Cvoice24.com


চট্টগ্রাম কারাগারে নিম্নমানের খাবার খাচ্ছে বন্দিরা, মাসে লুট ৬০ লাখ টাকা!

প্রকাশিত: ০৯:২৮, ১০ অক্টোবর ২০১৯
চট্টগ্রাম কারাগারে নিম্নমানের খাবার খাচ্ছে বন্দিরা, মাসে লুট ৬০ লাখ টাকা!

সরকার ঘোষিত বন্দিদের জন্য খাদ্য তালিকা অনুযায়ী চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দিদের খাদ্য দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে বন্দিরা। একইসাথে ৫০ কেজির চালের বস্তায় দৈনিক ৮৫ বস্তা চাল বরাদ্ধ থাকলেও বন্দিরা পাচ্ছে ৫৫-৬০ বস্তা চালের ভাত। ফলে পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে না কারাগারে বন্দিরা।

জানা যায়, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্তসহ সব মিলিয়ে বন্দির সংখ্যা ৮ হাজার ৫০০ জন। তাদের জন্য সরকার দৈনিক ৮৫ বস্তা চাল, ২৫ বস্তা ডাল, ৩ হাজার ৬০ কেচি সবজি, ৩৬৬ থেকে ৪১০ কেজি মাছ মাংস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রাম কারা প্রশাসন এই নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে নিজেদের পকেট ভারী করার জন্য সরকার ঘোষিত এ তালিকার খাদ্য সরবরাহ করলেও বন্দিদের দেওয়া হচ্ছে দৈনিক ৫৫ থেকে ৬০ বস্তা চাল, ১১ থেকে ১২ বস্তা ডাল, ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ কেজি সবজি ও ২০০ থেকে ২২০ কেজির মাছ মাংস বন্দিদের দেওয়া হচ্ছে। যেদিন গরুর মাংস ও খাশির মাংস দেওয়ার কথা কাগজে-কলমে থাকলেও ফার্মের মুরগী এনে খাওয়ানো হচ্ছে। এছাড়াও এসব খাবার এতই নিম্নমানের যে বন্দিরা খেতেও পারেন না।

বন্দিরা অভিযোগ করে জানান, সরকার ঘোষিত সপ্তাহে ৩ দিন ভাজি রুটি, ২ দিন হারুয়া রুটি বাকি ২ দিন খিচুড়ির জন্য নির্দেশনা কাগজে কলমে থাকলে বাস্তবে এসব খাওয়ার বন্দিরা পায় না। ২ দিন হারুয়া-রুটির বদলে দেওয়া হচ্ছে একদিন, ২ দিন খিচুড়ি দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হচ্ছে একদিন। সপ্তাহে ৩ দিন ভাজি রুটি দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও কোন বন্দি ভাজি চোখে দেখে না। যা দেওয়া হয় তাতে ভাজির অস্তিত্ব পর্যন্ত থাকে না।

এদিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দিদের জন্য থাকা একটিমাত্র ক্যান্টিন রয়েছে। সেখানে বন্দিদের জন্য চা ও হরলিক্স বিক্রি করা হয়। ছোট একটি কাপে একটি চা দেওয়া হয় যার মূল্য ১০ টাকা, আর একটি মিনি হরলিক্স দাম রাখা হয় ১০ টাকা করে। যার কারণে বন্দিরা চা’য়ের বদলে মিনি হরলিক্সটি বেশি খেয়ে থাকেন। যার কারণে ক্যান্টিনের দায়িত্বপ্রাপ্তরা চায়ের লাভ হরলিক্স এ পাচ্ছে না, ফলে তারা হরলিক্স বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে।

সম্প্রতি আলোচিত চট্টগ্রাম কারাগারের প্রাক্তন জেলার সোহেল রানা ও ডিআইজি পার্থ বণিক গ্রেফতার হলেও এখনো দাপটে এসব অপকর্ম করে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম কারাগারে থাকা তাদের সহযোগিরা। বন্দিদের জন্য বরাদ্দকৃত নাস্তা ও খাওর্য়া বাবদে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে মাসে প্রায় ৫৫ থেকে ৬০ লক্ষ টাকা সরকারি তহবিল থেকে ঠিকাদারের যোগসাজশে একটি সিন্ডিকেট লুট করে নিচ্ছে। আর তাদের এসব অনৈতিক কাজের সহযোগি হয়ে কাজ করে প্রায় ১১ জন। তার মধ্যে কেইচ টেবিল থেকে চীফ রাইটারের  হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েদি পারভেজ, বড় চৌকার মেট খোকন, ভবন চৌকার মেট সেলিম, ভিজা ক্যান্টিনের সেট দেলোয়ার, কেইচ টেবিলে সাগর, সিআইডি কয়েদি নজরুল, নাছির, ইয়াছিন, শহীদ, অফিসের কয়েদি নোমান, গুদাম ইনচার্জ কয়েদি রাঙ্গু উল্লেখযোগ্য। এরা সোহেল রানা জেলার থাকাকালীন থেকে অদ্যবধি এসব অপকর্ম করে যাচ্ছে কারা প্রশাসনের সহযোগিতায়।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার কামাল হোসেন বলেন, এসব মিথ্য কথা। কারাগারে আগের যে কোন সময়ের চাইতে এখন উন্নত খাবার বন্দিদের দেওয়া হচ্ছে। তাদের কোনোভাবেই কম খাবার দেওয়া হচ্ছে না। কারাবিধি মোতাবেক দিচ্ছি। এসব অভিযোগ যারা করছে, তারা কারাগারে এসে অবৈধ সুবিধা পাচ্ছে না বলে করছে। কারণ আগে এখানে মাদক প্রবেশ করানো যেত, এখন আমরা নিজেরাই চেক করছি। যার কারণে মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক মামলায় কারাগারের থাকা আসামিরা এসব অভিযোগ করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সিভয়েস/ইএ/এএইচ

ইমরান এমি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়