Cvoice24.com

আমার জীবনে মহিলার সংখ্যা খুবই কম: অনুপম রায়

প্রকাশিত: ১৭:১৬, ২৮ এপ্রিল ২০১৮
আমার জীবনে মহিলার সংখ্যা খুবই কম: অনুপম রায়

ছবি: সিভয়েস

অনুপম রায় এই সময়ের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী। সৃজিত এর অটোগ্রাফ সিনেমায় "আমাকে আমার মতো থাকতে দাও" এবং "বেঁচে থাকার গান" এ দুটো গান এনে দেয় খ্যাতির মহাচূড়ার স্থান। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি অনুপমকে। একের পর এক গান দিয়ে শ্রোতাদের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন তিনি। ২০১৫ সালে পিকু সিনেমার গানের পরিচালনার মধ্য দিয়ে বলিউড জগতেও পা রাখেন এই গুনী শিল্পী। অবসর সময়ে লিখেন কবিতা এবং গদ্য। কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রনিক্স এন্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং-এ উচ্চতর ডিগ্রি এবং সম্মান সূচক "স্বর্ণপদক” লাভ করেন অনুপম। কাজের সুবাদে ছিলেন ব্যাঙ্গালুরুতে। ২০১৫ সালে পিয়া চক্রবর্তীর সাথে সাত পাকে ঘুরে সংসার জীবন শুরু করেন অনুপম। পিয়া চক্রবর্তীও একজন সঙ্গীত শিল্পী। জনপ্রিয় এই সঙ্গীতশিল্পীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিভয়েস প্রতিবেদক তানভীরুল মিরাজ রিপন। 

এই সাক্ষাৎকারে শুধু মাত্র গায়ক অনুপমকে পাওয়া যাবে না। কবি, গদ্যকার, শৈশবের অনুপম, কলেজ এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়সহ সর্বশেষ চাকরি জীবনের কর্পোরেট অনুপমকেও খুঁজে পাওয়া যাবে। উল্লেখ্য তাঁর প্রকাশিত কবিতা, উপন্যাস, গ্রাফিক্স নোবেল সহ কাব্যগ্রন্থ মোট সাতটি।

প্রশ্ন: নমস্কার। কেমন আছেন?

উত্তর: এইতো ভালো।

প্রশ্ন: স্বাভাবিক প্রশ্নের বাইরে গিয়ে অস্বাভাবিক একটা প্রশ্ন দিয়ে শুরু করতে চাই। আপনার একটা গান "সেকেন্ড সেক্স" আপনার দর্শকদের  উপহার দিয়েছেন। এই গানের ভিডিওটাতে একটা নারীকে সমাজ যেভাবে দেখছে সেটি উপস্থাপন করেছেন।এই গানের মূল বক্তব্যটা কি আসলে?

উত্তর: এই "সেকেন্ড সেক্স" গানটি মূলত আমাদের সমাজে নারীদের কেমন ভাবে সকল মানুষেরা দেখতে চায় সেটির একটা বার্তা। তবে এটাতে সচেতনতাও আছে। এটি প্রতিবাদ, নারীর জাগরন, নারীর অধিকার এসবের কথাও বলে। যেমন ধরুন দিনের পর দিন যেভাবে ধর্ষণের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে তার জন্য আমাদের সমাজ নারীদের দোষ দিচ্ছে। কেউ কেউ ধর্ষিত হলে প্রথমে বিচার, শাস্তি না চেয়ে প্রশ্নতুলে "মেয়েটা মদ্যপ  ছিলো কিনা? মেয়েটা কেমন কাপড় পড়েছিলো? মেয়েটা প্রস্টিটিউট ছিল কিনা? অথচ এসব বলার অধিকার কারোরই নাই। আমরা যখনই দেখছি নারী ধর্ষণ হচ্ছে তখন আমরা বলছি রাত দশটার পরে কোন নারী বাইরে না থাকাটা ভালো। অথচ পুরুষদের বলছিনা যে মহিলারা বাইরে ঘুরুক রাতের পর রাত পুরুষেরা রাত দশটার মধ্যে ঘরে ফিরে আসুক। তাহলে আমরা বদলালাম কোথায়? বা এসবের সমাধান দিতে পারছি কোথায়? গানটার ভিডিও তাই বলে।

প্রশ্ন: ছোটবেলা থেকে তো গান গাইছেন। গলা সাধার অভ্যাস আছে কিনা? মানে একেবারে ভোরে উঠে রেওয়াজ করতেন কিনা?

উত্তর: মোটেও না। সকালে উঠে আমি সব-সময়ই বই নিয়ে পড়তে বসেছি।

প্রশ্ন: গান কার কাছ থেকে শিখেছেন?

উত্তরঃ প্রথমত মায়ের কাছ থেকে। মা তো রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী ছিলেন। আমাকে তিনি তাই চর্চা করাতেন। যদিওবা আমার রবীন্দ্র সংগীতের সুর গুলো বিরক্ত লাগতো।

প্রশ্ন: শৈশবে গানের বিড়ম্বনা কেমন পোহাতে হয়েছে?

উত্তর: হা..হা..হা। এই প্রশ্নটা একেবারে নতুন। মা তো সবসময় রবীন্দ্র সংগীত গাওয়ার জন্য বলতেন, তিনি শিখাতেনও ঐসব গান। কিন্তু আমার এসব গানের চেয়ে মাধুরী দীক্ষীতের অভিনয় করা গানগুলো ভাল লাগতো।

হা..হা.. ছোট বেলায় বিশেষ করে যখন লোকের বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে যেতো তখন মহামুশকিলে পড়ে যেতাম। তুমি তো গান গাও-আমাদের একটা গান শুনাওতো-তখন মা চোখ রাঙিয়ে বলতো অনুপম অন্য কোন গান যেনো না হয় আবার "মেঘের কোলে রোদ হেসেছে" করো। এই মুশকিল হা..হা..হা

প্রশ্ন: আচ্ছা কলেজ জীবনে কিংবা স্কুল জীবনে গান গেয়ে আসর মাত-তো করেছেন?
উত্তরঃসে সময়ে সেটা একদমই পারিনি। ঐতো আমি গাইতাম টিচার্স ডে, চিলড্রেনস ডে গুলোতে। মানে ক্লাস কে রিপ্রেজেন্ট করতে হবে, অনুপম রবীন্দ্র সংগীত গায় তাকে একটা গান গাওয়ার কথা বললে হয়ে যাবে। "আলো আমার আলো" "সোনার হরিণ" এসব গাইতে ভাল লাগতো তা কিন্তু না। দায়িত্ব পালন করা। তবে কলেজ জীবনে কিছু গান লিখেছিলাম, গাইতামও। কিন্তু শোনার কেউ ছিলো না। হা...হা...

প্রশ্ন: ধুলোবালি মাখা গানটার প্রেক্ষাপটটা যদি বলতেন। এই গানতো আপনি যাদবপুরে থাকতে লিখেছেন। "অন্য নামে"এ্যালবাম করার কথা ছিল। পরে এ্যালবামটি "দূরবীনে চোখ রাখবনা"নামে রিলিজ হয়।

উত্তর: গানটা এখন আনইউসড হয়ে পরে আছে। তবে "ধুলোবালি মাখা" এই গানটা কেনো লিখলাম তা মনে পড়লে হাসি পায়। নির্ভেজাল একটা প্রেমের গান। যখন বন্ধুদের সাথে আড্ডায় বসতাম তখন আমি অন্য স্তরে বিচরন করছি সেরকম একটা গানের অনুভূতি আরকি।

প্রশ্ন: এবং সেটা কাউকে দেখে লেখা নিশ্চয়?
উত্তর: Obviously তাই। হা...হা..

প্রশ্ন: ক্রমান্বয়ে অনেক সিনিয়র জুনিয়র তো আপনার গান ভালবাসতো। তাদের মধ্যে মহিলার সংখ্যা কতো ছিলো?

উত্তর: আমার জীবনে মহিলার সংখ্যা খুবই কম।

প্রশ্ন: এটা মানতে হবে? হা..হা...
উত্তরঃ অবশ্যই মেনে নিতে হবে। তার কারণ, আমি ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়েছি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের ডিপার্টমেন্টে চারটে ইয়ার মিলিয়ে চারজন মেয়েছিলো। আমাদের ক্লাসে ছিলো একটি মাত্র এবং তার সাথে আমাদের ঝগড়া লেগেই থাকতো।

প্রশ্ন: তাহলে ডিপার্টমেন্ট থেকে? তাই তো

উত্তর: এতোটা সাহসী নই যে "ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাবো"। হা..হা..হা এতোটা সাহস ছিল না। আমরা যখন যাদবপুর পড়তাম তখন ১৫ টা কি ১৬ টা মেয়ে, আর ছেলের সংখ্যা ৮০০ জন। সুতরাং মার মার কাট কাট অবস্থা।হা..হা..হা

প্রশ্ন: প্রচুর কম্পিটিশন? 

উত্তর: হা.হা.. খুবই।

প্রশ্ন: আমার ব্যক্তিগতভাবে "তিস্তান" গানটা খুবই ভালো লাগে। মানে প্রিয় গানের একটি। এই গানেরও কোন প্রেক্ষাপট আছে কি না?

উত্তর: হ্যাঁ আছে। এই গানে তিস্তান শব্দটা হলো কাল্পনিক একটা বাড়ির নাম।এই গান আমি ব্যাঙ্গালুরুতে থাকাকালীন লিখেছিলাম। তখন আমার কোলকাতার বাড়ির প্রতি এতো টান মায়া! বারবার আমি এই গানে "ফিরিয়ে নিয়ে চলো"কথাটা উল্লেখ করেছি এই কারণে যে আমি কোলকাতাকে মিস করছি। "তিন টাকা দিয়ে দিনের শুরু ষোলটাকা দিয়ে শেষ" এই লাইনের মানে হলো তিন টাকা দিয়ে কিনে ভোগ খেয়ে দিন শুরু হতো আর ষোলো টাকায় দোসা খেয়ে ঘুমোতে যেতাম। তিস্তান মূলতঃ আমার ভালবাসার জায়গা থেকে দেওয়া নাম। কোলকাতার বাড়ির নাম তিস্তান না।

প্রশ্ন: প্রিয়া বৌদিওতো গান গায়। আপনার সাথে বৌদির এই গানের সংসারে কোন তর্কটা সবচেয়ে বেশি দীর্ঘ সময় ধরে চলছে?

উত্তর: গান নিয়ে তর্ক বিতর্ক তো চলে। তবে "গানের সংসার" শব্দটা ভালো লেগেছে। তার সাথে যে তর্কটা হয়ে আসছে, সে গানের কথাকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে, আমি সুরকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবি।

প্রশ্ন: একটা গান লিখতে কতোদিন পর্যন্ত লাগে?

উত্তর: আমার গান লেখা থাকে। সিনেমার মোমেন্টের সাথে মিলবে এমন মনে হলে পুরানো লেখা গান সুর করি,অথবা নতুন লিখতে বসি। তবে কতোক্ষণ লাগে সেটা নিশ্চিত নয়। অনেক সময় কম সময়ে সম্পূর্ন হয় অনেক সময় বেশি দিন। এই যেমন প্রাক্তনের "কোলকাতা"গানটা আমি লিফটে করে সাত তলায় উঠার আগেই সম্পূর্ন হয়ে গেলো।

প্রশ্ন: তার মানে আপনি সাততলায় বসবাস করেন?

উত্তর: হা.হা..হা.. হ্যাঁ

প্রশ্ন: এই তর্ক তাহলে অমীমাংসিত।

উত্তর: ঐতো চলছেই, হা..হা..হা..

প্রশ্ন: কোন দুজন শিল্পীর গান আপনাকে অনুপ্রাণিত করে?

উত্তর: প্রথমত নচিকেতা'দা,দ্বিতীয়ত পিংক ফ্লয়েড। নচিকেতা দা'র গান আমার গান লেখার ধরন পর্যন্ত বদলে দিতে পেরেছে। 

প্রশ্ন: এবার আমরা কবি ও গদ্যকার অনুপমের কাছে প্রশ্ন করবো।
কবিতা লেখেন কেনো?

উত্তর: প্রথমত কবিতা আমাকে স্বাধীন করে তুলে,দ্বিতীয়ত কবিতা ভালবাসতে শেখায়।

প্রশ্ন: গান আর কবিতা দুটো আলাদা শিল্প। যখন গান লিখেন তখন তো আপনার সিনেমার মোমেন্ট ভেবে গান লিখতে হয়। কবিতার ক্ষেত্রেও কি তাই?

উত্তর: আমি যখন কবিতা লিখি তখন কবিতা লিখি। যখন গান লিখি তখন গান।

প্রশ্ন: কবিতা আপনার কাছে কি?

উত্তর: বলে রাখি গানকে কবিতার মতো করে সম্মান দিইনা। কবিতা আমাকে যেখানে নিয়ে যেতে চায় আমি সেখানে অনায়াসে যেতে রাজি।
গান কবিতার মতো উঁচু কিছু না।

প্রশ্ন: এতো এতো সিনেমার গান তৈরীর ব্যস্ততার ভিড়ে থেকেও কবিতা লেখার সময় পান কিভাবে?

উত্তর: আমি গান দিয়ে শুরু করিনি, প্রথমটা কবিতা দিয়েই শুরু করেছিলাম। আমি যখনই একটু ফাঁকা সময় পাই তখনই কিছু না কিছু লেখার চেষ্টা করি,তবে কবিতা বেশি লিখি। মনে হয়েছে কবিতা আমার নরমের জায়গা দখল করতে পেরেছে।

প্রশ্ন: পাঠক হিসেবে আপনার লেখা কবিতা কিংবা গদ্য একটু নতুন আবার একটু বেশি এলোমেলো লেগেছে।

উত্তর: হ্যাঁ একটু এলোমেলো। তবে বক্তব্য আছে সবকটাতে। আর গদ্যের ফরম্যাটটাতে আমি সবসময় চাই যে পাঠক পড়ে যেনো ধরে নিতে পারে এটা অনুপম কথা। তাই গদ্যে সকল কিছু এক সাথে রাখি।

প্রশ্ন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।

উত্তর: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। সেই সাথে বাংলাদেশের সকল পাঠক ও শ্রোতাদের প্রতি আমার ভালোবাসা।

সিভয়েস/এইচআর/এমইউ
 

192

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়