Cvoice24.com


রোহিঙ্গাদের অপরাধের মাত্রা বাড়ছেই, আতঙ্কে স্থানীয়রা

প্রকাশিত: ১৬:০১, ৩১ আগস্ট ২০১৯
রোহিঙ্গাদের অপরাধের মাত্রা বাড়ছেই, আতঙ্কে স্থানীয়রা

ছবি: সিভয়েস

বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা মাদক, খুন, ধর্ষণ, অপরহণ, ডাকাতি, পুলিশ ও সাংবাদিকের উপর হামলাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালাচ্ছে।

কক্সবাজার পুলিশ সুপার কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত দুই বছরে ৪৩টি হত্যাসহ নানা অপরাধে ৪৭১ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে আসামি করা হয়েছে ১ হাজার ৮৮ জনকে। সম্প্রতি রোহিঙ্গারা টেকনাফ ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ওমর ফারুক’কে অপহরণ পুর্বক গুলি করে হত্যা করার পরে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

সচেতন মহল বলছেন, মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হলেও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছেনা রোহিঙ্গাদের। তারা নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালাচ্ছে। যার ফলে অবনতি হচ্ছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা। যার প্রভাব পড়তে পারে প্রত্যাবাসনে। তাই প্রত্যাবাসনের আগ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে বাউন্ডারি দিয়ে ঘেরা দেয়ার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা নিরাপত্তা জোরদারের কথা বলছেন সচেতন মহল।

জেলা পুলিশ সুপার কার্যলয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারের সেনাদের নির্যাতন হতে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার দিন ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে গত দুই বছরে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে উখিয়া ও টেকনাফ থানায় ৪ শত ৭১টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ১ হাজার ৮৮ জন রোহিঙ্গাকে আসামি করা হয়েছে। এরমধ্যে ৪৩ টি হত্যা মামলা , ৩৬ টি অস্ত্র মামলা, ২০৮ টি মাদক মামলা, ৩১ টি ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার মামলা, ৩৭ টি ফরেনার্স অ্যাক্টে, ১৫ টি অপহরণ মামলা, ২১ টি বিশেষ ক্ষমতা আইনে, ১ টি পুলিশের ওপর হামলায়, ৯ টি ডাকাতি ও ডাকাতির চেষ্টার মামলা, ২৪ টি মানবপাচার মামলা ও ৪৬ টি অন্যান্য অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। 

মিয়ানমারে নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে ৩৪ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি খাদ্য, চিকিৎসা, বিনোদন ও নিরাপত্তা সহ সব ধরণের সহযোগিতা করা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের নিরাপদে রাখাইনে ফেরত পাঠাতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সরকার। কিন্তু এদিকে রোহিঙ্গাদের অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। তাদের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ও ইয়াবা উদ্ধার হচ্ছে।

গত ২২ আগস্ট রাতে টেকনাফের হ্নীলার ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ওমর ফারুক’কে বাড়ির সামনে থেকে অপহরণ পুর্বক গুলি করে হত্যা করে রোহিঙ্গা ডাকাত সেলিমের নেতৃত্বে একদল রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় হাত বাড়ানো এই যুবলীগ নেতা রোহিঙ্গাদের হাতে খুন হওয়ায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ স্থানীয় জনগণ।

সচেতন ব্যক্তিত্ব আইটি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলমঙ্গীর জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু তাদের অনেকে এটাকে অপব্যবহার করছে। বর্তমান সময়ে তারা নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে স্থানীয়দের ক্ষতি করছে। বিঘিœত করছে আইনশৃঙ্খলা । এই অবস্থায় ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তার মধ্যে নিয়ে আসা জরুরি হয়ে পড়েছে। যাতে করে রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে বের হয়ে কোন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালাতে না পারে। আর যত দ্রæত সম্ভব তাদেরকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি।

শহিদুল্লাহ কায়সার নামে স্থানীয় এক সাংবাদিক জানান, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছেনা। যদি কোন রোহিঙ্গা কক্সবাজার অথবা দেশের কোথাও অপকর্ম করে পুনরায় ক্যাম্পে ঢুকে পড়ে তাহলে তাকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়বে। যদি রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হয় তাহলে শুধু রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা আইন তৈরি করতে হবে। যে আইনে সুনির্দিষ্ট উল্লেখ থাকবে কোন রোহিঙ্গা তার জন্য নির্ধারিত এলাকার বাইরে গেলে সে শাস্তির আওতায় পড়বে। আর এই তথ্য রোহিঙ্গাদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।

জাহাঙ্গীর আলম জেক নামে একজন সমাজসেবক জানান, রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে পুরো বাংলাদেশে। তাই তাঁদের বাউন্ডারির মাধ্যমে ঘেরা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা এবং যতদ্রুত সম্ভব নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা। 

রোহিঙ্গাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির কথা স্বীকার করে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন জানান, রোহিঙ্গা শিরিবে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক হত্যার পর রোহিঙ্গা শিবিরে উত্তেজনা নিরসনের লক্ষ্যে ৩টি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। টেকনাফের জাদিমুড়া, শালবাগান, নয়াপাড়া, আলীখারী ও লেদা শিবির এলাকায় এই ৩ টি ক্যাম্প স্থাপন করা হবে।

এছাড়া ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখার জন্য ইতিমধ্যে টহল পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। বৃদ্ধি করা হয়েছে চেকপোস্ট। এছাড়া উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তুাব পাঠানো হয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সীমান্ত দেয়ালের মাধ্যমে তাদের একজায়গায় আবদ্ধ করে রাখতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। যাতে করে রোহিঙ্গাদের সাথে স্থানীয়দের মধ্যে কোন ধরনের ঝগড়া-বিবাধ সৃষ্টি হতে না পারে। পাশাপাশি স্থানীদেরও বোঝানো হচ্ছে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে। 

রোহিঙ্গাদের নানা অপরাধ কর্মকান্ডে এখানকার পরিবেশ এখন হুমকির মুখে। জেলার মানুষ আতঙ্কিত, উদ্বিগ্ন। এসব রোহিঙ্গাদেও বাউন্ডারির মাধ্যমে একজায়গা করে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

-সিভয়েস/এএস/এসএ

ওমর ফারুক হিরু, কক্সবাজার

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়