Cvoice24.com

চট্টগ্রামে আজ, মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪

সময় ঘন্টা মিনিট সেকেন্ড


‘কিছু খাদ্য ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে জনগণের পকেট কাটে’

প্রকাশিত: ১২:০৯, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯
‘কিছু খাদ্য ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে জনগণের পকেট কাটে’

ছবি: সিভয়েস

‘সরকার খাদ্য উৎপাদনে সফলতা দাবি করলেও প্রতি বছর কৃষক কোন না কোন কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য পায় না, যার কারণে কৃষকরা রাস্তায় আলু, টমেটো, পেঁয়াজ, ধান, দুধ ফেলে প্রতিবাদ জানায়। আর ওই বছর এ শস্য উৎপাদনে কৃষক আগ্রহ হারায়। ফলশ্রুতিতে খাদ্য সংকট তৈরি হয়। আর দেশ খাদ্য আমদানি নির্ভর হয়ে যায়। এ সুযোগে কিছু খাদ্য ব্যবসায়ী বিদেশ থেকে খাদ্য-শস্য আমদানিতে জঠিলতা তৈরি করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে জনগণের পকেট কাটে। সরকার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর উদ্যোগ নিলেও প্রকৃত উপকারভোগীদের কাছে এ সহায়তা পৌঁছে না।’

মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) নগরীর ব্র্যাক লানিং সেন্টারে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ এর চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় বক্তরা এই সব দাবি করেন। 

বক্তরা বলেন, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে অপ্রতুল ও মানসম্মত শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা না থাকায় সবাই ঢাকামুখী। অন্যদিকে ছোট উৎপাদক, নারী ও যুব উদ্যোক্তাদের স্বল্প ব্যয়ের পুঁজি এবং আর্থিক প্রণোদনাসহ নীতিমালা না থাকায় তৃণমূলে অর্থনৈতিক গতি বাড়ছে না। ফলে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০১৮ সালে দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৩৬ লক্ষ। দারিদ্রের হার ২১.৮% বা ৩ কোটি ৫৫ লক্ষ। যার মধ্যে অতি দরিদ্রের হার ১১.১৩% বা প্রায় ২ কোটি। 

উল্লেখ্য, ক্রমাগতভাবে দারিদ্র্যের হার কমা স্বত্ত্বেও অতি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা তেমনভাবে কমছে না। বিবিএস-এর জরিপ অনুযায়ী দেশে বর্তমানে বেকারের সংখ্যা ২৬ লক্ষ ৭৭ হাজার, যাদের মধ্যে ৭৪ শতাংশই যুব। আইএলও-এর বক্তব্য অনুযায়ী এ সংখ্যা প্রায় ৬৬ লক্ষ। এই বিপুল সংখ্যক বেকারের কর্মসংস্থান তৈরি না হলে এরা মানব সম্পদ না হয়ে বোঝা হবে। দৈনিক ২ হাজার ১২২ ক্যালরি খাবার কিনতে অক্ষম তারাই দরিদ্র। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ২০৩০ (এসডিজি) এর উন্নয়ন কাঠামোর অন্যতম লক্ষ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে সব ধরনের দারিদ্রের অবসান এবং আগামী ১৫ বছরের মধ্যে ক্ষুধামুক্তির অঙ্গিকার। তাই এসডিজির মুল লক্ষ্য অনুযায়ী দেশে সবার খাদ্য নিশ্চিত করতে দ্রুত খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়ন যেমন জরুরি, তেমনি কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।

বক্তারা আরও বলেন, দেশে আয় ও সম্পদের বৈষম্যের ব্যাপকতা ক্রমেই বেড়েই চলেছে। ধনী পরিবারের আয় বৃদ্ধির কারণে শীর্ষ ১০ ভাগ মানুষ দেশের ৩৮ শতাংশ সম্পদের মালিক। অপরদিকে, নিম্ন অবস্থানকারী ১০ শতাংশ অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠী দেশের মাত্র ১ শতাংশ সম্পদের মালিক। ২০১২ সাল থেকে বিগত ৫ বছরে দেশে ধনীর সংখ্যা বেড়েছে গড়ে ১৭% হারে। এ হার যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, ভারতসহ ৭৫টি বড় অর্থনীতির দেশের চেয়ে বেশি।

বক্তারা বলেন, বর্তমান সরকার ও বিভিন্ন জাতীয়-আর্ন্তজাতিক উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগের কারণে দেশে খাদ্য নিরাপত্তায় ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হলেও নিরাপদ খাদ্যের বেলায় মারাত্মক হুমকিতে আছে। খাদ্য উৎপাদন ও বিপনণে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ক্রমাগত একচ্ছত্র আধিপত্য সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। আর সে কারণে বিগত বিশ বছরে দেশে খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুনেরও অনেক বেশি, মোটা চালের দাম বিগত ১ বছরে দ্বিগুনেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের মতো উন্নত দেশগুলোতে খাদ্যের মূল্য সেভাবে বাড়েনি। 

অন্যদিকে প্রকৃত কৃষক তার উৎপাদিত খাদ্য পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না, যা মধ্যস্বত্ত্বভোগী ও ফাড়িয়ারা এবং খাদ্য ব্যবসবায়ীরাই সিংহভাগ হাতিয়ে নিচ্ছেন। ফলে দেশিয় কৃষক প্রতিবছরই লোকসান গুনতে বাধ্য হচ্ছেন। সে কারণেই সবার জন্য খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়ন ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা প্রদানে রাষ্ট্রকে বাধ্য করতে ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার বিকল্প নাই বলে মত প্রকাশ করেন।

খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ কেন্দ্রিয় পর্ষদের সদস্য এস এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে সভায় মুখ্য আলোচক ছিলেন খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’র সাধারণ সম্পাদক মহসিন আলী, বিশেষ অতিথি ছিলেন চিটাগাং ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সাইন্স ইউনিভার্সিটির খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফ্যাকাল্টির ডীন প্রফেসর ড. জান্নতারা খাতুন, সরকারি মহসিন কলেজের অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, সিভয়েস২৪ডটকমের সম্পাদক এম নাসিরুল হক। 

খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরীর সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন চিটাগাং ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সাইন্স ইউনিভার্সিটির এপ্লাইড ফুড সাইন্স অ্যান্ড ন্উিট্রিশনের প্রধান অধ্যাপক আলতাফ হোসেন, খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলা কমিটির আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, লিটন চৌধুরী, সায়েরা বেগম, নুরুল হক, সেলিম সাজ্জাদ, কুমিল্লার কোষাধ্যক্ষ নাজনীন আক্তার, বিবাড়ীয়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম শফিকুল ইসলাম, চাঁদপুরের মোহাম্মদ সাদেক সফিউল্লাহ, রাঙ্গামাটির শিমুল চাকমা, ফেনীর এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম নান্টু, লক্ষ্মীপুরের শাহজাহান কামাল, কক্সবাজারের অধ্যাপক আনোয়ারুল হক, বান্দরবানের সুমিত তাংচাঙ্গিয়াসহ প্রমুখ। 

প্রতিনিধি সভায় চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলার ৩২ জন অংশ নেন।

-সিভয়েস/এমআই/এসএ

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়