Cvoice24.com


চমেকসু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই ৭ বছর, বিনা ভোটে ছাত্র সংসদ

প্রকাশিত: ০৭:০৩, ১৪ অক্টোবর ২০১৯
চমেকসু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই ৭ বছর, বিনা ভোটে ছাত্র সংসদ

ছবি: সিভয়েস

দেশে সরকারি ও বেসরকারি মিলে অর্ধশতাধিক মেডিকেল কলেজ রয়েছে। কিন্তু কোনোটিতেই নেই বৈধ কোনো ছাত্র সংসদ। এ ক্ষেত্রে মেডিকেল কলেজ (চমেক) ব্যতিক্রম, এখানে রয়েছে দেশের একমাত্র ছাত্র সংসদ। তবে এই ছাত্র সংসদের ৭ বছর ধরে বিনা ভোটে প্যানেল নির্বাচিত হচ্ছে। চমেক ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ২০টি পদের সবকটাতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রতিবার জিতে যাচ্ছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মনোনীত  প্রার্থীরা। 

সর্বশেষ ২০১১-২০১২ সালের দিকে ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র শিবির ও স্বতন্ত্র একজন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল।২০১২-২০১৩ সেশনে ছাত্র শিবির নির্বাচনে প্যানেল জমা দিলেও ছাত্রলীগের হুমকিল মুখে প্রত্যাহার করে নিয়েছিল।  

বেশ কিছু শিক্ষার্থীর অভিযোগ, ছাত্রলীগের কিছু নেতার হুমকি-ধমকির কারণে প্যানেল তা দূরের কথা ভয়ে কেউ স্বতন্ত্র  প্রার্থী হয়নি। 

কাল মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) নির্বাচনের দিনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। 
গত ২০১৮ সালের ৭ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ মনোনীত পূর্ণ প্যানেল। নির্বাচনের মাধ্যমে ২০তম সহসভাপতি (ভিপি) হিসেবে মো. জামিউর রহমান আকাশ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ ছাড়া প্রো ভিপি হিসেবে সাইফুল ইসলাম মুরাদ এবং সাধারণ সম্পাদক পদে এমএ আউয়াল রাফি মনোনীত হন।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, চমেকসুর মতো প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদের নির্বাচনে  প্রতিদ্বন্দ্বিতা না হওয়া খুবই অপ্রত্যাশিত। চমেকসু নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে, সবাই অংশ নেবে- সেটাই প্রত্যাশিত।  বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার  নির্বাচন অর্থবহ হয় না। এটা নামমাত্র নির্বাচন।

চমেকসুর সাবেক জিএস ডা.ইমরানুর রহমান সনেট বলেন, সারাদেশের মত দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ সরকারপন্থি ছাত্রসংগঠনের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণে। এ কারণে অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মী কোন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে না। বিগত ৭ বছর যাবৎ ছাত্রলীগ ছাড়া অন্যরা প্যানেল জমা পর্যন্ত দিচ্ছে না।। এমনকি সাধারণ ছাত্ররা স্বতন্ত্র প্রার্থী পর্যন্ত হচ্ছে না ছাত্রলীগের ভয়ে। প্রত্যেক সংগঠনের সহাবস্থান তৈরি করে নির্বাচন হলে সেটা অর্থবহ হবে। বিগত কয়েক বছর যাবৎ যা হচ্ছে সেটা নির্বাচন নয়, তা চমেক প্রশাসনের নাটক মাত্র। 

চমেকসুতে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে ভিপি প্রার্থী মোস্তফা আনোয়ারুল আউয়াল (রাফি) বলেন, সবার অংশগ্রহণে  প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হলে ভাল লাগত। তবুও আমাদের প্যানেল সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য ইশতেহার প্রকাশ করেছে। শিক্ষার্থীদের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে সংসদ কাজ করে যাবে। ছাত্র সংসদ থাকার কারণে ইতিমধ্যে ক্যাম্পাসের অনেক পজেটিভ পরিবর্তন এসেছে। সেটার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে চাই।

চট্টগ্রাম মেডিকেল ছাত্র সংসদ নির্বাচনের নির্বাচন কমিশনার দায়িত্ব  অধ্যাপক ডা. আকরাম পারভেজ চৌধুরী বলেন, সকল নিয়ম ও ছাত্র সংসদ নির্বাচনের গঠনতন্ত্র অনুয়াযী নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচনে একটিমাত্র প্যানেল জমা পড়েছে। সেটাই  ১৫ অক্টোবর মঙ্গলবার বিজয়ী ঘোষণা হতে পারে। 

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের (চমেকসু) সভাপতি অধ্যাপক ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, দেশের একমাত্র মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদ চমেকসু। প্রতিবছর চমেকসুর ২০টি পদে নিয়মতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচিত করা হয়। চমেকসুর ভিপি ও সাধারণ সম্পাদক একাডেমিক কাউন্সিলের মেম্বার। কলেজে সংসদ থাকায় একাডেমিকসহ সার্বিক কাজ পরিচালনা করতে অনেক সুবিধা হয়।

২০১৯-২০২০ নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেল :
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, মুজিবের আর্দশে সন্ত্রাস ও মৌলবাদমুক্ত আধুনিক ও প্রগতিশীল ক্যাম্পাস গড়ার প্রত্যয়ে  ছাত্রলীগ মনোনীতরা হলেন- সহসভাপতি মোস্তফা আনোয়ারুল আউয়াল (রাফি), সাধারণ সম্পাদক প্রীতম কুমার সাহা, উপ সহসভাপতি মাসুম বিল্লাহ মাহিন, সহ সাধারণ সম্পাদক এম এ কাইয়ুম ইমন, সমাজসেবা বিভাগের সম্পাদক মিনহাজ আরমান লিখন, সিনিয়র সদস্য ইফরান চেীধুরী, জুনিয়র সদস্য হাসান রাব্বি, সাহিত্য বিভাগ সানি হাসনাইন প্রান্তিক, সিনিয়র সদস্য মুত্তাকিম চেীধুরী সিফাত, জুনিয়র সদস্য মুহাম্মদ ইফরাইন, সাংস্কৃতিক বিভাগ সম্পাদিকা সামিয়া আরশ ইরা, সিনিয়র সদস্য শাওন দত্ত, জুনিয়র সদস্য রওনক সাজিন, অন্তঃক্রীড়া ও মিলনায়তন বিভাগ সম্পাদক মুঈদ সাকিব, সহ সম্পাদিকা ফারাহ নানজিবা ইয়াকা, সিনিয়র সদস্য সাদ বিন মেহের ও জুনিয়র সদস্য আনিকা তাসনিম খান, বহিঃক্রীড়া ও বার্ষিক ক্রীড়া বিভাগ সম্পাদক নাহিদ শিকদার, সিনিয়র সদস্য, আরফাত আহমেদ শিহাব ও জুনিয়র সদস্য তনয় সরকার।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২৯ আগস্ট কলেজের নতুন একটি একাডেমিক ভবন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে এ ভবনের পাশে 'চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদ'-এর প্রধান কার্যালয় নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে নতুন এ ভবনেই চলছে ছাত্র সংসদের সাংগঠনিক কার্যক্রম। 
১৯৭০ সালে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে ভিপি হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন বোরহান উদ্দিন।

সিভয়েস/আই

মিনহাজুল ইসলাম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়