Cvoice24.com

সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাচন ২০১৯
চেয়ারম্যান পদে দ্বিমুখী লড়াইয়ের আভাস

প্রকাশিত: ১৭:৩০, ১২ অক্টোবর ২০১৯
চেয়ারম্যান পদে দ্বিমুখী লড়াইয়ের আভাস

সাতকানিয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বিএনপির প্রার্থীর মধ্যে দ্বিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। স্থানীয় ভোটারদের সাথে কথা বলে এ আভাস পাওয়া গেছে। তারা বলছেন, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সাতকানিয়ায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে দ্বিমুখী হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।

এই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে একজন অংশ নিলেও মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এম এ মোতালেব সিআইপি  (নৌকা) ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবদুল গাফফার চৌধুরীর (ধানের শীষের) মধ্যে। জামায়াত শিবিরের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ উপজেলায় জামায়াত ইসলামীর কোন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা  না করায় বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবদুল গাফফার চৌধুরী বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। জামায়াত ইসলামী বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরীক দল হওয়ায় জামায়াত ইসলামীর ভোট ব্যাংক বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করছেন ভোটাররা। 

অন্যদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বনফুলের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ মনোনীত  প্রার্থী এম এ মোতালেব শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে এগিয়ে আছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক কাজ করায় সাতকানিয়ায় তিনি বেশ সমাদৃত। তার পক্ষে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরে ব্যাপক প্রচার ও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি সাতকানিয়ার উন্নয়নে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আশ্বাস দিচ্ছেন। সরকার দলীয় ও সামাজিক কর্মকান্ডের জন্য সাতকানিয়ায় তিনি সমাদৃত হওয়ায় বিএনপি প্রার্থীর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে মনে করছেন ভোটাররা।

অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মোটর সাইকেল প্রতীকে আবদুল মোনায়েম চৌধুরী মুন্না নামে এক প্রার্থী নির্বাচন করলেও পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ছাড়া তার তেমন দেখা মিলছে না। গণসংযোগ, পথসভা কিংবা প্রচারণার মাঠেও তিনি পিছিয়ে। তবে গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে তিনি জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী। বিষয়টি অস্বীকারও করেছেন জামায়াতের শীর্ষ নেতারা। তারা বলছেন, জামায়াত যেহেতু নির্বাচন বয়কট করেছে সেহেতু কোন প্রার্থীকে জামায়াতের পক্ষ থেকে সমর্থন দেয়ার প্রশ্নই আসছে না।

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এম এ মোতালেব সবাইকে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, সাতকানিয়ার মানুষের ভাগোয়ন্ননে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছি। নির্বাচিত হলে আমরা দল, মত নির্বিশেষে সাতকানিয়াকে একটি মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলব।

অন্যদিকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবদুল গাফফার চৌধুরী বলেছেন, কোন ধরনের কারচুপি না হলে তারাই জিতবেন। তিনি শেষ পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের মাঠে থাকার আহবান জানিয়েছেন।

শুধু চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নয় সমান তালে প্রচারণা চালাচ্ছেন ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রাথীরাও। দিচ্ছেন উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রতি। ভোটারদের মন ভোলানোর জন্য তুলে ধরছেন এলাকার নানা সমস্যার কথা। নিবাচিত হলে এসব সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি ভোটারদের সুখে দুখে সবসময় থাকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। 

ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বশির উদ্দিন আহমদ (ধানের শীষ), মোহাম্মদ শাহজাহান (তালা) ও সালাহ উদ্দিন হাসান চৌধুরীর (বই) মাঝে ত্রিমুখী লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদের জন্য জসিম উদ্দিন (চশমা), মো. আসিফুর রহমান সিকদার (মাইক) এবং মোহাম্মদ ওমর ফারুক (টিওবওয়েল) প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। 

ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাহজাহান বলেন, সাতকানিয়া আনাচে কানাচে ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে আমি ইনশাআল্লাহ ব্যাপক ভোটে বিজয়ী হবো।

বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বশির উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘ বিএনপি থেকে আমি একক প্রার্থী। এর আগেও আমি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছি। আমি ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। কোন ধরনের কারচুপি না হলে বিপুল ভোটে আমি বিজয়ী হবো বলে আশা রাখছি।’
 

মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে তারান্নুম আয়েশা ও আনজুমান আরার মধ্যে। এছাড়া নির্বাচনের শেষ সময়ে এসে হাইকোর্টে রিট করে প্রার্থীতা ফিরে পেয়েছেন বিএনপি সমর্থিত জান্নাতুল নাইম চৌধুরী রিকু। গত ৯ অক্টোবর হাইকোর্টের এক আদেশে তিনি প্রার্থীতা ফিরে পান।

সাধারণ মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হলো কারা পরবর্তী উপজেলা পরিষদ পরিচালনার দায়িত্বে আসছে। কেমন হতে পারে নির্বাচন- এ নিয়ে চলছে ভোটারদের চুল ছেঁড়া বিশ্লেষণ। যোগ্য প্রার্থীদের বেছে নিতে হিসাব নিকাশে ব্যস্ত ভোটাররা। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমেই তারা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে চান। 

ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ প্রার্থী জিতছে নাকি প্রধান প্রতিদ্বদ্বী বিএনপি জিতবে, সাধারণ মানুষের এমন নানামুখী আলোচনার উত্তর পাওয়া যাবে সোমবার রাতের মধ্যেই। বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণের পর শুরু হবে ভোট গণনা। সাতকানিয়ায় এবারই প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট হচ্ছে।

এদিকে নির্বাচনকে ঘিরে চলছে প্রার্থীদের শেষ মুহুর্তের প্রচারণা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রার্থীরা সমর্থকদের নিয়ে ছুঁটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। দিচ্ছেন উন্নয়নের না প্রতিশ্রæতি। আজ শনিবার মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রচারণার সময়সীমা। 

সাতকানিয়া উপজেলার মোট ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৩৮০ জন। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫০ হাজার ২৮৬ জন ও মহিলা ভোটার হচ্ছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪ জন। উপজেলার এসব ভোটাররা ১২৫টি ভোটকেন্দ্রে ইভিএম মেশিনের মাধ্যমে এই প্রথম বারের মত ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে।

সিভয়েস/এএস


 

সাতকানিয়া প্রতিনিধি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়