Cvoice24.com


আমি যা করতে পারবো তা নিয়ে স্বপ্ন দেখি: মেয়র

প্রকাশিত: ১১:১৬, ২৫ জুলাই ২০১৯
আমি যা করতে পারবো তা নিয়ে স্বপ্ন দেখি: মেয়র

ছবি : সিভয়েস

সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেছেন, চট্টগ্রাম নগরের সকল সীমাবদ্ধতাকে বিবেচনায় রেখে যা বাস্তবায়ন করা যাবে সে ধরণের পরিকল্পনা আমি করি। স্বপ্নও দেখি বাস্তবায়নযোগ্য উন্নয়ন নিয়ে। নগরবাসীকে আকাশকুসুম স্বপ্নের কথা বলে কাজ করবো না এমন মানুষ আমি নই। দায়িত্ব পালনের এই চার বছর দুই মাস সময়ের মধ্যে কি করতে পেরেছি বা কি করতে পারিনি- সে বিচারের ভার নগরবাসীকে দিলাম। নগরবাসীই আমার সফলতা ব্যর্থতার মূল্যায়ন করবেন।

আজ বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) দুপুরে নগরের একটি  কনভেনশন সেন্টারে 'জনতার মুখোমুখি মেয়র' শীর্ষক অনুষ্ঠানে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এসব কথা বলেন।

নগরের ৪১ ওয়ার্ডের উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে নগরবাসীর মুখোমুখি মেয়র নাছির। তারই অংশ হিসেবে আজ ২১ নম্বর জামালখান ওয়ার্ডের উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে ওয়ার্ডের নানা শ্রেণি পেশাজীবীরা এলাকার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মেয়রের কাছে সরাসরি প্রশ্ন উত্থাপন করেন। মেয়র এলাকাবাসীর প্রশ্নের উত্তর দেন।

এলাকাবাসীর বিভিন্ন  প্রশ্নের উত্তরে মেয়র বলেন, নিরাপদ, বাসযোগ্য, পরিষ্কার ও সবুজ নগরী হিসেবে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম দৃশ্যমান হচ্ছে। এ কাজে নগরবাসীকে আমাদের সঙ্গে পেতে চাই। আমার প্রত্যাশা উন্নত দেশের সমৃদ্ধ নগরের মতো চট্টগ্রামকে গড়ে তোলা।

তিনি বলেন, নালার পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে ঢাকনা দিচ্ছি। যাতে পথচারীরা স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারে, ময়লা ফেলে নালায় পানি চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে না পারে।

ছেলেধরা ও ধর্মীয় উস্কানিতে বিভ্রান্ত না হয়ে সচেতন নাগরিক আচরণ ও আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার জন্য নগরবাসীকে আহ্বান জানান মেয়র।

ডেঙ্গু প্রতিরোধ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, চসিক নিয়মিত ওষুধ ছিটানো, ডোর টু ডোর ময়লা সংগ্রহ এবং রাতে ময়লা অপসারণ করায় অন্য যেকোনো শহরের চেয়ে মশা কম, ডেঙ্গুর প্রকোপও কম। প্রতি ওয়ার্ডে ফগার ও হ্যান্ড স্প্রে মেশিনে ১৬১ জন ওষুধ ছিটাচ্ছেন। ডাক্তারদের সচেতন করেছি। নগরবাসীর অবগতির জন্য বিজ্ঞপ্তি, প্রচারপত্র বিলি করছি। ডেঙ্গু আক্রান্ত কেউ যদি চিকিৎসা করাতে অপারগতা জানান তবে আমরা দায়িত্ব নেব।

নগরে একশ’টি এসি বাস নামানোর পরিকল্পনা প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ও নিরাপদ যাত্রীসেবার লক্ষ্যে ১০০ এসি বাস নামানোর জন্য একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে রাজি করিয়েছি। তারা এলসি খুলেছে। বিআরটিএ, সিএমপিকে অনুরোধ জানিয়েছি দ্রুত অনুমোদন দেওয়ার জন্য।

মেয়র বলেন, আমি কোনো সম্মানী বা সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করিনি। ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা সম্মানীসহ সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা অনুদান দিয়ে আসছি। শিক্ষার্থী, সেবা সংস্থা, রোগীদের কল্যাণে এ টাকা খরচ হচ্ছে।

নগরের জলাবদ্ধতা সমস্যা নিয়ে এক শ্রেণি পেশাজীবীর  প্রশ্নের উত্তরে মেয়র বলেন, এ নগরে যে উন্নয়ন হয়েছে তা পরিকল্পিতভাবে হয়েছে এটা দাবি করতে পারি না। ড্রেনেজ ব্যবস্থা সুপরিকল্পিত নয়। দায়িত্বজ্ঞানহীন কিছু বাসিন্দা পানি আটকে দেন, বৃষ্টি-জোয়ারের পানি নিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি করে।

তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতাধীন ৩৮৪ কি.মি সেকেন্ডারি নালা দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার শুরু হবে বলে সিডিএ চেয়ারম্যান জানিয়েছেন। 

পাহাড়ি ঢলে জামালখান বাই লেনে বৃষ্টি হলেই হাঁটু পানি উঠে এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে চীনা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা করেছি। ২০১৬ সালে ১১ মাস ফিজিবিলিটি স্টাডি করেছিল বিশেষজ্ঞরা। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে জমা দিই। তখন জানতে পারি সিডিএ’র মেগাপ্রকল্প একনেকে উঠছে। আমরা এর বিরোধিতা করেনি, শতভাগ সহযোগিতার সিদ্ধান্ত দিয়ে প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলাম। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কাজ চলছে। ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষে ১৩টি খালের ড্রয়িং ডিজাইন কয়েকদিন আগে হস্তান্তর করা হয়েছে।

কারিগরি শিক্ষা বিস্তারে নগরে একটি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবেন বলে জানান মেয়র।

২০১৮-১৯ অর্থ বছরে সর্বোচ্চ হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছি। যা চসিকের ইতিহাসে রেকর্ড। অথচ কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন খাতে চসিকের ব্যয় ২৬০ কোটি টাকা।  আমি দায়িত্ব গ্রহণকালীন সময়ে মাসে ৯ কোটি টাকার প্রশাসনিক ব্যয় এখন ২০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ৫৪ কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে চসিক।

মেয়র নগরবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, নিজে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি প্রতিবেশী যারা খাল, নালায় ময়লা ফেলে তাদের নিবৃত করতে হবে।

বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী বলেন, জামালখানের দুঃখ আসকারদীঘি। মশার প্রজনন ক্ষেত্র এটি। এ দীঘি পরিষ্কার ও দৃষ্টিনন্দন করলে জামালখানের মানুষ উপকৃত হবে।

এর প্রেক্ষিতে মেয়র বলেন, আসকার দীঘি ব্যক্তি মালিকানাধীন। উনার সঙ্গে কথা বলে দীঘির সৌন্দর্য বর্ধন ও পরিবেশ উন্নত করণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।

ওয়ার্ডের বাসিন্দারা বিমান অফিসের পেছনের নালায় ও টাইলসের ময়লা ফেলা, সিঁড়ির গোড়ায় অবৈধ বাজার বসিয়ে চাঁদাবাজি ও ওজনে কারচুপি, যানজট নিরসনে জামালখানের স্কুলগুলো আধঘণ্টা আগে পরে ছুটি দেওয়া, স্কুলবাস চালু করা, ফুটপাত ও সড়ক দখল করে হকার বসা ইত্যাদি বিষয়ে মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

মেয়র সংশ্লিষ্ট ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ ও শিক্ষাবোর্ডের সাথে আলোচনা করে সড়কের যানজট নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেন।

অনুষ্ঠানে জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম মনি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

-সিভয়েস/ইউডি/এসএ

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়