Cvoice24.com


পাহাড়ধস আর বন্যার ঝুঁকিতে দুই লাখ রোহিঙ্গা, নিহত ৫ 

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৫ জুলাই ২০১৯
পাহাড়ধস আর বন্যার ঝুঁকিতে দুই লাখ রোহিঙ্গা, নিহত ৫ 

ছবি: সিভয়েস

এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানকারী প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা পাহাড়ধস ও বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে। এরই মধ্যে পাহাড়ধস ও পানিতে ভেসে এক নারী ও ৪ শিশুসহ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ২ হাজার বসতঘর।  প্রায় ৩ শত ঘরবাড়ি সম্পুর্ণভাবে ভেঙে গেছে বলে জানান জেলা প্রশাসক। ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে সাথে সাথে নতুন ঘর তৈরি করে দেয়া হচ্ছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ও শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১১ লাখের অধিক রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এসব রোহিঙ্গার অস্থায়ী বসবাসের জন্য পাহাড়ি এলাকায় এই পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ ১৩ হাজার ঝুঁপড়ি ঘর তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩০ হাজারের অধিক পরিবারের প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা পাহাড় ধস ও বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে। টানা এক সপ্তাহের বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় বেশ কয়েকটি পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। পাহাড়ধস  ও পানিতে ভেসে ১ নারী,  ৪ শিশুসহ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। 

গত বৃহস্পতিবার রাতে উখিয়ার জামতলী ক্যাম্পে পানিতে ভেসে গিয়ে ২ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এর পূর্বে  কয়েকদিনে পাহাড় ধসে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে এক নারী, হাকিমপাড়া ক্যাম্পে ও মধুরছড়া ক্যাম্পে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ঝড়ো হাওয়া ও পাহাড়ধসে  ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২ হাজারের বেশি বসতঘর। এর মধ্যে প্রায় ৩ শত ঘর সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। বৃষ্টির পানির তোড়ে অনেক সড়ক হাঁটা-চলার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি ও পাহাড় ধসে বসতঘর ভেঙে যাবার পাশাপাশি ভোগান্তি ও আতঙ্কিত রোহিঙ্গারা।

উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রমিজ উদ্দিন জানান, রাতে পাহাড়ধসের আতঙ্কে ঘুমাতে পারি না। এরমধ্যে ঝড় আর বাতাসের কারণে ঘর ভেঙে গেছে। যদিও আমাদের অনত্রে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

বালুখালী ক্যাম্পের  রোহিঙ্গা লিয়াকত আলী জানান, বৃষ্টিতে ক্যাম্পের মধ্যে খুবই কষ্ট হয়। রাস্তার উপর পাহাড়ের মাটি ভেঙে পড়ে। নীচে পানি জমে যায়। যাতায়তে খুবই কষ্ট হয়। ভারী বৃষ্টিতে ঘরের ভিতরে পানি পড়ছে। ঠান্ডা লেগে বাচ্চারা অসুস্থ্ হয়ে পড়েছে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম বর্ষা মৌসুমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শিশুমৃত্যু আর ক্ষয়ক্ষতিতে দুঃখ প্রকাশ করে জানান প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বিশাল এ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে রক্ষা  এখন বড় চ্যালেজ্ঞ। এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের সহযোগিতাও প্রত্যাশা করেন তিনি।

জেলা প্রশাসক মো কামাল হোসেন জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা পাহাড়ধস ও বন্যার ঝুঁকি রয়েছে। গত এক সপ্তাহে ৩ শতাধিক ঘর ভেঙে গেছে। তাদের অন্যত্র সরিয়ে সাথে সাথে ঘর তৈরি করে দেয়া হচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এ বিষয়ে সজাগ রয়েছে।

জেলা প্রশাসক ও শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের পক্ষ থেকে আরো জানানো হয় ভারী বর্ষণের কারণে পাহাড়ধস ও বন্যার আশংকায় প্রতিটি ক্যাম্পে মাঝিদের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের সতর্ক করা হয়েছে। অতি ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসরতদের আপাতত নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় ক্যাম্পের ভেতরে থাকা মসজিদ, সাইক্লোন শেল্টার, আশপাশের স্কুলের ভবন প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সিভয়েস/আই

ওমর ফারুক হিরু, কক্সবাজার

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়