Cvoice24.com


এবার নতুন রূপে সাজবে বহু ইতিহাসের সাক্ষি “লালদিঘী ময়দান”   

প্রকাশিত: ১৪:৩৪, ৬ জুলাই ২০১৯
এবার নতুন রূপে সাজবে বহু ইতিহাসের সাক্ষি “লালদিঘী ময়দান”   

চট্টগ্রাম নগরীর ঐতিহাসিক লালদিঘী ময়দান এই বাংলার ইতিহাসের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এই ময়দান থেকেই গর্জে উঠেছে বৃটিশ এবং পাকিস্তানী শাসন বিরোধী নানা আন্দোলন সংগ্রামের হাজারো প্রতিবাদী কণ্ঠের। বাংলাদেশ, ভারতসহ অত্র অঞ্চলের অগুনতি নেতৃত্বের পদচিহ্ন পড়েছে এই লালদিঘীর ময়দানে।

ইংল্যান্ডের লর্ডস স্টেডিয়ামকে ক্রিকেটারদের তীর্থস্থান হিসেবে এখানে খেলতে পারা যেমন প্রত্যেক ক্রিকেটারের স্বপ্ন। তেমনি চট্টগ্রামের লালদিঘীর ময়দানও প্রতিটি রাজনীতিকের কাছে তীর্থস্থান। এই মাঠে বক্তব্য রাখতে পারা প্রত্যেক রাজনীতিকের কাছে গর্বের, গৌরবের। কিন্তু সঠিক রক্ষনাবেক্ষন ও সংস্কারের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে লালদিঘীর ময়দান হারাতে বসেছে তার ঐতিহাসিক ঐতিহ্য। বছরের নানা সময়ে রাজনৈতিক, সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় সভা, সমাবেশ, কর্মসুচী এখানে অনুষ্ঠিত হলেও এই ময়দানটি রক্ষনাবেক্ষনে সংশ্লিষ্টদের কারো কোন উদ্যোগ দেখা যায় নি।

এবার ঐতিহাসিক এই লালদিঘীর ময়দানকে নতুন রূপে সাজানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে লালদিঘীর ময়দানে মঞ্চ স্থাপন, সৌন্দর্য বর্ধন, বসার গ্যালারি নির্মাণ, সবুজায়ন, উত্তর পাশের দেয়ালে ১৯৫২ থেকে '৭১-র ইতিহাস টেরাকোটা শিল্পকর্মের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা, আধুনিক টয়লেট স্থাপন, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, জায়ান্ট স্ক্রিন স্থাপন, ওয়াকওয়ে নির্মাণ ও আলোকায়ন, গ্রিনরুম নির্মাণসহ নানামুখী উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন এই প্রকল্প বাস্তবায়নে কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থ সহযোগিতা প্রদান করছেন। আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহর লাল হাজারীর একান্ত উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সার্বিক পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে কাউন্সিলর জহর লাল হাজারীর সাথে কথা বলা হলে তিনি জানান, লালদিঘীর মাঠ শুধু চট্টগ্রাম নয় সারা বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক স্থান। রক্ষনাবেক্ষন ও সংস্কারের অভাবে এটি গুরুত্ব হারাতে বসেছে। এই ময়দানকে সংস্কার করে অবকাঠামো উন্নয়ন ও সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিতকরণে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ময়দানের দক্ষিণ পাশে সুদৃশ্য ছয় দফা মঞ্চ নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের আওতায় মাঠের চারিদিকে বসার গ্যালারি, ওয়াকওয়ে নির্মাণ, জায়ান্ট স্ক্রিন স্থাপন, খেলাধুলার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতকরণে ক্রীড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও একাডেমী স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। রাতের বেলায় কর্মজীবীরা যাতে নির্বিঘ্নে চিত্ত বিনোদন উপভোগ করতে পারেন সেজন্য পর্যাপ্ত আলোকায়নের ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, উত্তর পাশের দেয়ালে দৈনিক আজাদীর অর্থ সহায়তায় টেরাকোটা শিল্প কর্মের মাধ্যমে '৫২ থেকে '৭১ পর্যন্ত সময়ের নানা ঐতিহাসিক ঘটনাপঞ্জী ফুটিয়ে তোলা হবে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন অনুমতি প্রদান করায় তিনি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে রেলপথ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর নানামুখী সহায়তার জন্যও তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী আরো বলেন, লালদিঘী ময়দানকে সংস্কার ও অবকাঠামো উন্নয়ন করার মাধ্যমে ঐতিহাসিক গুরুত্ব সংরক্ষণের ব্যাপারে বিগত ২০১৭ সাল থেকে পরিকল্পনা ছিল। নানামুখী প্রতিকূলতা জয় করে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হচ্ছে। আগামী ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কাজ শেষ করার ব্যাপারে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে  বাস্তবায়িত প্রকল্পটি উদ্বোধন করার প্রত্যাশার কথা জানান তিনি।

লালদিঘী ময়দানের সংস্কার, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সংলগ্ন এলাকায় সরকারের উন্নয়ন শিল্প কর্মের মাধ্যমে উপস্থাপন করে এই এলাকাকে পর্যটন স্পটে রূপান্তর করার কথা জানিয়েছেন কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৫৩ সালে নানা রাষ্ট্রীয়, সামাজিক সভা সমাবেশের অনুষ্ঠানস্থল হিসেবে লালদীঘি ময়দানের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। বর্তমান ময়দানটি জমিদার রায় বাহাদুর চৌধুরী কর্তৃক খননকৃত লালদীঘির পূর্ব পাড়।

এই ঐতিহাসিক লালদিঘী ময়দান চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নিজস্ব সম্পত্তি। বর্তমানে এই ময়দান চট্টগ্রাম মুসলিম হাই স্কুলের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। সংস্কার ও আধুনিকায়নের পর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এটি রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব পালন করবে।

প্রকল্পের ডিজাইন করেছেন ডি'সেন্স আর্কিটেক্ট'র সত্ত্বাধিকারী স্থপতি আইনুল ইসলাম শাওন ও তমজিদুল ইসলাম। টেরাকোটা শিল্প কর্মের কাজ করছেন ভাস্কর শ্রীকান্ত আচার্য।

-সিভয়েস/এসএ

উজ্জ্বল দত্ত

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়