Cvoice24.com

চট্টগ্রামে আজ, বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪

সময় ঘন্টা মিনিট সেকেন্ড

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগ
কমিটি দুই সদস্যের, তারাও স্বেচ্ছাচারী!

প্রকাশিত: ১১:০৮, ৭ আগস্ট ২০১৯
কমিটি দুই সদস্যের, তারাও স্বেচ্ছাচারী!

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক

মেয়াদোত্তীর্ণ দুই সদস্যের কমিটি দিয়েই চলছে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের রাজনীতি। দীর্ঘদিন পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় হতাশা বাড়ছে এই ইউনিটের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মাঝে। এছাড়া দুই সদস্যের মেয়াদোত্তীর্ণ এই কমিটির বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও সমন্বয়হীনতার অভিযোগ রয়েছে। ফলে সংগঠনকে গতিশীল করতে দ্রুত সময়ে এই ইউনিটে সম্মেলন করার দাবি উঠেছে তৃণমূল থেকে।

জানা গেছে ২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন। এসময় সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে সম্মেলন আয়োজনে অনিয়মের অভিযোগ এনে বিক্ষুদ্ধ কর্মীদের হামলার মুখে পন্ড হয়ে যায় সম্মেলন। ফলে সম্মেলন করে কমিটি গঠনে উত্তর জেলা ছাত্রলীগের দীর্ঘদিনের রেওয়াজ ভঙ্গ করে কেন্দ্র থেকে দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়।

২০১৮ সালের ৫ মে এক বছরের জন্য উত্তর জেলা ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন সাক্ষরিত ঐ কমিটিতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পদে মিরসরাইয়ের তানভীর হোসেন তপু ও সাধারণ সম্পাদক পদে ফটিকছড়ির রেজাউল করিমকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

এদিকে মেয়াদের এক বছর শেষ হয়ে গেলেও এই সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে ব্যর্থ হয় তারা। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় এই ইউনিটের নেতাকর্মীদের মধ্যে বাড়ছে হতাশা। এছাড়া দুই সদস্যের এই কমিটির বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। বিষয়টি এতটাই গুরুতর যে, জেলার বিভিন্ন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকরা মিলে কেন্দ্রীয় সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের কাছে গিয়ে অভিযোগও করে এসেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক নেতা সিভয়েসকে এই তথ্য জানান।

তিনি বলেন, উত্তর জেলার বিভিন্ন উপজেলা ইউনিটের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকরা একত্রে এসে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের কাছে অভিযোগ করেছে শুনেছি। তাদের অভিযোগ কারও সাথে কোন ধরণের সমন্বয় ছাড়া স্বেচ্ছাচারীভাবে সংগঠন চালাচ্ছে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

এই বিষয়ে চট্টগ্রাম উত্তর জেলার আওতাধীন একটি উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিভয়েসকে বলেন, জেলা কমিটি হয়েছে এক বছর হয়ে গেছে। এর মধ্যে উনারা আমাদের নিয়ে একবারও বসেননি। উনাদের যখন যা মন চায় করে যাচ্ছেন। আমাদের সাথে কখনো কোন সমন্বয়ও করেন না। এমনকি জেলা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার ক্ষেত্রেও আমাদের কোন মতামত নেয়া হচ্ছে না। এসব মেনে নেয়া সম্ভব না বলেই আমরা কেন্দ্রে অভিযোগ জানিয়েছি। কেন্দ্র এইসব অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নিবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছে। 

অন্যদিকে মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে না পারা হতাশাজনক মন্তব্য করে তিনি বলেন, এক বছর পার হয়ে গেল। উনারা আজ পর্যন্ত কমিটির তালিকা পর্যন্ত প্রস্তুত করতে পারেননি। সুশৃঙ্খল রাজনীতির জন্য চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের একটা সুনাম ছিল। এখন সেটাও নষ্ট হতে বসেছে।

উত্তর জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান দুই সদস্যের কমিটিকে মেয়াদোত্তীর্ণ ও ব্যর্থ দাবি করে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ও ইমাম গাজ্জালী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, ২৭ ফেব্রুয়ারি সম্মেলন পন্ড হওয়ার পর ২০১৮ সালের ৫ মে কেন্দ্র থেকে এক বছরের জন্য দুই সদস্যের একটি কমিটি দেয়া হয়েছে। এক বছরের মেয়াদ শেষ হয়েছে ৩ মাস আগে। এই সময়ে তাদের ব্যর্থতার কারণে উত্তর জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি। এখন পর্যন্ত তালিকাই প্রস্তুত করতে পারেনি তারা। তাছাড়া আমি নিজেও আগের কমিটির সদস্য ছিলাম। এখনো রাজনীতিতে সক্রিয় আছি। কিন্তু তারা একদিনের জন্যও আমাদের সাথে কোন আলাপ আলোচনা করেনি। এটা তারা কারো সাথেই করেনি। তারা গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি। ইউনিটগুলোতে বলার মত সাংগঠনিক কোনো তৎপরতা চালাতে পারেনি। জেলাতেও তাদের বলার মত কোন কর্মসূচি নেই। এই কমিটি ব্যর্থ হয়েছে। তাই সেপ্টেম্বরের শুরুতে এই কমিটি বাতিল করে উত্তর জেলা ছাত্রলীগের নতুন সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করার দাবি করছি।

জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য রিফাতুল আলম অভি সিভয়েসকে বলেন, আমি জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী ছিলাম, এর আগের কমিটিতে সদস্য ছিলাম। কিন্তু জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হওয়ার পর আমাদের কখনো ডাকা হয়নি। বরং আমার সহকর্মীদের ডেকে ডেকে বলা হয়েছে, আমার সাথে চলাফেরা করলে তাদের কোথাও কোন কমিটিতে পদ দেয়া হবে না।

বর্তমান কমিটিকে পকেট কমিটি হিসেবে অবিহিত করে অভি বলেন, আমরা ৬৪ জন সভাপতি সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়ন ফরম কিনেছি। আমি নিজে তৎকালীন সভাপতি বখতেয়ার সাঈদ ইরানের কাছ থেকে ফরম কিনেছি। কিন্তু সম্মেলন পন্ড হওয়ার পর উনারা ঘোষণা দিলেন তপু ছাড়া সভাপতি পদে আর কোন প্রার্থী নেই। যদি তাই হবে তাহলে আমাদের কাছ থেকে ২৫০০ টাকা করে ফরম বিক্রির নাটক কেন করা হলো? সংগঠনের স্বার্থে এই কমিটি বাতিল করে সম্মেলনের ঘোষণা দেয়ার দাবি জানান তিনি।

এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করা হয় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর হোসেন চৌধুরী তপুর সাথে। মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, এক বছর শেষ হয়ে গেছে এটা সত্য। কিন্তু বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একটা বিশাল সংগঠন। এখানে নির্ধারিত সময়ে অনেক কিছু করা সম্ভব নাও হতে পারে। আর আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার জন্য কাজ করছি। এই মাসেই কমিটির তালিকা তৈরি হবে। সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় কমিটি আমাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দিবে বলে আশা করছি।

তাদের বিরুদ্ধে আনা বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তপু বলেন, আমাদের সাথে সব ইউনিটের সমান যোগাযোগ আছে। আমি আগের কমিটির সদস্য ছিলাম। আমার সেক্রেটারিও অনেকদিন থেকে জেলায় সক্রিয়। আমরা সবাইকে নিয়েই রাজনীতি করি। যারা কেন্দ্রে অভিযোগ করেছেন তারা অসত্য অভিযোগ করেছেন। এসবের কোন ভিত্তি নেই।

-সিভয়েস/এআরটি/এসএ

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়