Cvoice24.com


সংকটে ভালো নেই সরকারি সিটি কলেজ

প্রকাশিত: ১৬:১০, ১০ অক্টোবর ২০১৯
সংকটে ভালো নেই সরকারি সিটি কলেজ

ছবি: আকমাল হোসেন।

সরকারি অর্থায়নে পাবলিক কলেজগুলোর মধ্য অন্যতম সেরা চট্টগ্রাম সরকারী সিটি কলেজ। ১৯৫৪ সালে আইন কলেজ হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় থেকে শুরু করে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত পাঠদান চালু রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চট্টগ্রামের কলেজগুলোর মধ্যে ফলাফলে প্রতিযোগিতায় টিকে রয়েছে গৌরবের সাথে। পাশাপাশি খেলাধূলা ও সংস্কৃতি চর্চায় কৃতিত্বের সাক্ষর রাখছে কলেজটি। বহু বছর ধরে ছাত্র রাজনীতির স্থিতীশীলতার জন্যও রাজনৈতিক অঙ্গনে রয়েছে বিশেষ খ্যাতি।

তবে এত খ্যাতির পাশাপাশি কলেজটিকে গ্রাস করেছে সংকটের দুর্গতি। উচ্চ মাধ্যমিক সহ সব বিভাগ মিলিয়ে এখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার। এর বিপরীতে ১১০ জন শিক্ষকের সংখ্যাই অংকিত করছে কলেজটির নানা সংকটের চিত্র। এ চিত্রে ঠাঁই করে নিয়েছে ব্যবহারিক প্রর্দশক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী পদে অপ্রতুল্যতার প্রতিচ্ছবি। শ্রেণি কক্ষ সংকটের মধ্যেও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে পাঠদান কার্যক্রম।

শিক্ষক ও প্রদর্শক সংকটের চিত্র

বিভাগ অনুযায়ী শিক্ষক থাকার কথা রয়েছে ১৮০ জন। তবে এখন পদ সৃষ্টি হয়েছে ১২০ জনের। কিন্তু পদ থাকার সত্ত্বেও ১৩টি পদে শিক্ষক শূণ্য। ফলে নিয়মিত পাঠদানের জন্য কলেজটিতে রয়েছে মাত্র ১০৭ জন শিক্ষক। কলেজটির শিক্ষক শিক্ষার্থীর অনুপাত ১: ১৬৮। কলেজটির দিবা শাখায় মনোবিজ্ঞান বিভাগে ৪ টি পদ থাকলেও শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ৩ জন। আরবী ও ইসলামী শিক্ষা বিভাগে রয়েছেন ৩ জন মাত্র শিক্ষক। একই ভাবে শিক্ষক সংকট রয়েছে কলেজটির দর্শন বিভাগ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ,গণিত, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, প্রাণিবিজ্ঞান সহ প্রায় সব’কটি বিভাগে।

পদ সৃষ্টি হলেও পদায়ন হয়নি ব্যবহারিক প্রদর্শক

বিজ্ঞানভিত্তিক বিভাগগুলোতে শিক্ষক সংকটের পাশাপাশি নেই পর্যাপ্ত ব্যবহারিক প্রর্দশক। কলেজটির পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান এবং প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগে ৪টি প্রর্দশক পদ সৃষ্টি হলেও রয়েছে শুধুমাত্র প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগে। পদ সৃষ্টি হলেও বাকি ৩টি বিভাগ রয়েছে প্রর্দশক শূণ্য।

বিভাগের তুলনায় অপ্রতুল ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারী

সংকটের তালে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকা প্রায় ১৮ হাজার শিক্ষার্থী এবং ১৫টি বিভাগের তুলনায় অপ্রতুল ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা। নগরের অন্যতম সরকারি এ কলেজের শূণ্যতা রয়েছে হিসাবরক্ষক ও ক্যশিয়ার পদে। হিসাব সহকারী পদ দুটিও শূণ্য। ৬টি ভবনের ৩৭টি কক্ষ পরিচ্ছন্নতার জন্য সরকারি পদানুযায়ী রয়েছে মাত্র একজন পরিচ্ছন্ন কর্মী। কলেজটির ৪র্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারী তালিকানুযায়ী অফিস সহায়ক পদে ১৪জন কাজ করার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র ৬জন। বাকি ৮টি পদ শূণ্য। প্রাচীন এই কলেজটিতে সরকারিভাবে নিরাপত্তা প্রহরীর কোন পদ সৃষ্টি করা হয়নি।

অপ্রতুল শ্রেণি কক্ষের সংখ্যা

বর্তমানে কলেজটিতে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ৩টি বিভাগ ছাড়াও স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং ডিগ্রিকোর্স (পাস) পর্যায়ে চালু রয়েছে ১৫টি বিভাগ। ১৫টি বিভাগে প্রায় ১৮ হাজার শিক্ষার্থীর শ্রেণি পাঠদানের জন্য রয়েছে মাত্র ৩৭টি কক্ষ। যা শিক্ষার্থী এবং বিভাগের তুলনায় কম।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কলেজে সদ্য নির্মিত ১০তলা ভবনটি চালু হলে যুক্ত হবে নতুন কিছু শ্রেণি কক্ষ। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ ভবনটিতে পাঠদান শুরু করা যাবে বলে আশা করছেন তারা। তবে নতুন ভবন এবং কক্ষের সংখ্যার চিন্তায় স্বস্তির আশ্বাস থাকলেও কলেজটিতে বছরব্যাপী পাবলিক পরীক্ষার কেন্দ্র পড়ায় অস্বস্তি রয়ে গেছে নিয়মিত পাঠদান কার্যক্রমে। বছর শুরুর চার মাসের মাথায় কলেজটিতে মাসব্যাপী চলে এইচএসসি পরীক্ষা। এভাবেই বছরের নানা সময়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর, ডিগ্রির পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও বিভিন্ন সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার ভেন্যু করা হয় কলেজটিকে।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ যা বলছেন

সংকটের এসব বিষয় নিয়ে চট্টগ্রাম সরকারী সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মঞ্জুর আহমেদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এ প্রসঙ্গে কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করেন।

তবে কথা প্রসঙ্গে তিনি সিভয়েসকে বলেন, গতবারের তুলনায় এবারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভাল ফলাফল হয়েছে। জিপিএ বেড়েছে প্রায় তিনগুন। কেননা কলেজে শিক্ষার মানোয়ন্নের ব্যাপারে কলেজ কর্তৃপক্ষ আন্তরিক। শ্রেণি পাঠদানের আধুনিক মানদণ্ড তৈরিতে কলেজের নিজ উদ্যোগে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুমের মাধ্যমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের শ্রেণিমুখী রাখতে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সিভয়েস/এএস

আসিফ আহমেদ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়