Cvoice24.com


রাশিয়ায় জনশক্তি রফতানির নতুন বাজার খুঁজছে সরকার

প্রকাশিত: ১৩:৪৭, ১২ জুলাই ২০১৯
রাশিয়ায় জনশক্তি রফতানির নতুন বাজার খুঁজছে সরকার

বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানির জন্য নতুন ও সম্ভাবনাময় বাজার হতে পারে রাশিয়া। দেশটির ক্রমবর্ধমান শ্রমবাজারে কর্মী পাঠাতে এরইমধ্যে সম্ভাবনা যাচাই করছে সরকার। সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের সরকারি প্রতিনিধিদল রাশিয়া সফর করেছেন।

দেশটিতে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলতে তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছেন। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাশিয়ায় নতুন শ্রমবাজার চালুর আগে বেশি কিছু বিষয়ে উদ্যোগী হতে হবে। আইনি কাঠামোতে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি করতে হবে। তবে এজন্য সময় প্রয়োজন।

বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, শ্রমবাজার অনুসন্ধান এবং শ্রমবাজার সম্প্রসারণের জন্য গত ২০১৫ সালের ২৫ জুন রাশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসে শ্রম উইং খোলা হয়।

মন্ত্রণালয়ের সচিব রৌনক জাহান বলেন, ‘জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে রাশিয়া নতুন গন্তব্য হতে পারে। রাশিয়ার কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের বাংলাদেশি কর্মীদের প্রতি আগ্রহ আছে। যেমন শিক্ষকতা কিংবা তৈরি পোশাক খাতের কর্মী এসব ক্ষেত্রে রাশিয়ার আমাদের কর্মীদের প্রতি আগ্রহ আছে। কিন্তু সবার আগে আমাদের রাশিয়ান ভাষা জানতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এছাড়া রাশিয়ার আরও কিছু উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আছে, যেখানে দক্ষ কর্মী রফতানির সুযোগ আছে। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখব যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাশিয়ান ভাষা শেখার কোনো সুযোগ আছে কি না। সুযোগ না থাকলে কিভাবে সুযোগ সৃষ্টি করা যায় সে চেষ্টা করব। কেননা যারা ইংরেজির শিক্ষক তারা রাশিয়ান ভাষা শিখলে আমরা লাভবান হতে পারি।’

রাশিয়ায় শ্রমশক্তি রফতানির বিষয়টি এখনও প্রাথমিক অবস্থায় আছে জানিয়ে রৌনক জাহান বলেন, ‘বিষয়টি পরিপক্ব হতে কমপক্ষে একবছর লাগবে।’

তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে রাশিয়ার কাছে সমঝোতা স্মারক দেওয়া আছে। আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে কাজ করছি। সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের আগে প্রত্যাবাসন বা ফেরত আনা অথবা আমাদের কর্মীরা ওইখানে কোনো অপরাধে জড়িয়ে পড়লে কিভাবে ফেরত আসবে তার আইনি কাঠামো ঠিক করতে হবে।’

রৌনক জাহান আরও বলেন, ‘বিশ্বে এখন যে পরিস্থিতি সেখানে এখন অদক্ষ কর্মীর কোনো জায়গা নেই। তাই আমাদের দক্ষ কর্মী গড়ার দিকে মনোযোগী হতে হবে।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানান, বিষয়টি নিয়ে গত ২ জুলাই প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়সহ অন্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করেছে। বিষয়টি এখনো প্রাথমিক অবস্থায় আছে। জনশক্তি পাঠাতে হলে ঢাকা-মস্কো দ্বিপাক্ষিক চুক্তি থাকতে হবে। ঢাকার কোনো কর্মী মস্কোতে গিয়ে বিপদে পড়লে বা অপরাধে জড়ালে বা যে কোনো ঝামেলা হলে তা কিভাবে সমাধান হবে, সেই বিষয়ে চুক্তি থাকতে হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সব বিষয়ে কাজ করছে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব রৌনক জাহানের নেতৃত্বে একাধিক মন্ত্রণালয়ের ৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল গত গত ২৮ মে থেকে ৬ জুন পর্যন্ত রাশিয়ায় শ্রমবাজার সম্প্রসারণ বিষয়ে দেশটি সফর করেন।

জানা গেছে, শ্রমবাজার সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে রাশিয়া সফরের পর ওই প্রতিনিধি দলটি একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। ওই প্রতিবেদনে বলা আছে, ‘রাশিয়া বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম প্রবাসী কর্মীদের শ্রমবাজার। রাশিয়া আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম এর সদস্য নয়। (গত ৬ জুন রাশিয়ার আইওএম এর প্রধানের সঙ্গে প্রতিনিধিদলটির মস্কোতে বৈঠক হয়)। রাশিয়ায় খুবই অল্প কিছু বাংলাদেশি কাজ করছে এবং বাংলাদেশের সম্ভাবনা আছে।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘প্রতিনিধিদল রাশিয়ায় কর্মরত শ্রম উইং পরিদর্শন এবং মস্কোতে ও পিটার্সবার্গের সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, কারখানা, কর্মী নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করেন। সামগ্রিক পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, বিশাল এই দেশে তৈরি পোশাকখাত, কনস্ট্রাকশন, জাহাজ ভাঙা শিল্প, কৃষি, ক্লিনার, আইটিসহ বিভিন্ন খাতে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।’

প্রতিবেদনে জানানো হয়, ‘রাশিয়া সিআইএসভুক্ত (কমনওয়েলথ ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্ট্যাটাস) দেশ আর্মেনিয়া, কিরগিস্তান, ইউক্রেন, বেলারুশ, মলদোভা, তাজিকিস্তান এবং উজবেকিস্তান থেকে উল্লেখযোগ্য কর্মী নিয়ে থাকে। এসব দেশের সঙ্গে রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক চুক্তি রয়েছে। এতে রাশিয়ার শ্রমবাজারে ওইসব দেশের কর্মীরা অগ্রাধিকার পেয়ে থাকেন। এছাড়াও ভারত, ভিয়েতনাম, উত্তর কোরিয়া, থাইল্যান্ড এবং ইন্দোনেশিয়া থেকেও কর্মী নেয় রাশিয়া।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘রাশিয়ার শ্রমবাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, রাশিয়া একটি ক্রমবর্ধমান শ্রমবাজার। দেশটিতে বয়স্ক লোকের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি জন্মহার কমে যাওয়ায় অদূর ভবিষ্যতে দেশটি বিদেশি কর্মীদের জন্য উপযুক্ত স্থান হবে।’

প্রতিনিধি দলটির প্রতিবেদনে সুপারিশ করে জানানো হয়েছে,‘রাশিয়া এক্ষেত্রে একটি চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাবিত চুক্তির ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এ জন্য রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।’

এছাড়া, সম্ভাবনাময় দেশগুলোর তালিকা প্রণয়ন করে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার উদ্যোগ নিতে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়। বলা হয়, এ ধরনের অন্য দেশগুলোতেও বোয়েসেলেকে (বিদেশে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে একমাত্র সরকারি নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান) সম্পৃক্ত করে সুষ্ঠু, নিরাপদ, নিয়মিত ও দায়িত্বশীল অভিবাসন নিশ্চিত করতে হবে।’

-সিভয়েস/এসএ

সিভয়েস ডেস্ক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়