Cvoice24.com


গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সাথে সাথেই গণপরিবহনে ফের ভাড়া নৈরাজ্য

প্রকাশিত: ১৬:৪৬, ২০ জুলাই ২০১৯
গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সাথে সাথেই গণপরিবহনে ফের ভাড়া নৈরাজ্য

মুরাদপুর থেকে চকবাজারের উদ্দেশ্যে টেম্পুতে উঠলেন শাহেদুল ইসলাম শাহেদ। যেখানে ভাড়া টাকা নেয়ার কথা সেখানে টেম্পুওয়ালা নিয়ে নিলো টাকা। কারণ জানতে চাইলে চালকের জবাব,গ্যাসের দাম বাড়ছে, তাই ভাড়া বেশি নিচ্ছি’। কিন্তু এখনো ভাড়া বৃদ্ধির ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি সংশ্লিষ্টরা।

এরআগেও বৃষ্টির অজুহাতে বিভিন্ন রুটে ভাড়া বেশি নেয় বিভিন্ন পরিবহন। ফলে যাত্রীদের সঙ্গে গণপরিবহন শ্রমিকদের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়, এমনকি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।

শনিবার নগরীর আগ্রাবাদ, নিউমার্কেট, মুরাদপুর, চকবাজার, বহদ্দারহাট, .কে খানসহ বিভিন্ন জায়গায় বেশি ভাড়া নেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। সবার একটাই কথা, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি।

সরেজমিনে চকবাজার থেকে আন্দরকিল্লা পর্যন্ত টেম্পু যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হঠাৎ করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে কোন সিদ্ধান্ত বা নিয়ম না মেনে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন কতিপয় পরিবহন চালক। কারণ জানতে চাইলে উল্টো যাত্রীদের সাথে দুর্ব্যবহার করছেন ওইসব চালক। বৃষ্টি গ্যাসের দাম বৃদ্ধিকে প্রধান অজুহাত হিসেবে দেখিয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়কে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে।

ইতোমধ্যে চকবাজার-কোতোয়ালী রুটের প্রায় টেম্পু অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা শুরু করে দিয়েছে। মুরাদপুর-চকবাজার রুটের কিছু কিছু গণপরিবহন ভাড়া বাড়িয়েছে। তবে কিছু কিছু পরিবহনকে আগের নিয়মে ভাড়া নিতে দেখা গেছে। তাদের বক্তব্য, আমরা কয়েকজন ভাড়া বাড়ালে তো হবে না, সকলে একসাথে পরামর্শ করে ভাড়া বাড়াতে হবে।  

বাস হেলপারদের দাবি, গ্যাসের দাম বাড়ায় জ্বালানি খরচ বেড়েছে। কারণে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নিতে হচ্ছে। মালিকের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিতে গাড়ি চালানোর কারণে বাড়তি ভাড়া না নিলে তাদেরকে লোকসান বহন করতে হবে বলেও জানান তারা।

গণপরিবহন যাত্রী ফরহাদ উদ্দিনের অভিযোগ, গাড়ি ভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার। তাই গণপরিবহন মালিক-শ্রমিকরা এখনই বাড়তি ভাড়া আদায় করতে পারেন না। অথচ প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় নৈরাজ্য শুরু হয়েছে। পরিস্থিতির এখনই লাগাম না ধরলে পরিস্থিতি অন্য রূপ নিতে পারে। নিয়ে যাত্রী গণপরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে বড় ধরণের সংঘর্ষও ঘটতে পারে।

সিএনজি অটোরিকশা চালক হামিদুর রহমান বলেন, প্রতি ঘনমিটার গ্যাস কিনতে হচ্ছে ৪৫ টাকা করে। বেশি দামে গ্যাস কিনে যাত্রীদের কাছ থেকে কেউ কম ভাড়া নেবে না, তাই আমিও নিচ্ছি না। কবে সরকার বাড়তি ভাড়ার রেট নির্ধারিত করবে- এজন্য তো আমরা বসে থাকতে পারিনা।

একটি বেসরকারি কলেজের প্রভাষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, গণপরিবহনে ব্যবহৃত সিএনজি খাতে গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে টাকা বাড়িয়ে ভাড়া নৈরাজ্যকে আরেক দফা উসকে দেয়া হয়েছে। নতুন করে গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারণের কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে গণপরিবহনে বর্ধিত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য শুরু হয়েছে। এতে সড়কে অস্থিরতা বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। যেকোন সময় পরিস্থিতি ভিন্নখাতে রূপ নিতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক . মোহাম্মদ ফেরদৌস বলেন, অতীতেও  গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পর বাস-মিনিবাস সিএনজিচালিত অটোরিকশার মালিক-চালকরা তাদের খেয়াল খুশি মতো ভাড়া বাড়িয়েছে ওই সময়ও প্রশাসন নানা ধরণের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দিয়ে তা নথিপত্রেই আবদ্ধ রাখে। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটতে দেখা যায়নি। এমনকি পরবর্তীতে গ্যাসের বর্ধিত মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভাড়া বাড়ানো হলেও গণপরিবহন মালিক-শ্রমিকরা তা মানেনি। বরং তার চেয়ে তারা আরো একধাপ বেশি ভাড়া আদায় করেছে, যা পরবর্তীতে নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবারও আগের মতো একই ঘটনা ঘটবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছি।

 এ বিষয়ে আরটিএ’র ভূমিকা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিআরটিএ ম্যাজিস্ট্রেটদের চোখে ধূলো দিয়ে তারা নৈরাজ্য চালাচ্ছে। কয়েকটি গাড়ি ধরা পড়লেও বেশির ভাগ গাড়িই ধরা ছোঁয়ার বাইরে। উনারা একদিকে অভিযান পরিচালনা করলে অন্যদিক দিয়ে ওইসব গাড়ি পালিয়ে যায়।

চট্টগ্রাম বাস ওনার্স এসোসিয়শন সূত্রে জানা যায়, গ্যাসের দাম বাড়ার পর বাস-মিনিবাস অটোরিকশার ভাড়া বাড়বে কি না, বাড়লে কত বাড়বে, তা এখনো নির্ধারণ করা  হয়নি। অতিরিক্ত ভাড়া না নিতে বাস চালক-মালিকদের নির্দেশ দেয়া আছে। এমনকি ভাড়া নির্ধারণের আগেই বেশি ভাড়া আদায় করা হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

সংগঠনের সভাপতি তরুণ দাশগুপ্ত বলেন, চট্টগ্রাম সিটি বাসসহ বিভিন্ন পরিবহনের থেকে ৬টি সংগঠন রয়েছে। যেগুলো একটার সাথে একটার সমন্বয় করে না। এখানে কোন সংগঠন কি করছে সে ব্যাপারে আমরা অবগত নই। তবে আমাদের সংগঠনের কেউ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে পারবে না।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক অলি আহমেদ বলেন, নতুন করে ভাড়া নির্ধারণের আগে বর্ধিত ভাড়া নেয়া হবে না। ভাড়া বাড়ানোর মত কোন রকমের নির্দেশনা আমরা দিইনি। কেউ বেশি নিলে তাদেরকে বিআরটিএ ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ধরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করছি। আর কেন্দ্রীয়ভাবে যদি ভাড়া বাড়ানো হয় তা সবাই জানতে পারবেন।

ভাড়া বৃদ্ধির ব্যাপারে বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউল হক মীরের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত অতিরিক্ত ভাড়া এবং অন্যান্য অসঙ্গতিপূর্ণ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। কোন গাড়ির বিরুদ্ধে ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই সে গাড়ির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবো।

তিনি বলেন, এর আগেও জনসাধারণের বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। জনসাধারণের কাছে অনুরোধ থাকবে- আপনারা আমাদের তথ্য দিন। আপনারা একটু সচেতন হলে আমরা আরো আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে পারবো। বিষয়ে পরিবহন সংশ্লিষ্টদেরও ভূমিকা আছে। তাই সবাইকে সম্মিলিত ভাবে কাজ করতে হবে।

-সিভয়েস/এমআইএম/এসএ

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়