Cvoice24.com


জনতার প্রশ্ন, মেয়রের জবাব

প্রকাশিত: ১২:৫৮, ২৫ জুলাই ২০১৯
জনতার প্রশ্ন, মেয়রের জবাব

ছবি : সিভয়েস

নগরীর জামালখান ওয়ার্ডে রীমা কনভেনশন সেন্টার। সময় বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা ছুঁইছুঁই। সবাই মেয়রের অপেক্ষায় প্রহর গুণছেন। সবার চোখের চাহনিতেই স্পষ্ট, মাথায় কেবল ঘুরপাক খাচ্ছে, নানা প্রশ্ন। মেয়র হাজির হলেন অনুষ্ঠানস্থলে। বললেন, আমি চার বছরের দায়িত্বে কি করেছি, কি করতে পারিনি, আপনাদের কি প্রত্যাশা ছিল, কেন করতে পরিনি, সব নিয়ে আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন। সত্যিকার অর্থে নিজের দায়িত্ববোধ থেকে, কোনো লোক দেখানো নিয়মতান্ত্রিক বক্তব্য দেওয়ার জন্য নয়। আপনার রাজনৈতিক পরিচয় যা হোক না কেন, সামাজিক পরিচয় যা-ই হোক না কেন, আপনি নির্দ্বিধায় সমালোচনা, আলোচনা, প্রশ্ন ও পরামর্শ দিতে পারবেন। আজকে থেকে শুরু হলো প্রশ্নোত্তরের পালা। পর্যায়ক্রমে ৪১ ওয়ার্ডজুড়ে আপনাদের কথা শুনতে ও জবাব দিতে আমি হাজির হয়েছি।

এরপর শুরু জনতার প্রশ্ন করার পালা.....

মুন্নী সেনগুপ্তা নামের মধ্যবয়সী এক মহিলা প্রথমেই প্রশ্ন করলেন। তিনি জেএম সেন হলের পাশেই থাকেন চার বছর ধরে। তিনি বলেন, আমি জামালখানে সড়কে কখনও পানি উঠতে দেখিনি। কিন্তু এই মৌসুমে অনেক পানি দেখেছি। এটার জন্য আপনার (মেয়র) কাছে একটি পরামর্শ আছে, আপনি যদি খালের মুখে খুব শক্ত কোনো জাল বা নেট দিতে পারেন, তাহলে পলিথিন বা প্লাস্টিকগুলো জালে আটকে গিয়ে খালে প্রবেশ করতে পারবে না।

কথা বলার এক পর্যায়ে ওই মহিলা হঠাৎ কান্নাজড়িত কন্ঠে বলে ওঠলেন, আজকে আপনার সামনে কথা বলতে পারছি। তবে যখন সিটি কর্পোরেশন বা আপনার বাসায় যাই, তখন খুব অপমানিত হই। নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা থাকেন, তারা  ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখেন। আপনি তো নগরপিতা, পিতার কাছে তো আমরা অনেক কিছু নিয়ে যেতে পারি। এমনে দেখতেও যেতে পারি। অনেকদিন ধরে কথাগুলো জমিয়ে রেখেছি আপনাকে বলার জন্য। 

জবাবে মেয়র বললেন, এই নগরে জলাবদ্ধতা কোনো ছোটখাট সমস্যা নয়। একটি খালে জাল বা নেট দিলে সেটা সমাধান হয়ে যাবে- এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। আপনি সরল মনে পরামর্শ দিয়েছেন, তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। খালের মুখে জাল বা নেট দিলে সেখানে পলিথিন আটকে যাবে এমন নয়, পলিথিন আর শুধু ময়লা নয়, পানিও আটকে যাবে। এক্ষেত্রে পানিপ্রবাহ আরও বিঘ্নিত হবে। তাই আপনার প্রস্তাব বিনয়ের সাথে দ্বিমত পোষণ করছি। 

আর দ্বিতীয় যে বিষয়টি বলেছেন, সেটা আপনার সরল স্বীকারোক্তি। তবে যে বিষয়টি অনুভব করি, আমি একজন মেয়র হিসেবে যত সহজে মানুষ আমার কাছে আসতে পারে, মনে হয় না পূর্ববর্তী কেউ এভাবে সহজ করেছে। আমি এখন মেয়র হয়েছি, তবে এর আগে তো কর্মী ছিলাম। ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি করে এসেছি। সেই সুবাদে অনেক বড় ব্যক্তিত্ব ও নেতার সান্নিধ্যে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। আমরা কোনোদিন অকারণে, অহেতুক ও অপ্রয়োজনে নেতার কাছে যেতাম না। কেননা আমরা মনে করতাম নেতার সময়ের মূল্য আছে। আর আপনাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। এই পর্যন্ত যত বিষয় নিয়ে আমার কাছে এসেছেন, প্রতিটি কাজই শতভাগ বাস্তবায়ন করেছি। তারপরও যদি আপনারা ভুল বোঝেন, তাহলে আমার ক্ষমা চাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। এছাড়াও মাঝে মাঝে আমার অফিসে এসে অনেকে মন্তব্য করেন, এটা কি মেয়রের অফিস নাকি জনসমাবেশ।

জামালখান বাইলেনের বাসিন্দা শাহান আক্তার বলেন, আমাদের পাশে একটি বড় নালা রয়েছে। যেটিতে বছরের পর বছর ময়লা আবর্জনা ও প্লাস্টিক জমে প্রায় ভরে গেছে। সেটা সংষ্কার নিয়ে আমি জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনের কাছে গিয়েছিলাম। ওনি বলেছেন, সেটা সংষ্কার করার দায়িত্ব সিডিএ’র। এরপর সিডিএ’তে গেলে ওরা জানান, এটা কর্পোরেশনের দায়িত্ব। আসলে এটা কার দায়িত্ব? নাকি একপক্ষের উপর আরেকপক্ষ দায় চাপিয়ে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে?

জবাবে মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। ইঞ্জিনিয়ারিং ভাষায় খালকে প্রাইমারি ড্রেন, এরচেয়ে ছোট নালাকে সেকেন্ডারি ড্রেন বলা হচ্ছে। মেগা প্রকল্পের অধীনে প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি খাল পরিষ্কার ও সংষ্কার করা হচ্ছে। তবে কোনগুলোর কাজ করা হচ্ছে তার সুর্নিদিষ্ট তালিকা চেয়ে সিডিএকে বার বার চিঠি দিয়েছি, কিন্তু রহস্যজনকভাবে তারা জানায়নি। মেগা প্রকল্পের আওতাধীন খালগুলোর ৩০২ কিলোমিটারের তালিকা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। যাতে ওভারলেপিং না হয়। কিন্তু সিডিএ’র তৎকালীন চেয়ারম্যান তা দেননি। এখন নতুন চেয়ারম্যান জানিয়েছেন ৩৮৪ কিলোমিটার খাল সিডিএ করবে। ফলে আমরা চাইলেও বড় নালাগুলোতে কাজ করতে পারছি না।  কেননা তাতে আইনি বাধ্যবাধকতা আছে ।

মেয়র উদাহরণ টেনে বলেন, সিডিএ ফ্লাইওভার করার জন্য সিটি কর্পোরেশনের কাছে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তাগুলো নেয়। আমরা তাদের হস্তান্তর করি। এরইমধ্যে ওয়াসার প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ওই রাস্তা কর্তনের জন্য আমাদের কাছে বিধিমত অনুমতি নেয়। তার জন্য ওয়াসা সিটি কর্পোরেশনকে ফিও দেয়। তখন সিডিএ আপত্তি তোলে রাস্তটি আমরা ফ্লাইওভারের জন্য নিয়েছি। তাই যদি ওয়াসার রাস্তা কাটতে হয়, তাহলে সিডিএ থেকে অনুমতি নিতে হবে এবং টাকাও সিডিএকে দিতে হবে। সুতরাং আমরা চাইলেও আগ বাড়িয়ে কিছু করার সুযোগ নেই। 

২১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক বলেন, মেয়র আমাদের জামালখানে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কাউন্সিলরের চেষ্টায় সৌন্দর্য বর্ধন হয়েছে। তবে সব অর্জন ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি জামালখানে স্কুল ছুটির সময় যানজট কমানো না যায়। তার জন্য স্কুলগুলো ছুটির সময় ১৫ মিনিট তারতম্য করার প্রস্তাব করছি।

এরপরই তিনি অভিযোগ করেন, জামালখানে সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত একটি অবৈধ বাজার বসে। যেখানে পুলিশ, সিটি কর্পোরেশন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা চাঁদাবাজি করে। প্রতিটি ভ্যান থেকে দেড়শ’ থেকে চারশ’ টাকা  আদায় করা হয়। এই অবৈধ বাজার উচ্ছেদ নিয়ে মেয়রের কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন কি না জানতে চান তিনি।

জবাবে মেয়র পাল্টা প্রশ্ন করেন, সিটি কর্পোরেশনের কে চাঁদা নেন? তার নাম বলেন। তখন অভিযোগকারী নাম জানেন না জানান। কিন্তু পরক্ষণেই সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নকর্মী শাহজাহান চাঁদা নেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। তখন মেয়র অভিযোগের সত্যতা থাকলে অবশ্য ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।

এছাড়াও চাঁদা পুলিশের মধ্যে কে নেন, জানতে চাইলে অভিযোগকারী কোনো উত্তর দিতে পারেননি। নির্ভয় দিয়ে জানতে চান, কোন রাজনৈতিক লোক চাঁদা আদায় করেন? অভিযোগকারী তার নামও বলতে পারেননি। তখন মেয়র বলেন, আমি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আর আপনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। রাজনীতির সাথে জড়িত কেউ চাঁদাবাজি করছে, সেখানে দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় আপনার কি ভূমিকা রয়েছে ? আপনি তো আমাকে আগে থেকে জানাতে পারতেন। তাছাড়া আপনি সুনির্দিষ্ট করে বলতেও পারছেন না।

যানজটের বিষয়ে মেয়র বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন অনুমোদন দেয় সিডিএ, পাঠের অনুমোদন দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মেয়র তাৎক্ষণিক কিছু সমস্যার সমাধান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে ১৫ মিনিট নয় ৩০ মিনিট তারতাম্য করে ছুটি দেওয়ার জন্য তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের সাথে কথা বলার আশ্বাস দেন।

বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী বলেন, জামালখানের দুঃখ আসকারদীঘি। মশার প্রজনন ক্ষেত্র এটি। এ দীঘি পরিষ্কার ও দৃষ্টিনন্দন করলে জামালখানের মানুষ উপকৃত হবে।

এর প্রেক্ষিতে মেয়র বলেন, আসকার দীঘি ব্যক্তি মালিকানাধীন। উনার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।

হকার নেতারা জানতে চান, ফুটপাত উচ্ছেদের কারণে হকাররা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং তাদের পুর্নবাসন করার কোনো উদ্যোগ সিটি কর্পোরেশনের আছে কি না?

জবাবে মেয়র বলেন, হকারদের জন্য পথচারীরা হাঁটতে পারেন না। এমনকি আপনারা (হকাররা) ফুটপাত ছাড়িয়ে রাস্তাও দখল করছেন। তাই আপনাদের ভুল ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে নির্ধারিত বিকাল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ব্যবসা করুন। তাতে আপনাদের ব্যবসা কোনোভাবে কমবে না। কেননা আপনাদের ক্রেতাগুলো ব্যয়বহুল মার্কেট থেকে ক্রয় করে না।

জনতার প্রশ্নের ভিত্তিতে মেয়রের কিছু আশ্বাস :

সিটি কর্পোরেশনের অধীনে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা, কেউ ডেঙ্গু বা চিকনগুনিয়ায় আক্রান্ত হলে আর্থিক সমস্যা থাকলে সিটি কর্পোরেশন তার দায়ভার গ্রহণ, জামালখানে যানজট কমাতে স্কুলগুলোর ছুটির সময় আধঘণ্টা ব্যবধান রাখতে প্রতিষ্ঠান প্রধানের সাথে কথা বলা এবং পলিথিন ব্যবহার কমাতে জরুরি পদক্ষেপ নিতে পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিবেন বলে জানান মেয়র।

-সিভয়েস/ডাব্লিউএ/এসএ

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়