Cvoice24.com


পর্যটকদের নতুন আকর্ষণ খাগড়াছড়ির ‘মায়ুং কপাল’

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ৪ অক্টোবর ২০১৯
পর্যটকদের নতুন আকর্ষণ খাগড়াছড়ির ‘মায়ুং কপাল’

ত্রিপুরা জনজাতির ভাষায় ‘মায়ুংকপাল’ শব্দের অর্থ হাতি (মায়ুং) এবং মাথা (কপাল) মিলেই হাতিমাথা পাহাড়। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার পেরাছড়া এবং মাটিরাঙা উপজেলার গোমতী ইউনিয়নের দুর্গম সুউচ্চ পাহাড়ি এলাকার মানুষের পায়ে হাঁটা পথের একটি সংযোগ সিঁড়ি থেকেই ‘মায়ুংকপাল’-এর জন্ম।

কালক্রমে এটি স্থানীয় মানুষদের কাছে এটি নির্মল ভ্রমণ বিনোদনের অন্যতম জনপ্রিয় স্থান হয়ে উঠে। খাগড়াছড়ির নতুন আর্কষণ হয়ে উঠছে হাতিমাথা পাহাড়। পাহাড়টা দেখতে অনেকটা হাতির মুখায়ব আকৃতি হওয়ায় স্থানীয়রা একে হাতিমাথা পাহাড় বলেন।  চাকমাদের কাছে তাঁদেও নিজস্ব ভাষায় এটি ‘এদো শিরে মোন’ এবং ত্রিপুরাদের কাছে ‘মাইয়ুংকপাল’ নামেই্ পরিচিত। পর্যটকদের কাছে নতুন আর্কষণ এটি। হাতিমাথা পাহাড়ের চূড়া থেকে খাগড়াছড়ির সুউচ্চ পাহাড়ের টেউ চোখে পড়ে।  এছাড়া জেলা সদরের অনেক অংশ এখান থেকে নিমিষেই দেখা যাবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, খাগড়াছড়ি শহর ছেড়ে পেরাছড়া গ্রাম পেছনে খরস্রোতা চেঙ্গী নদী পার হয়ে বেলতলি ত্রিপুরা পাড়া। এখানে মূলত ত্রিপুরা জনগোষ্ঠি’র বসবাস। এই গ্রামের মাঝ দিয়ে পাহাড়ি পথে উত্তর-পশ্চিমের ছোট-বড়ো অনেকগুলো টিলা-পাহাড় পাড়ি দিতে দিতে উপরের দিকে উঠলেই দেখা মিলবে স্বপ্নের সেই ‘হাতিমাথা পাহাড়’। তবে এই পথে হাঁটতে হবে কমপক্ষে এক থেকে দেড় ঘন্টা। সেজন্য পরিচিত অথবা কাউকে পারিশমিকের বিনিময়ে নেয়াটাই উত্তম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘ বছর ধরে পাহাড় বেয়ে ঝুঁকিপূর্ন পথে একটি নারিকেল গাছের সিঁড়ি দিয়ে প্রান্তিক এলাকার নারী-শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা যাতায়াত করতো। এমনকি অসুস্থ রোগীকেও দোলনা করে এই পথেই আসা-যাওয়া করতে হতো। গণমাধ্যমে সেই চিত্র দেখে সাবেক সচিব ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা এলাকাবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে বোর্ডেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।

তাঁর নির্দেশনাতেই ২০১৫ সালে সিড়ি স্থাপন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। মূলত বেশকটি পাহাড়ি গ্রামে যাতায়াত সহজ করার জন্য খাড়া পাহাড় বেয়ে উঠা নান্দনিক সিঁড়িটি নির্মাণ করা হলেও স্থানীয় পর্যটকদেও কাছে এটি ক্রমশ: আকর্ষনীয় স্পটে পরিণত হয়। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে বনভোজন আয়োজন এবং নিরিবিলি সময় কাটানোর অনন্য প্রাকৃতিক পর্যটন হয়ে উঠে।

গরেজমিনে দেখা গেছে, স্থানীয়দের প্রয়োজন মিটানোর পাশাপাশি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে সিঁড়িটি এশনজর দেখা এবং সিড়ি’র দুই’শটি ধাপ পেরিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় উঠার দম বন্ধ করা রোমাঞ্চকর অনুভুতি। পাহাড়ের স্থানীয় পর্যটকদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও পর্যটকরাও এখানে বেড়াতে আসেন।
 স্থানীয় পযর্টকদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভ্রমণপ্রিয় পর্যটকরাও কষ্টসাধ্য এই স্পটে বেড়াতে আসছেন।

খাগড়াছড়ির সাংবাদিক ও পর্যটন সেবাদানকারী উদ্যোক্তা সমির মল্লিক জানান, কিছুটা শ্রমসাধ্য হলেও সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় হাজার ফুট ওপরের এই পাহাড় চূড়ায় উঠলে মনে হয় নেপাল বা ভুটানের কোন আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটে এসেছি। তবে পর্যটকদের আকৃষ্ট করা কিংবা তাঁদের জন্য প্রয়োজনীয় থাকা-খাওয়ার নুন্যতম সুযোগ নিশ্চিত করা গেলে ‘মায়ুংকপাল বা হাতি মাথা পাহাড়’ খাগড়াছড়ি জেলা শহরের কাছে অনন্য সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে।

লংগদু থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক মো.আরমান খান জানান,দীর্ঘদিন ধরে খাগড়াছড়ির হাতিমাথা পাহাড়ের অনেক গল্প শুনেছি।  দেখার পর ভালো লেগেছে। তবে পাহাড়ের চূড়ায় পর্যটকদের বিশ্রামের ব্যবস্থা করা গেলে পর্যটকদের আগমন আরো বাড়বে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান,'  একসময় এই পাহাড়ে গাছের গুড়ির উপর বাসিন্দারা আসা যাওয়া করত। বিকল্প পথ না থাকায় গাছের গুড়ি বেয়ে পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে হত।  এভাবে পাহাড় উঠতে গিয়ে কয়েকজন মারাও গেছে। স্থানীয়দে দুর্ভোগ লাঘবে এখানে সিড়ি নির্মাণ করা হয়। এরপর থেকে নান্দনিক এই সিড়ি থেকে পর্যটকরা বেড়াতে আসে। পাহাড়ের চূড়া থেকে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের অনেকটায় চোখে পড়ে। পর্যটকরা অনেক সময় ভুল পথে চলে যায়।  বিড়াম্বনার এড়ানোর ব্যবস্থা করা গেলে পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরে আসতে পারবে।'
পেরাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তপন বিকাশ চাকমা জানান,‘ হাতিমুড়া পাহাড়ের নতুন পর্যটন এলাকায় পরিনত হচ্ছে । ইউনিয়নের পরিষদের পক্ষ থেকে পর্যটকদের জন্য একটি যাত্রী ছাউনির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়া হাতিমাথা যাওয়ার জন্য পর্যটকদের জন্য গাইড ব্যবস্থা করা হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো। মুজিবুল আলম জানান, সিঁড়িটি নির্মাণের পর থেকে এলাকার মানুষের জীবনযাত্রায় একটা ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে। ওই এলাকার প্রান্তিক ও দরিদ্র মানুষের স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য বোর্ড চেয়ারম্যান মহোদয় সব সময় মনোযোগী। তাই নির্মিত সিঁড়ি’র কারণে পর্যটক গমনের বিষয়টি আমাদের আরো প্রকল্প গ্রহণে আগ্রহী করে তুলেছে।

সিভয়েষ/এএইচ

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়