Cvoice24.com


বিএনপিতে ভোট আতঙ্ক

প্রকাশিত: ১৬:০৯, ১৩ অক্টোবর ২০১৯
বিএনপিতে ভোট আতঙ্ক

রাত পোহালেই সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদের ভোট। গত শনিবার রাত থেকে বন্ধ হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণা। ভোটারদের মন রক্ষায় প্রার্থীরা কাজ করছেন নীরবে।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই প্রার্থীর সাথে আছেন একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও। তবে নির্বাচনে মূল লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই প্রার্থীর মধ্যে।

তবে ভোট গ্রহণকে কেন্দ্র করে প্রধান দুই দলের নেতাদের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর আতঙ্ক আওয়ামী লীগের একটি অংশ আর জামায়াতের ভোট, অপরদিকে বিএনপির নেতারা আতঙ্কে আছেন সুষ্ঠু ভোট গ্রহণ নিয়ে।

জানা যায়, জামায়াত ইসলামীর ঘাটি হিসাবে পরিচিত সাতকানিয়া উপজেলা। এখানে রয়েছে জামায়াতের বিশাল ভোট ব্যাংক। বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী কারাগারে থেকেও বিপুল ভোটে নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। তবে এবার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন, কারণ এবার জামায়াতে ইসলামী কোনো প্রার্থী দেয়নি চেয়ারম্যান পদে। ফলে বিএনপির প্রার্থী আবদুল গফ্ফার চৌধুরীর সুবিধা হলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম এ মোতালেব আছেন দুশ্চিন্তায়।

নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে আওয়ামী লীগ বিএনপির দুই প্রার্থী ঘাম ঝরানো প্রচারণা চালিয়েছেন। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করেছেন। তবে শেষ মুহুর্তে এসে দু’দলের প্রার্থীরা আছেন আতঙ্কে।
 
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বনফুল গ্রুপের চেয়ারম্যান শিল্পপতি এম এ মোতালেব সিআইপি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন পাওয়াতে নাখোশ ছিলেন স্থানীয় সাংসদ আবু রেজা মো. নেজামুদ্দীন নদভী। যার কারণে এমপি অনুসারী নেতাকর্মীরা সেভাবে মোতালেবের সমর্তনে মাঠে নামেনি বলে অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া শেষ মুহুর্তের প্রচারণায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোতালেবের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে নতুনভাবে আলোচনায় আসেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা এলডিপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া শিমুল।

ফলে এমপি নদভীর অনুসারীরা  এটাকে ভালোভাবে মেনে নিতে পারছেন না। এছাড়াও জামায়াত ইসলামীর ঘাটি সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জামায়াত এভাবে নীরব থাকার কারণটাও তাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

চেয়ারম্যান প্রার্থী এম এ মোতালেব অনুসারীদের ধারণা এমপির পছন্দের মানুষ চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন না পাওয়ার কারণে তিনি নীরব আছেন। অপরদিকে জামায়াত থাকাটা একটি মেসেজ বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

অপরর দিকে নির্বাচনের দিন মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার পর থেকে বিএনপির প্রার্থী আবদুল গফ্ফার চৌধুরী তার অনুসারী ও প্রচারণায় হামলার অভিযোগ করে আসছেন। এছাড়া বিগত সময়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় বিএনপির মাঝে কাজ করছে ভোট সু্ষ্ঠু হওয়া নিয়ে।

বিএনপির শরীক দল জামায়াত ইসলামী সাতকানিয়াতে শক্তিশালী অবস্থানে থাকলেও তারা এবার কোনো প্রার্থী দেয়নি। যার কারণে জামায়াতের ভোট ব্যাংক আর বিএনপির ভোট ব্যাংক একত্রিত হলে অনেকটা সহজেই জয় পাবে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী গফ্ফার চৌধুরী।

সাতকানিয়ার ভোটার চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক জানান, বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার সময় থেকে আদৌ পর্যন্ত আওয়ামী লীগৈর নেতাকর্মীরা নানাভাবে আমাদের কর্মী সমর্থকদের উপর হামলা, প্রচারে বাঁধা, পোষ্টার ছিড়ে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করতে চেয়েছে। আমরা তাদের এসব হামলার মুখেও জনগণের যে ভালোবাসা, সমর্থন পেয়েছি তাতে আমরা আশাবাদী সুষ্ঠু নিরপেক্ষভাবে ভোটাররা ভোট দিতে পারলে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা বিপুলভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবে। যদিও আওয়ামী লীগের অধীনে বিগত সময়ে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন থেকে সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত সুষ্ঠ হয়নি, মানুষ ভোট দিতে পারেনি তা সবাই জানেন। তারপরও আমরা আশাবাদী সুষ্ঠুভাবে ভোট হবে এবং জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।

সার্বিক বিষয়ে যোগাযোগ করা হলেও আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আবদুল মোতালেবের একান্ত সহকারী পিএস আবু তৈয়ব জানান, এখন ব্যস্ত আছি পরে কথা বলেন।

নির্বাচন কমিশন কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩ জন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম এ মোতালেব সিআইপি (নৌকা), বিএনপির প্রার্থী আবদুল গফফার চৌধুরী (ধানের শীষ), স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মোনায়েম মুন্না চৌধুরী (মোটরসাইকেল)।

মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন- তারান্নুম আয়েশা (প্রজাপতি) ও আনজুমান আরা বেগম (কলসি)। ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী- মোহাম্মদ শাহজাহান (তালা), সালাহ উদ্দিন হাসান চৌধুরী (বই), মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন (চশমা), বশির উদ্দিন আহমদ (ধানের শীষ), আছিফুর রহমান সিকদার (মাইক) ও ওমর ফারুক লিটন (নলকূপ)।

সাতকানিয়া উপজেলার মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৮৩ হাজার ৩শ ৮০ জন। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫০ হাজার ২শ ৮৬ জন ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪ জন। ১৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় মোট ১শ ২৫টি কেন্দ্রে ৭শ ১টি বুথে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএম দ্বারা ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ শেখ ফরিদ জানান, ইভিএম-এ ভোটগ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। শনিবার  ভোট কেন্দ্রগুলোতে ‘মক’ ভোটিং হয়েছে। নির্বাচন যেন সুষ্ঠ পরিবেশে হয় তার জন্য সকল ধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

-সিভয়েস/এমআই/এসসি

 

মিনহাজুল ইসলাম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়