Cvoice24.com

গণপরিবহন সংকট
যাত্রীদের পকেট কাটছে গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক জোট

প্রকাশিত: ১৫:৪৮, ২৪ আগস্ট ২০১৯
যাত্রীদের পকেট কাটছে গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক জোট

ফাইল ছবি।

চট্টগ্রামে গণপরিবহনের সংকট রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। পুরো নগরীর ৫৫টি রুটে নির্ধারিত পাঁচ হাজারের বেশি চাহিদা থাকলেও আঞ্চলিক ট্রান্সপোর্ট কমিটি (আরটিসি) অনুমোদন দিয়েছে মাত্র চার হাজার গাড়ি। এতে ৬২ লাখ জনগণের এ নগরে প্রায় এক হাজারেরও বেশি গণপরিবহন সংকট রয়েছে। ফলে একদিকে বাড়ছে জনদুর্ভোগ, অন্যদিকে একশ্রেণির পরিবহন ব্যবসায়ী অনটেস্ট এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামিয়ে ফায়দা লুটছে। তারা শ্রমিকদের সঙ্গে একজোট হয়ে এ সংকটকে কাজে লাগিয়ে ইচ্ছেমত আদায় করছে ভাড়া।

পরিবহন নেতাদের দাবি, আঞ্চলিক ট্রান্সপোর্ট কমিটি নতুন গাড়ি নামানোর অনুমোদন দিলে আমরাও সংযোজন করতে পারবো, ফলে সংকট থাকবে না।

বাংলাদেশ রোড এন্ড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটির (বিআরটিএ) তথ্যমতে, চট্টগ্রাম মহানগরীর ১৬টি রুটে বাস-মিনিবাস চলাচল করছে। এসব রুটে নির্ধারিত এক হাজার ৫৪৫টি গাড়ির চাহিদা থাকলেও আঞ্চলিক ট্রান্সপোর্ট কমিটি এক হাজার গাড়ি চলাচলের অনুমতি দিয়েছে। একই সঙ্গে আরও ১৮টি রুটে চলাচল করছে হিউম্যান হলার। এ ১৮ রুটে হিউম্যান হলারের নির্ধারিত চাহিদা রয়েছে এক হাজার ৪৫৬টি। কিন্তু চলার অনুমতি পেয়েছে এক হাজার ১১৭টি। একই সঙ্গে ২১ রুটে অটোটেম্পো চলছে। এই ২১ রুটে নির্ধারিত চাহিদা দুই হাজার ৩৯৭টি, আর আরটিসি অনুমোদন দিয়েছে এক হাজার ৮৭২টি। দেখা যাচ্ছে কাগজে-কলমেও চাহিদার তুলনায় প্রায় দেড় হাজার গাড়ি কম চলাচল করছে নগরীতে। এর মধ্যে আবার অধিকাংশ গাড়ির ফিটনেস না থাকায় নিয়মিত চলতে পারছে না। ফলে এক ধরনের গণপরিবহনের সংকট দেখা দিয়েছে।

বাস ও অটোটেম্পো চলে এমন দুই গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম রুটের চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নগরীর ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ রুট হিসেবে বিবেচিত অক্সিজেন থেকে চকবাজার হয়ে বারেকবিল্ডিং পর্যন্ত ১নম্বর রুট। এ রুটে সিএনজি চালিত অটোটেম্পো (টিকটিকি) চলাচল করে। আর এ রুটে নির্ধারিত আনুমানিক চাহিদা রয়েছে ২৬২টি। কিন্তু অনুমোদনের প্রায় সবকটি গাড়ি চলাচলের অনুমতি থাকলেও রুটটিতে নিয়ম না মেনেই গাড়ি চলছে। রুটটি দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে একটি অক্সিজেন থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত, অন্যটি চকবাজার থেকে বারেকবিল্ডিং পর্যন্ত চলাচল করছে। এতে প্রয়োজনের তুলনায় কিছু গাড়ির সংকট দেখা দিয়েছে। তাতে বিপাকে পড়েছে চকবাজার থেকে বারেকবিল্ডিং রুটের যাত্রীরা। কারণ চকবাজার এলাকায় বেশ কয়েকটি স্কুল, কলেজ থাকার কারণে অন্যান্য রুট থেকে কয়েকগুণ বেশি যাত্রীর চাপ থাকে। আর এসব যাত্রীর জন্য যে কয়টি নির্ধারিত গাড়ি আছে, সেগুলো প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। ফলে প্রতিদিন ভোগান্তির পাশাপাশি অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হচ্ছে যাত্রীদের।

এদিকে অতিরিক্ত ভাড়ার অভিযোগের পর কয়েক দফা অভিযান চালিয়েছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। অভিযান চলাকালে অসাধু পরিবহন মালিকরা ওই রুটে গাড়ি চলাচলসহ বন্ধ করে দেয়। এতে বিপাকে পড়ে জনসাধারণ। আবার গাড়ি সমূহে অসঙ্গতি থাকলেও বরাবরের মত মামলা এবং জরিমানা গুণতে হয় চালক হেলপারদের।

কলেজ ছাত্রী মেহনুর জান্নাত বলেন, প্রতিদিন দেওয়ানহাট থেকে চকবাজার পর্যন্ত আসা-যাওয়া করতে হয়। মাঝে মাঝে আমরা গাড়ির জন্য অপেক্ষা করি। কিন্তু যে পরিমাণ গাড়ির প্রয়োজন তা নেই। ফলে শত যাত্রীর সঙ্গে ভিড় ঠেলে টিকটিকিতে উঠতে হয়। আর একটি গাড়িতে প্রায় ১২ থেকে ১৪ যাত্রী বসে, আর কিছু ঝুলে ঝুলে যায়। এটা খুবই বিরক্তিকর।

মহসিন কলেজের ছাত্র মামুন বলেন, টিকটিকি গাড়িতে যাত্রী নেওয়ার অনুমতি আছে চালকসহ মোট নয় জনের। কিন্তু তারা যতটুকু জায়গা আছে সবগুলো চেপে চেপে নেয়। ম্যাজিস্ট্রেট মাঝখানে সিটগুলোকে কেটে নয় জনের অনুপাতে নিয়ে আসার জন্য নির্দেশনা দিলেও তা মানে কয়জনে?

অন্যদিকে বাস চলাচলের রুটে দেখা যায়, শাহ আমানত সেতু থেকে চকবাজার হয়ে কোতোয়ালি পর্যন্ত ১নম্বর রুট ও কালুরঘাট ব্রিজ থেকে চকবাজার হয়ে লালদিঘী পর্যন্ত ২নম্বর রুট। এ দুই রুটে ১৭৫টি গাড়ির আনুমানিক চাহিদা থাকলেও দুই রুট মিলে বাস চলাচল করছে মাত্র ৭৩টি। এরই মধ্যে অধিকাংশ গাড়ি ফিটনেস না থাকায় চলাচলের অনুপযোগী। আর নগরীর প্রধান ও ব্যস্ততম ১০নম্বর রুটে বাস-মিনিবাস চলাচল করে ২০৫টি। কিন্তু কালুরঘাট থেকে পতেঙ্গা সি-বিচ পর্যন্ত এ রুটে প্রয়োজনের তুলনায় গাড়ি নেই। বিশেষ করে সকাল-সন্ধ্যায় মারাত্মক সংকট দেখা দেয়। আবার কিছু কিছু গাড়ি ইপিজেডের রিজার্ভ ভাড়ায় চলে যায়। তখন পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। এ সংকটকে পুঁজি করে ফায়দা লুটছে বাস মালিক-শ্রমিকরা।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক পরিবহন শ্রমিক জানান, বর্তমানে বাস মালিকরা সিন্ডিকেট করে ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নতুন গাড়ি সংযোজন করতে দেয় না। যে কেউ চাইলে এ ব্যবসায় আসতে পারে না। এলেও মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হয়। ফলে যেসব মালিকের গাড়ি আছে, তারাই লাভবান হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব বেলায়েত হোসেন বলেন, আমরা সিটিং সার্ভিসের জন্য নতুন ৭০টি গাড়ির আবেদনসহ অনেক গাড়ি নামানোর আবেদন করেছি। আরটিসি অনুমতি দিলে নতুন অনেক গাড়ি সংযোজন করা হবে। এতে সংকট কিছুটা কমে আসবে।

চট্টগ্রাম পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মুছা বলেন, আমরা চাইবো সমাজের কোন বিত্তশালী যদি পরিবহনের দিকে নজর দেন তাহলে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আমি শুনেছি এস. আলম গ্রুপ কিছু গাড়ি মহানগরে নামানোর কথা। যদি তারা প্রয়োজন মাফিক গাড়ি মহানগরে নামান তাহলে পরিবহন সংকট দূর হয়ে যাবে বলে মনে করি।

বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম মনজুরুল হক বলেন, ‘বন্দরনগরী হিসেবে খ্যাত এ শহরে গণপরিবহন বলতে আসলে কিছুই নেই। যেগুলো চলছে তারমধ্যে কিছু চলাচলের উপযোগী হলেও বাকিগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। চট্টগ্রামের এই পরিবহন ব্যবস্থা দেখে খুব কষ্ট হয়। যে নগরীর হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে পুরো দেশ, সে নগরবাসীর একমাত্র কষ্ট হচ্ছে গণপরিবহন। নগরবাসীকে গণপরিবহনের এ দুর্ভোগের হাত থেকে বাঁচাতে পারেন একমাত্র শিল্পপতিরা। যারা চাইলে সড়কে নামাতে পারেন উন্নত বিশ্বের আদলে আধুনিক বাস।’

-সিভয়েস/এসএ

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়