Cvoice24.com

পাবেন এলাকাবাসীও
২ লাখ ১২ হাজার রোহিঙ্গা পরিবার পাচ্ছে কোরবানির মাংস

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ৮ আগস্ট ২০১৯
২ লাখ ১২ হাজার রোহিঙ্গা পরিবার পাচ্ছে কোরবানির মাংস

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া সাড়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার জন্য এবারেও উৎসবমুখর পরিবেশে কোরবানির করা হয়েছে। তাদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হবে কোরবানির মাংস। তবে এবারে একটি ভিন্ন উদ্যোগ রয়েছে। সেটি হচ্ছে রোহিঙ্গাদের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় জনগণের মাঝেও কোরবানির মাংস বিতরণ করা হবে।

জেলা প্রশাসকের সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত প্রায় ২ লাখ ১২ হাজার পরিবারের জন্য কোরবানির মাংস বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দকৃত কোরবানির মাংস থেকে ৩০ ভাগ বিতরণ করা হবে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় জনগণের মাঝে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এনজিও সংস্থার উদ্যোগে রোহিঙ্গাদের মাংস বিতরণের তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে। পাশাপাশি যেসব ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় জনগণ কোরবানির মাংস পাবে তাদেরও তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, মিয়ানমারে নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের এই দেশে এটি তৃতীয় কোরবার। গত দুই কোরবানে রোহিঙ্গাদের জন্য যথাযথ কোরবানি মাংসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তার উৎসবের মধ্য দিয়ে কোরবানির ঈদ পালন করেছিল। এবারেও প্রায় ২ লাখ ১২ হাজার পরিবারের জন্য কোরবানির মাংস বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে প্রতি পরিবারের মাঝে কি পরিমাণ মাংস বিতরণ করা হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবারের জন্য কোরবানির মাংস নিশ্চিত করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে স্থানীয় জনগণ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং হচ্ছে। তাই এসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কথা মাথায় রেখে রোহিঙ্গাদের বিতরনের জন্য যত মাংস নির্ধারণ করা হয়েছে তার ৩০ ভাগ স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরনের নির্দেশনা রয়েছে। বরাদ্দকৃত মাংসের বাকী ৭০ ভাগ পাবে রোহিঙ্গারা।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম জানান, বিভিন্ন ব্যক্তি ও এনজিওর মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জন্য যেসব কোরবানির পশু পেতে যাচ্ছি এতে কত সংখ্যা হবে তা এখনও নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। সবগুলো একত্রিত করে যেখানে যতটা দরকার ততটা হিসাব করে দেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ক্যাম্প ইনচার্জদের মাধ্যমে মাংস বন্টন করা হবে। 
তিনি আরও বলেন, জাতিসঙ্গের তথ্যানুযায়ী উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৫৭ জন। পরিবার রয়েছে প্রায় ২ লাখ ১২ হাজার।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, তুরষ্কভিত্তিক এনজিও ডায়নেট ফাউন্ডেশন ৫০ হাজার কেজি মাংস বিতরণ করবে রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মাঝে। ওই এনজিওর এক কর্মকর্তা জানান, বিশ্বের ১৬০টি দেশের তারা কোরবানির মাংস বিতরণ করবেন। এতে সর্বোচ্চ বিতরণ হবে কক্সবাজরে উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গাদে ও স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে। আশা করা যাচ্ছে ২-১ দিনের মধে সবকিছু চুড়ান্ত হয়ে তালিকার কাজ সম্পন্ন হবে।


 
উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের লিয়াকত মিয়া নামে এক রোহিঙ্গা জানান, বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ। আমরা এই দেশে আশ্রয়ে থাকার পরেও স্বাচ্ছন্দে কোরবানির ঈদ উদযাপন করতে পারছি। এইটা আমাদের কাছে অনেক বড় পাওয়া। 

রাবেয়া খাতুন নামে এক রোহিঙ্গা নারী জানান, অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে গত দুই বছর আগে ঠিক এই সময় আমরা নিজ দেশ মিয়ানমার ছেড়ে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছি। এখানে এবারসহ ৩ বার কোরবানির ঈদ উৎযাপন করতে যাচ্ছি। শুনেছি গত ২ বারের মতো এবারেও প্রত্যেকের কাছে কোরবানের মাংস পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এই সহযোগিতার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। তবে আর সহযোগিতার উপর বাচঁতে মন চাইছে না। আমরা নিরাপদ প্রত্যাবাসন চাই। যাতে করে দেশে গিয়ে আনন্দের সাথে ঈদ উদযাপন করতে পারি। 

আশ্রিত রোহিঙ্গারা যেন শান্তিপূর্ণভাবে আনন্দের সঙ্গে কোরবানির ঈদ উৎযাপন করতে পারে সেই লক্ষে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় জনগণেরও একই প্রত্যাশা।

সিভয়েস/এএইচ

ওমর ফারুক হিরু, কক্সবাজার

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়