Cvoice24.com


লামায় পোষা হাতি দিয়ে বৃক্ষ উজাড়, ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯
লামায় পোষা হাতি দিয়ে বৃক্ষ উজাড়, ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ

 লামা উপজেলার সদর ইউনিয়নের দুর্গম ঘিলা পাড়া এলাকায় এভাবে হাতি দিয়ে গাছ টানা হচ্ছে।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় হাতি দিয়ে গাছ উজাড়ের খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় এক ত্রিপুরা যুবকের তথ্য মতে জানা যায় দুর্গমে বৃক্ষ উজাড়ে ব্যবহৃত ১২টি পোষা হাতি রয়েছে। এইসব হাতি দিয়ে বৃক্ষ উজাড়ের কারণে পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে।

হাতি মালিকের দুরাচারে অতিষ্ট দুর্গমে বসবাসরত উপজাতিরা। পাহাড়ে অবস্থান নেয়া উগ্রপন্থিদের সঙ্গে হাতি মালিক, গাছ ব্যবসায়ীদের যোগসাজস ও চাঁদা আদান প্রদানের অভিযোগ স্থানীয়দের। 

সম্প্রতি উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঈশ্বর চন্দ্র নামের এক ত্রিপুরা যুবকের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, লামা ইউনিয়নের দুর্গম পোপা এলাকায় ১২টি পোষা হাতি রয়েছে। এসব হাতির মালিক সিলেট মৌলভী বাজার নিবাসী জনৈক মালয় কোম্পানি। 

জানা গেছে, ২০০০ সাল থেকে লামা-থানছি, তৎসংলগ্ন আলীকদম উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় সরকারি খাস অশ্রেণিভুক্ত বনাঞ্চলের বড় বড় বৃক্ষ আহরণে নিয়োজিত রয়েছে এসব হাতি। হাতির মালিকদের সঙ্গে প্রভাবশালী একটি কাঠ ব্যবসায়ী চক্র চুক্তিবদ্ধ হয়ে এসব করে আসছে। এ চক্রটি পাহাড়ে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের মোটা অংকের চাঁদা দিয়ে তাদের অবৈধ ব্যবসার  তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

লামা সদর ইউনিয়নের দুর্গম পানসি পাড়ার এক মুরুং যুবকের সঙ্গে কথা হলে জানা যায়, সদর ইউনিয়নের দুর্গমের ঘিলা পাড়া, পানসি পাড়া, লেংটা ঝিরি, শিল পাজা ও লাইল্যা পাড়া এলাকায় হাতি দিয়ে বড় বড় গাছ টানা হয়। এইসব গাছের একাংশ লামার পোপা খাল দিয়ে নদী পথে উপজেলা সদরে এনে গাড়িতে করে পাচার হয়। আর বেশির ভাগ গাছ সরই ইউনিয়নের লুলাইং এলাকা দিয়ে কেয়াজুপাড়া হয়ে লোহাগাড়া দিয়ে পাচার হয়।

দুর্গম এলাকা হওয়ায় সেখানে প্রশাসনের কোন তৎপরতা না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে এই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা।  

২০০৬ সালে সেনাবাহিনী আলীকদম জোনের অভিযানে লামা বন বিভাগ বেশ কয়েকটি হাতি আটক করেছিল। পরবর্তীতে এ নিয়ে মামলা হয় এবং আটককৃত হাতিগুলো ডুলহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্কে রাখা হয়েছিল। 

সংশ্লিষ্টদের নির্লিপ্ততায় সম্প্রতি প্রভাবশালী ওই গ্রুপটি আবারো তৎপর হয়ে উঠেছে। বিনা অনুমতিতে হাতি রাখা ও হাতি দ্বারা শতবর্ষী নানা প্রজাতির মূল্যবান বৃক্ষ উজাড় করছে। 

আরো জানা যায়, চট্টগ্রামের প্রভাবশালী কাঠ ব্যাসায়ী একটি চক্র স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এসব করছেন। এই গ্রুপটি পাহাড়ের অশ্রেণিভুক্ত ভূমি থেকে শতবর্ষী বিভিন্ন প্রজাতির মা গাছ (মাদার ট্রি) উজাড় করছে। তারা এই কাজে ইলেকট্রিক করাত ব্যবহার করে বিশাল আকারের শত বছর তারো বেশি বয়সী প্রাকৃতিক সৃজিত গর্জন, চাম্পাফুল গাছ কর্তন ও হাতিদ্বারা আহরণ করছে।

লামা সদর ইউনিয়নের দুর্গম দোছড়ি গ্রামের বাসিন্দা ঈশ্বর চন্দ্র ত্রিপুরার অভিযোগ করেন, এখনো ওই এলাকায় ১২টি পোষা হাতি রয়েছে। এ থেকে গর্ভবতী একটি হাতি জঙ্গলে নিখোঁজ হয়। হাতির মালিক নিখোঁজ হাতিটি সন্ধান করার জন্য ঈশ্বর চন্দ্র ত্রিপুরাকে চুক্তিভিত্তিক দায়িত্ব দেয়। ৪৫ দিন তল্লাশি করে কয়েকজন মিলে ঈশ্বর চন্দ্র ত্রিপুরার নেতৃত্বে নিখোঁজ হাতিটি খুঁজে পায়। কিন্তু হাতি মালিক মালয় কোম্পানি পূর্ব প্রতিশ্রুতি মতে সন্ধানদাতাদের কোন ধরনের পারিশ্রামিক দেননি। উপরন্ত স্থানীয় এসব যুবকের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে হুমকি প্রদান করে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাতির মালিক মালয় কোম্পানির সঙ্গে বান্দরবান ও লোহাগাড়া কেন্দ্রিক প্রভাবশালীদের দহরম-মহরম সম্পর্ক রয়েছে। এর ফলে তিনি কারো তোয়াক্কা না করে লামা উপজেলাসহ সীমান্তবর্তী আলীকদম ও থানছি উপজেলার  বিভিন্ন প্রজাতির মা গাছ (মাদার ট্রি) নির্বিঘ্নে উজাড় করে চলছে। 

উল্লেখ্য এসব কর্তনকৃত কাঠসমূহ লামা ও বান্দরবান বন বিভাগের প্রদত্ত নানা জোত পারমিটের অনুবলে পাচার হয়। সরকারি সংরক্ষিত কিংবা অরক্ষিত বনাঞ্চলে বিদ্যমান কোন মাদার ট্রি কর্তন, আহরণ বন আইনে সম্পুর্ন নিষিদ্ধি। কিন্তু লামা-আলীকদম ও থানছি উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ের (সরকারি খাস-অরক্ষিত) প্রাকৃতিক সৃজিত শতবর্ষী- গর্জন, চাম্পাফুল সহ মা গাছ কর্তন ও আহরণ হরদম চলছে।

দুর্গম ওইসব এলাকার পাহাড়ে কর্তনকৃত গাছের গোড়ালিগুলোই প্রমাণ করে কিভাবে উজাড় হয়েছে শতবর্ষী বৃক্ষরাজি। এ ব্যাপারে হাতির মালিক মালয় কোম্পানিকে ফোন করা হলে, তিনি সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলতে চাননি। 

লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, যেহেতু সংরক্ষিত বনাঞ্চল নয়, সেহেতু বিষয়টি আমাদের এখতিয়ারে পড়ে না। যদি লামা নদী পথে এসব গাছ আনা হয়, সে ক্ষেত্রে আমাদের লোকজন তা জব্দ করবে। পোপা ও লুলাইং মৌজায় যেখানে হাতি রয়েছে, দুর্গম এলাকা হওয়ায় বন বিভাগের পক্ষে কোন ব্যবস্থা নেয়া কষ্টসাধ্য। অশ্রেণিভুক্ত বন উজাড় বন্ধে জেলা প্রশাসনের দায়িত্ব রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, খাস কিংবা অশ্রেণিভুক্ত বন রক্ষায় জেলা প্রশাসনের আইন প্রয়োগের ক্ষমতা রয়েছে।

লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ জান্নাত রুমি বলেন, বিনা অনুমতিতে হাতি দ্বারা গাছ আহরণ কিংবা হাতি রাখা আইনত দণ্ডনীয়। তিনি বলেন হাতি সংক্রান্ত বিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

সিভয়েস/আই

    
           

লামা প্রতিনিধি 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়