Cvoice24.com


অরক্ষিত রেলের লেভেল ক্রসিং, চট্টগ্রামে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল

প্রকাশিত: ১১:১৮, ১৫ অক্টোবর ২০১৯
অরক্ষিত রেলের লেভেল ক্রসিং, চট্টগ্রামে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল

ছবি : আকমাল হোসেন

সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী হাতের বাম দিকে গাড়ি চলাচলের বিধান থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না। হাতের বাম দিকে গাড়ি না চালিয়ে উল্টোপথে গাড়ি চালানোর ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। বিশেষ করে এ নিয়ম একদমই মানা হচ্ছে না রেল লাইনের লেভেল ক্রসিং এলাকাগুলোতে। এসব বিধান না মানার কারণে কখনো বাসের সঙ্গে, কখনো মাইক্রোসের সঙ্গে আবার কখনও রিক্সার সঙ্গে ট্রেনের সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। রেলওয়ে লেভেল ক্রসিং এলাকায় প্রায়সময় দুর্ঘটনা ঘটলেও এসব ক্রসিং নিরাপদ করতে কর্তৃপক্ষের নেই কোনো উদ্যোগ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লেভেল ক্রসিংগুলোতে প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগসহ আধুনিক সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু না করলে প্রাণহানির মতো ঘটনা আরো বাড়বে। পাশাপাশি তারা প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগের পাশাপাশি দুর্ঘটনা এড়াতে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে প্রচারণা চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

চট্টগ্রামের ঝাউতলা, কদমতলী ও ইস্পাহানিসহ অধিকাংশ লেভেল ক্রসিংয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ট্রেন আসার কয়েক মিনিট আগে রেলের গেটম্যান সিগন্যাল দিয়ে রাস্তার দু’পাশ আটকে দিলেও অধিকাংশ যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে (উল্টো পথে) রেললাইনের উপর দিয়ে পারাপার করছে। আবার অনেককেই পায়ে হেঁটে পারাপার করতে দেখা গেছে। তবে অধিকাংশ ক্রসিংয়ে দেখা যায়নি কোনো গেটম্যান। আবার দু’একটি ক্রসিংয়ে মাত্র একজন গেটম্যান পতাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে তাদের নির্দেশনাগুলো কেউ মানছে না।

বাংলাদেশ রেল বিভাগের তথ্য মতে- স্পেশাল, এ, বি ও সি চার ক্যাটাগরির লেভেল ক্রসিং রয়েছে। সাধারণ রেল জাংশন, বিভাগীয় শহর ও বড় শহরের ভেতরের লেভেল ক্রসিংগুলো স্পেশাল এবং এ ক্যাটাগরির। স্পেশাল ক্যাটাগরির লেভেল ক্রসিংগুলোতে ২৪ ঘন্টাই তিনজন গেটম্যান পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করেন। এ ক্যাটাগরির লেভেল ক্রসিংয়ে থাকেন ২জন করে গেট ম্যান, বি ক্যাটাগরির লেভেল ক্রসিংয়ে কোথাও গেটম্যান আছেন আবার কোথাও নেই। কোন গেটে শিকল আছে আবার কোনটাতে তাও নেই।
সি ক্যাটাগরির লেভেল ক্রসিং কার্যত পুরোটাই অরক্ষিত। এতে শিকল, লিভার বা গেটম্যান কিছুই নেই।
 
রেলের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, রেলের পূর্বাঞ্চলে লেভেল ক্রসিং রয়েছে ১ হাজার ২৩০টি। এরমধ্যে ৫১১টি বৈধ হলেও অবৈধ প্রায় দেড়গুণ। এরমধ্যে চট্টগ্রাম রেলওয়ে এলাকায় ২০৫টি ক্রসিংয়ের মধ্যে ১১০টি বৈধ হলেও অবৈধ ক্রসিং রয়েছে ৯৫টি।

বর্তমানে গেট ব্যারিয়ার আছে মাত্র ২৫৭টি ক্রসিংয়ে। আর ব্যারিয়ার ছাড়া ক্রসিং রয়েছে ৯৩৩টি। এছাড়া ২২৯টি গেটে গেটম্যান থাকলেও গেটম্যান ছাড়া ক্রসিং রয়েছে ৯৩১টি।

হাটহাজারী থেকে নাজিরহাট পর্যন্ত ১৬কিলোমিটার রেলপথে ১৫ থেকে ২০টি বৈধ-অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে মাত্র ২টিতে জনবল রয়েছে। তাও গত কয়েক মাস আগে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বৈধ লেভেল ক্রসিংগুলি হলো হাটহাজারী সদরের হাসপাতাল গেট, মীরের হাট, কাটিরহাট স্টেশন সংলগ্ন ও জাব্বার হাট। হাসপাতাল গেট ও কাটিরহাট ছাড়া বাকি গেটগুলোতে কোনো জনবল নেই। হাটহাজারী থেকে নাজিরহাট লাইনে দৈনিক ৮টি ট্রেন আসা-যাওয়া করে।

স্থানীয়দের মতে, লাইনের বেশিরভাগ লেভেল ক্রসিংয়ের আশপাশে রয়েছে অবৈধ স্থাপনা। ফলে ট্রেন আসছে কিনা তা দেখা বা টের পাওয়া যায় না।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে চট্টগ্রাম স্টেশনের দূরত্ব সাড়ে ২০ কিলোমিটার। দীর্ঘ এই রেললাইনে ২১টি পয়েন্টে লেভল ক্রসিং থাকলেও সবগুলোতে নেই গেটম্যান। ফলে যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। লেভেল ক্রসিংগুলো হল বটতলী, দেওয়ানহাট ঝাউতলা বাজার, বিজিএমইএর সামনে (জিইসি টু একে খান রুট), ষোলশহর ২নম্বর গেট, ষোলশহর, হামজারবাগ, আতুরার ডিপু, আমিন জুটমিল, অক্সিজেন, ওয়াপদা গেট, বালুছড়া, নতুনপাড়া, বড়দিঘির পাড়, চৌধুরীহাট, ফতেয়াবাদ, ছড়ারকুল, নন্দীরহাট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এক, দুই এবং তিন নম্বর রুট। এসব লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে বড়দিঘির পাড়, ছড়ারকুল, নন্দীরহাট ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের এক, দুই এবং তিন নম্বর রুটে অবস্থিত লেভেল ক্রসিংয়ে কোনো গেটম্যান নেই।

জানা গেছে, চট্টগ্রামে বিগত ৪ বছরে দ্রুত ক্রসিং পার হতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুবরণ করেন ১ হাজার ৬৯ জন যার মধ্যে গত বছরই মৃত্যুবরণ করেন ৩৩৭ জন। অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটে গেটম্যান ও লিভার না থাকার করণে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. বোরহান উদ্দিন পর্যাপ্ত লোকবল সংকটের কথা স্বীকার করে সিভয়েসকে বলেন, রেল দুর্ঘটনা ঠেকাতে রেলওয়ে ও পুলিশের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়। প্রচারণা চালানো হয়। রেলওয়ে আইন অনুযায়ী, রেলপথের দু'পাশে ১০ ফুট করে ২০ ফুট এলাকায় চলাচল আইনত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ওই সীমানার ভেতর কেউ প্রবেশ করলে তাকে গ্রেফতারের বিধান রয়েছে। রেল পুলিশ মানুষকে সচেতন করার জন্য প্রচারণা চালালেও এ বিষয়ে মানুষের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

-সিভয়েস/জেআইএস/এএইচ

জোবায়েদ ইবনে শাহাদত

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়