Cvoice24.com


জলাবদ্ধতা রেখেই ছালামের ‘মৃত্যু’, এ ভোগান্তির শেষ কোথায়?

প্রকাশিত: ০৭:৪৫, ১১ জুলাই ২০১৯
জলাবদ্ধতা রেখেই ছালামের ‘মৃত্যু’, এ ভোগান্তির শেষ কোথায়?

ফাইল ছবি

অল্প বৃষ্টি বা জোয়ারে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতার সমস্যা অনেক পুরনো। আশির দশক থেকেই এ সমস্যা নিরসনে বহু ধরনের প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও এর কোনোটিরই সুষ্ঠু বাস্তবায়ন দেখেনি নগরবাসী। ফলে তখন থেকেই নগরবাসীকে জলাবদ্ধতায় নানামুখী ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বর্ষা এলেই চট্টগ্রাম তলিয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য বিশাল অংকের মেগা প্রকল্প ঘোষণা করে নগরবাসীকে আশার আলো দেখিয়েছিল সরকার। সেই আশার স্রোতে আবার ধরেছে ভাটার টান। সময় পেরিয়ে গেলেও বিশাল বাজেটের এ প্রকল্পের পরেও কোনো সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী। অবশ্য সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম এক অনুষ্ঠানে বলছিলেন চট্টগ্রামবাসীকে একটু ধৈর্য্যধারণ করতে হবে। এ সমস্যা সমাধান হবে। এক বছরের মধ্যে জলাবদ্ধতা সমস্যারদৃশ্যমান পরিবর্তন আপনারা দেখতে পাবেন। জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান না করে আল্লাহ আমার মৃত্যু না করেন। সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম এসব আশার বাণী শুনালেও অবশেষে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অধিকাংশ কাজ শুরু না করেই বিদায় নিতে হয়েছে তাকে। এখনও পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিডিএ বেশিরভাগই কাজ শুরু করতে না পারায় রিবক্ত নগরবাসী। 

এর আগে জলাবদ্ধতা নিরসনে বরাদ্দ নেই বলে অনেক সময় অভিযোগ করা হতো নগরবাসী ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর তরফ থেকে। কিন্তু বর্তমান সরকার সেই অভিযোগের ধারা ভেঙ্গে জলবদ্ধতা নিরসনের জন্য প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত প্রকল্পের কাজে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। বিশাল বাজেটের এ মেগা প্রকল্প থাকার পরেও কোনো সুফল মিলছে না বলে অভিযোগ নগরবাসীর। 

জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) একটি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা। প্রকল্পে ব্যয়ের মধ্যে ৩৬টি খালের মাটি অপসারণ, ৬ হাজার ৫১৬ কাঠা ভূমি অধিগ্রহণ, নতুন ৮৫ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করার কথা বলা হয়েছে। তার সাথে ১৭৬ কিলোমিটার আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, ৪৮টি পিসি গার্ডার ব্রিজ প্রতিস্থাপন, বন্যার পানি সংরক্ষণে ৩টি জলাধার, ৬টি আরসিসি কালভার্ট প্রতিস্থাপন, ৫টি টাইডাল রেগুলেটর, ১২টি পাম্প হাউস স্থাপন, ৪২টি সিল্টট্রেপ স্থাপন, ২০০টি ক্রস ড্রেন কালভার্ট নির্মাণ করার কথাও ছিল। ৫ হাজার কোটি টাকার এ মেঘা প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের জুনে। এ প্রকল্পের সময় বাকি আছে এক বছরেরও কম। 

প্রবাসী ইসমাইল জসীম মেগা প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে বলেন, চট্টগ্রামের মানুষ জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বর্তমান সরকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু এ মেগা প্রকল্পের কাজের সময় শেষ হয়ে এসেছে। তারপরও নেই কোনো অগ্রগতি। আমরা এতো কিছুর পরও পাচ্ছি না মেগা প্রকল্পের সুফল।

বাকলিয়া এলাকার বাসিন্দা নুরুল আলম বলেন, জনপ্রতিনিধিদের জলাবদ্ধতার সমস্যা জানানো হলে তারা অর্থ বরাদ্দ হয় না বলে দায় সারতেন। প্রধানমন্ত্রী যখন জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প পাশ করলেন তখন আমরা খুব আশা দেখেছিলাম এবার হয়তো মুক্তি মিলবে। কিন্তু আমাদের এ সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে কিনা কারোই জানা নেই।

এ বিষয়ে মেগা প্রকল্পের প্রজেক্ট ডাইরেক্টর লে. কর্নেল মো. শাহ্ আলী বলেন, আমরা নির্দিষ্ট সময়ে এ মেঘা প্রকল্পের কাজ হাতে পাইনি। জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য প্রথম ধাপ খাল পরিষ্কার করা। কিন্তু এ মেগা প্রকল্প যখন পেয়েছি তখন খাল পরিষ্কার করার স্কোপ ছিল না। কারণ, খাল পরিষ্কার করতে শুকনো মৌসুম লাগে। বর্ষায় কখনও খাল পরিষ্কার করা সম্ভব নয়।

মেগা প্রকল্পের কত শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটি নির্দিষ্ট করে বলা কষ্টকর। তবে আমার এ পর্যন্ত ১৩টি খাল পরিষ্কারের কাজ করছি। আর পাশাপাশি ব্রিজ-কালভার্ট এসবেরও কাজ করছি। 

সাধারণ জনগণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাধারণ জনগণ জানেন না এ প্রকল্পের কাজ কখন কিভাবে শুরু হয়েছে। জনগণ এটিও জানেন না যে আমরা এ প্রকল্পের কাজ কখন হাতে পেয়েছি। কিন্তু আমরা যদি এ প্রকল্পের কাজ ঠিক সময়ে পেতাম তাহলে আমরা অবশ্য সাধারণ জনগণের মাঝে সুফলের চিত্র তুলে ধরতে পারতাম। আর নগরবাসী তখনই এ মেগা প্রকল্পের সুফল দেখতে পাবেন।

সিভয়েস/এমএম/এএইচ

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়