Cvoice24.com

চট্টগ্রামে আজ, মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪

সময় ঘন্টা মিনিট সেকেন্ড

নেতার ইশারায় স্থগিত নগর বিএনপির কমিটি গঠন প্রক্রিয়া
খালেদার মুক্তি নাকি নির্বাচন, কোনটি আগে প্রশ্ন তৃণমূলের!

প্রকাশিত: ০৯:২৮, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯
খালেদার মুক্তি নাকি নির্বাচন, কোনটি আগে প্রশ্ন তৃণমূলের!

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির থানা ও ওয়ার্ড কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে। নগর বিএনপির এক শীর্ষ নেতা কেন্দ্রীয় বিএনপিকে ভুল বার্তা দিয়ে এ কাজ করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপির তৃণমূলের নেতারা। তাদের প্রশ্ন কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হচ্ছে খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনকে শক্তিশালী করার জন্য। কিন্তু সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে এ কর্মসূচি না নিলেও কেন্দ্রীয় বিএনপি সিটি নির্বাচন অজুহাতে কমিটি গঠন প্রক্রিয় স্থগিত রেখেছে। তাহলে কি খালেদা জিয়ার মুক্তির চেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে নির্বাচনকে এমন প্রশ্ন করছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

থানা বিএনপির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ করার শর্তে বলেন, নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান তার নির্বাচনী এলাকার আওতাধীন থানা ও ওয়ার্ড কমিটিতে নিজের পছন্দের লোককে কমিটি রাখতে চান। বর্তমান কমিটিতে যারা আছেন তারা প্রায় তার বিরোধী হওয়ায় বর্তমান কমিটির নেতাদের বাদ দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে নগর বিএনপিকে অনুরোধ করেন। কিন্তু নগর বিএনপি তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছাড়াই বাদ দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দেন। যার কারণে নিজের অনুসারীদের দিয়ে কমিটি করতে পারবে না এমন আশঙ্কার কারণে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে কমিটি করলে বিরোধ বাড়বে এমন একটি তথ্য দিয়ে কেন্দ্রের কাছে ওয়ার্ড ও থানা কমিটি গঠন প্রক্রিয়া স্থগিত করার আহবান জানান।

নগর বিএনপির এ নেতার কথাকে সমর্থন জানান চট্টগ্রামের আরেক কেন্দ্রীয় নেতা। এর আগেও এ সিনিয়র নেতা তার নির্বাচনী এলাকার বিএনপি সমর্থিত এক কাউন্সিলরকে সামান্য একটি বিষয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির মাধ্যমে বহিষ্কার করান। সেই কাউন্সিলর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খান ও নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক এরশাদ উল্লাহ’র অনুসারী হিসাবে পরিচিত।

কমিটি গঠন প্রক্রিয়া স্থগিত করার খবর পেয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা হতাশ ও ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন। দীর্ঘ দিন পর থানা ও ওয়ার্ড কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কাজে নগর বিএনপি হাত দিলেও সেটা আর বাস্তবায়ন হচ্ছে না। যার কারণে অনেক থানা ও ওয়ার্ড কমিটি আছে যেগুলো চলছে ৫ জন বা ৭ জন নেতা দিয়ে।

বিগত ৩০ বছরেও এসব ওয়ার্ড ও থানা বিএনপির কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি। নগরীর সংসদীয় আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসাবে বিগত সময়ে যারা নির্বাচন করেছেন, তারা নিজেদের লোককে কমিটিতে আনতে চান। যদি নিজেদের লোক কমিটিতে ঠাই না পান তাহলে তারা সেই থানা বা ওয়ার্ড কমিটির বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন বলে অভিযোগ নগর বিএনপির এক নেতার।

নগরীর চান্দঁগাও থানা বিএনপির সভাপতি মো. আজম বলেন, প্রতিটি থানা, ওয়ার্ডে যদি বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি থাকতো, তাহলে লের কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ বাড়তো। যারা ঝিমিয়ে পড়েছে তারাও পদ পেয়ে সক্রিয়ভাবে সাহসী ভূমিকা পালন করতো। কিন্তু কমিটি না হওয়ার কারণে সবাই হতাশ।

তিনি আরো বলেন, ১৬ অগাস্ট নগর বিএনপির দেওয়া নির্দেশনার চিঠি পাওয়ার পর নির্দিষ্ট দিনই কমিটি জমা দিয়েছি। কমিটি জমা দেওয়ার আগে আমাদের নির্বাচনী এলাকার তিনজন নেতা, যারা এ আসন তেকে নির্বাচন করেছেন তাদের সহযোগিতা চেয়েছি কমিটি গঠনে। মোরশেদ খান ও এরশাদ উল্লাহ কমিটি গঠনে কোন গ্রুপিং না দেখেলের ত্যাগী কর্মীরে প্রাধান্য দিয়ে কমিটি করার নির্দেশ দেন। কিন্তু বিগত একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী আবু সুফিয়ানের সহযোগিতা চাইলে তিনি কোন ধরণের সহযোগিতা করতে পারবে না বলে জানান। যার কারণে আমরা তার সহযোগিতা ছাড়াই ত্যাগী ও দলের নিবেদিত নেতাদের দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে জমা দিয়েছি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান চাঁন্দগাঁও থানা কমিটি করতে থানা বিএনপির সভাপতিকে সহযোগিতা না করার কথা স্বীকার করে বলেন, আজমকে তো আমি সভাপতি মানি না। সে তো দলের বিরুদ্ধে কাজ করছে। সে ধানের শীষের বিরুদ্ধে কাজ করছে বিগত একাশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। সে যে দুই নেতার কথা বলছে, তার মধ্যে মোরশেদ সাহেব তো কোন লীয় কর্মকাণ্ডে নেই। তিনি কিভাবে জানবেন কোনো নেতা দলের জন্য নিবেতি আর কোন নেতাকে কমিটিতে রাখা প্রয়োজন সেটা।

কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় তার হাত রয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে নগর বিএনপির এ সিনিয়র নেতা বলেন, কমিটি স্থগিত করার পিছনে আমি কোনো ভূমিকা রাখিনি। তবে কোনো এক নেতা রেখেছেন। দুইজন মানুষ বসে কয়েকজনের নাম দিয়ে একটি প্রেস রিলিজ পাঠিয়ে দিলে তো আর সেটি কমিটি হবে না। কমিটি করতে সবার সাথে বসতে হবে, মতামত নিতে হবে।

জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নগরীর থানা ও ওয়ার্ড কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার জন্য ২০১৮ সালের ১৭ জুলাই থানা ও ওয়ার্ড বিএনপিকে চিঠি দেন। সেই সময় চিঠিতে ২০১৮ সালের ২ অগাস্টের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে নগর বিএনপিকে নির্দেশ দেন। প্রথম চিঠি পাওয়ার পর কোন থানা বা ওয়ার্ড কমিটি পূর্ণাঙ্গ না করলে গত ১০ অগাষ্ট আবারো থানা ও ওয়ার্ড কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশ দিয়ে চিঠি দেয় নগর বিএনপি।

নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কমিটি জমা না দিলে কমিটি বাতিলের হুঁশিয়ারী দিলে থানা ওয়ার্ডের বিএনপির নেতারা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে গত ২৬ অগাস্ট থেকে জমা দেন। ১৫ থানার মধ্যে ৫টি থানা ও ৪৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৫টি ওয়ার্ডের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে অনুমোদন দেন নগর বিএনপি। কিন্তু গত ২৭ অগাস্ট বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে আর কোনো কমিটি গঠন করার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। যার কারণে আলোর দিকে নগর বিএনপি গেলেও মাঝপথে এসে আবারো অন্ধকারে হারিয়ে গেছে।

তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবে রহমান শামীম বলেন, সিটি নির্বাচনের আগে আর কোনো কমিটি না দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্দেশ দিয়েছে। তবে এর বাইরে আর কোন কিছু আমি জানি না।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর বলেন, কমিটি গঠন প্রক্রিয়া স্থগিত করেনি, দেখে শুনে দিতে বলেছে। যেন কমিটি করার পর যে সব সমস্যাগুলো সেটি যেন না হয় তার কারণে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এবিষয়ে নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের সাথে কথা বলার জন্য মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সিভয়েস/এমআই/এএইচ

মিনহাজুল ইসলাম

সর্বশেষ