Cvoice24.com


টানা বর্ষণে লামায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

প্রকাশিত: ১১:৩১, ১১ জুলাই ২০১৯
টানা বর্ষণে লামায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

ছবি : প্রতিনিধি

গত ছয়দিনের টানা বর্ষণে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে লামা উপজেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধস ও সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সারাদেশের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বৈরি আবহাওয়ার কারণে গাছপালা ভেঙ্গে বিদ্যুতের লাইনে পড়ায় কয়েক স্থানে খুঁটি পড়ে গিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করছে লামা বিদ্যুৎ বিভাগ। নদ নদী ও বিভিন্ন খালের পানি বিপদ সীমার উপরে প্রবাহিত হওয়ায় বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। 

ইতিমধ্যে লামা পৌরসভার নয়া পাড়া, উপজেলা কোয়াটার, চেয়ারম্যান পাড়া, বাস স্টেশন, বাজার এলাকা, বড় নুনারবিল, লাইনঝিরি, শিলেরতুয়া, কলিঙ্গাবিল, রাজবাড়ি, কুড়ালিয়া টেক, লামামুখ ও ছোট নুনারবিল এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পৌরসভার লামা-রুপসীপাড়া সড়কের কাটা পাহাড় নামক স্থানে বৃহস্পতিবার দুপুরে পাহাড় ধসে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। খবর পাওয়া মাত্র লামা পৌরসভার মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম ডাম্পার ও শ্রমিক নিয়ে উপস্থিত হয়ে মাটি সরিয়ে আন্ত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করেন। 

এছাড়া রুপসীপাড়া, ফাইতং, আজিজনগর, ফাঁসিয়াখালী, গজালিয়া ইউনিয়নের অসংখ্য জায়গা পাহাড়ি বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। খাল ও ঝিরির প্রচন্ড পানির স্রোতে ভেঙ্গে পড়েছে কয়েকটি ব্রিজ। আন্ত যোগাযোগের সড়ক গুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে এলাকার মানুষ। এদিকে গত মঙ্গলবার বিকেলে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের কুমাড়ি হতে বড়ছনখোলা হয়ে হাইদারনাশী সড়কের বড়ছনখোলাস্থ ব্রিজ ধসে পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে কয়েক ওয়ার্ডের মানুষ। 
     
লামা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাপান বড়ুয়া জানান, গত কয়েকরাত হতে বন্যার আশংকা করে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে লামা বাজারের ব্যবসায়ীরা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নিম্নাঞ্চলে পানি উঠার কারণে বন্যার আশংকা করে মালামাল সরাতে ব্যস্ত সময় পার করছে সব ব্যবসায়ীরা। এতে করে তাদের প্রচুর আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। ইতিমধ্যে বাজারের প্রধান প্রধান কয়েকটি গলি ও সড়ক বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। লামায় বন্যার সমস্যা নিরসনে স্থায়ী পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেন তিনি।
 
ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদার বলেন, বিচ্ছিন্ন সড়ক গুলো উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে। জনদুর্ভোগ লাঘবে আমরা চেষ্টা করছি।

লামা বাজার পাড়ার বাসিন্দা মো. মাইন উদ্দিন, মো. আকবর ও চাহ্লাচিং মার্মা বলেন, নিম্নাঞ্চলে বাড়ি হওয়ায় ইতিমধ্যে ঘরবাড়ি পানির নিচে। এ দুর্ভোগ লাঘবে স্থায়ী সমাধানে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কার্যকরী পদক্ষেপ কামনা করছি আমরা।
 
লামা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মোজাম্মেল হক বলেন, উপজেলা প্রশাসনকে সাথে নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় চূড়া ও পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরত মানুষকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে আমরা কাজ করেছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে ঝুকিঁপূর্ণ এলাকা থেকে সরে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এখনো হাজার হাজার পরিবার ঝুঁকি মাথায় নিয়েই পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মজনুর রহমান বলেন, কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে সকল দুর্যোগ পরিস্থিতি মনিটরিং করা হচ্ছে। আমাদের প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী মজুদ আছে। 

লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ জান্নাত রুমি বলেন, আমরা সচেষ্ট রয়েছি। যে কোন দূর্ঘটনার খবর পাওয়া মাত্র সহায়তায় করার জন্য ফায়ার সার্ভিস ও অন্যান্য সহযোগি প্রতিষ্ঠানকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপজেলা সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দুর্যোগকালীন সময়ের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে আগত লোকজনের থাকা, খাওয়া ও স্বাস্থ্যগত বিষয়গুলো আমরা খেয়াল রাখছি। তাদের প্রয়োজনীয় ত্রাণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমি ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইশরাত সিদ্দিকাকে দিয়ে পৃথক পৃথক অভিযান চালিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে আসার ব্যবস্থা করেছি।
 
উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল বলেন, শুষ্ক মৌসুমে মৃত প্রায় মাতামুহুরী নদী বর্ষা এলেই রুদ্রমুর্তি ধারণ করে। সাধারণ মানুষের বিপদের সময় আমরা পাশে থাকার চেষ্টা করছি। জনদুর্ভোগ লাঘবে আমরা আন্তরিক।

সিভয়েস/এএস
 

লামা প্রতিনিধি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়