ে উঠছে শিক্ষদের পক্ষে। 

 বিশেষায়িত এ কলেজটির উচ্চ মাধ্যমিকের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ১৭’শ জন। ১০টি শাখায় বিভক্ত করে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঠক্রমের কার্যক্রম। কলেজটিতে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে বিবিএস (পাস কোর্স) পর্যায়ে। এ পর্যায়ে ১ম, ২য় এবং ৩য় বিভাগে রয়েছে প্রায় ২৫’শ শিক্ষার্থী। কলেজটির স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে হিসাববিজ্ঞান, অর্থনীতি, ব্যবস্থাপনা, ফিন্যান্স, মার্কেটিং, ইংরেজী এবং বাংলা বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায ২ হাজার। স্নাতকোত্তর পর্বে হিসাববিজ্ঞান এবং ব্যবস্থাপনা বিভাগে রয়েছে প্রায় ১৬’শ শিক্ষার্থী। তবে কলেজটির প্রতিটি বিভাগ বিশেষভাবে বিন্যস্ত করা হলেও হয়নি শিক্ষকদের পদবিন্যাস। সরকারি অবকাঠামো অনুযায়ী উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে আইসিটি (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) বিভাগে ১জন মাত্র শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হলেও পদায়ন হয়নি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে খন্ডকালীন শিক্ষকই ভরসা কলেজ কর্তৃপক্ষের। 

 ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের তালিকায় বেতাল

 কলেজটির রয়েছে সুবৃহৎ ক্যাম্পাস এবং সুদীর্ঘ শিক্ষার্থী তালিকা। তবে তার সাথে বেমানান কলেজটির ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মকর্তাদের সংখ্যা। কলেজটির ৩য় শ্রেণির কর্মচারীর তালিকায় সরকারিভাবে নিয়োগকৃত ৯টি পদের মধ্যে ৪টিই শূন্য। শূণ্যস্থান পূরণের চেষ্টায় বেসরকারিভাবে নিয়োগ রয়েছেন ৫জন। সংকটের চিত্র ঘনীভূত হয়ে আরোও জটিল রূপ ধারণ করেছে ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের তালিকায়। সুবৃহৎ ক্যাম্পাসটির সরকারি নিয়োগে পরিচ্ছন কর্মী রয়েছে ১জন। তবে পরিচ্ছনতার এ কাজ ১জনের পক্ষে দুরুহ হওয়ার কারণে বেসরকারিভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৩জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী। এ তালিকার বিভিন্ন পদে সরকারিভাবে নিয়োগ রয়েছে ১১জন। তবে সরকারি পদানুসারে ১১ জন নিয়ে বিশাল এ কলেজটির কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব না হওয়ায় বিভিন্ন পদে বেসরকারিভাবে যুক্ত করা হয়েছে ২৭ জন । কলেজ সংশ্লিষ্ট এক সিনিয়র কর্মচারী জানান, কালের পরিক্রমায় শিক্ষার্থীর পাশাপাশি বেড়েছে কলেজের বিভিন্ন পর্যায়ের কাজও। কিন্তু বহু দিন ধরে নিয়োগ নেই ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারী পর্যায়ে। ফলশ্রুতিতে কলেজের কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি না হওয়ার লক্ষ্যে অনেকটা বাধ্য হয়েই দেওয়া হচ্ছে বেসরকারি নিয়োগ। কিন্তু বেসরকারি নিয়োগে যথার্থ যাচাই বাছাই এর সুযোগ না থাকার কারণে অসন্তোষ রয়েছে কাজের মান নিয়ে। 

এত সংকটের জালে আটকা পড়ে দিন পার করলেও চট্টগ্রাম কর্মাস কলেজের নব নিযুক্ত অধ্যক্ষ সাগর কান্তি দে শুনালেন আশার বাণী। পাঠদান কার্যক্রমে শিক্ষকরা শতভাগ আন্তরিক। এছাড়াও পদ সৃষ্টির জন্য কলেজের পক্ষ থেকে বারবার আবেদন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি সিভয়েসেকে বলেন, পদ সৃষ্টির জ্ন্য রয়েছে সুনিদিষ্ট কাঠামো ও নীতিমালা। যার জন্য একটি দীর্ঘতম প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। সরকারের একাধিক মন্ত্রণালয় এ কারযকম্রের সাথে যুক্ত। তবে আশা করছি শীঘ্রই নতুন পদ সৃষ্টির পর চূড়ান্ত হবে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং সঙ্গে জনবল সংকট সমাধানের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

সিভয়েস/এএস

আসিফ আহমেদ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়