Cvoice24.com


কক্সবাজারে 'বন্দুকযুদ্ধে' এক মাসে নিহত ২৩

প্রকাশিত: ০৭:৩২, ১ জুলাই ২০১৯
কক্সবাজারে 'বন্দুকযুদ্ধে' এক মাসে নিহত ২৩

ফাইল ছবি

কক্সবাজারকে মাদক ও মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান নেমেছে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি। যার পরিপ্রেক্ষিতে মাদক ব্যবসায়ী ও মানবপাচারকারীদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিয়ত কথিত বন্দুকযুদ্ধ সংঘটিত হচ্ছে। প্রশাসনের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, কক্সবাজারকে মাদক ও মানবপাচার মুক্ত করতে প্রশাসন হার্ড লাইনে। গত ১ মাসে ১৪টি বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় নিহত হয়েছে ২৩ জন মাদক ব্যবসায়ী ও মানবপাচারকারী। এই অভিযানকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি সচেতন লোকজন বলছেন এই অপরাধে প্রশাসনের কেউ জড়িত থাকলে তাকেও কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হোক।

কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর উইন কমান্ডার আজিম আহমেদ (সিও), টেকনাফ (২) বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্নেল ফয়সাল হাসান খাঁন ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গত জুন মাসে ১৪ টি বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় ২৩ জন মাদক ব্যবসায়ী ও মানবপাচারকারী নিহত হয়েছে। প্রশাসন বলছে, কক্সবাজারকে মাদক ও মানবপাচার মুক্ত করতে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। আর এ অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে জেলার সচেতন লোকজন বলছেন, প্রশাসনের কাছ থেকে মাদকমুক্ত কক্সবাজার উপহার চাই। পাশাপাশি এ অপরাধের সাথে প্রশাসনের কেউ জড়িত থাকলে তাকেও কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হোক।

পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির দেওয়া তথ্যে জানা যায়, গত ২৮ জুন দিনগত রাত সাড়ে ৩ টার দিকে উখিয়ায় রহমদের বিল সীমান্তে  বিজিবির সাথে 'বন্দুকযুদ্ধে' মো. নুর (২৭) নামে এক রোহিঙ্গা ইয়াবা পাচারকারী নিহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয় ১৫ হাজার ইয়াবা, ১টি অস্ত্র ও গুলি।
গত ২৫ জুন দিনগত রাত ৩টার দিকে টেকনাফের মহেশখালীয়া পাড়ার নৈাকাঘাট এলাকায় পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে ৩ মানব পাচারকারী নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন টেকনাফের সাবরাং নয়াপাড়ার গোলা পাড়ার আবদুল শুক্কুরের ছেলে কোরবান আলী (৩০), কে কে পাড়ার আলী হোসেনের ছেলে আবদুল কাদের (২৫) ও একই এলাকার সুলতান আহমদের ছেলে আবদুল রহমান (৩০)। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয় ৩টি দেশীয় অস্ত্র ও গুলি। এ ঘটনায় পুলিমের ৩ সদস্য আহত হয়।

গত ২৩ জুন দিনগত রাত সাড়ে দেড়টার দিকে টেকনাফের সাবরাং কাটাবনিয়া নৌকাঘাট এলাকায় পুলিশের সাথে 'বন্দুকযুদ্ধে' মোহাম্মদ রুবেল (২৩) ও মোহাম্মদ ফারুক (১৯) নামে দুই মানবপাচারকারী নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয় ২টি দেশীয় অস্ত্র  ও গুলি।
গত ১৫ জুন দিনাগত রাতে র‌্যাবের সাথে 'বন্দুকযুদ্ধে' শহরের বাজারঘাটা এলাকার টেকনাফের ৩ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হন। নিহতরা হলেন, শহরের আইভিপি সড়কের পাইকারি দোকানদার শহিদুল ইসলাম লিটন (৪২), টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা এলাকার গবি সোলতানের ছেলে দিল মোহাম্মদ (৪২) ও নাইক্ষ্যংছড়ির রাশেদুল ইসলাম সৌরভ। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয় ১ লাখ ৪০ হাজার ইয়াবা, ৪টি অস্ত্র ও গুলি।   

গত ১৬ জুন সকাল ৭টার দিকে কক্সবাজার সদর উপজেলা ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়কের জঙ্গলের পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে শহরের শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম (৩৮) গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থলে ইয়াবা ও অস্ত্র পাওয়া যায়।
গত ১০ জুন দিনাগত রাত দুইটার দিকে টেকনাফের হ্নীলা’র জাদিমোরা এলাকায় বিজিবি’র সাথে 'বন্দুকযুদ্ধে' ১ ইয়াবা কারবারি নিহত হন। ঘটনাস্থল থেকে ৫০ হাজার ইয়াবা ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। তবে নিহত ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া যায়নি।

গত ৩ জুন দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং পচাখালী সেতু সংলগ্ন এলাকায় পুলিশের সাথে 'বন্দুকযুদ্ধে' মোহাম্মদ মফিজ আলম নামে এক ইয়াবা ব্যবসায়ী নিহত হন। ঘটনাস্থল থেকে ৪টি দেশীয় তৈরি বন্দুক, গুলি ও ৩ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
জুন মাসের শুরুতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক নম্বর তালিকাভুক্ত ইয়াবা ডন সাইফুল করিম (৪৫) পুলিশের সাথে 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত হন। টেকনাফের স্থলবন্দর সীমানা প্রাচীর সংলগ্ন নাফ নদীর তীরে তিনি পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয় ৪টি অস্ত্র ১ লাখ ইয়াবা ও বিপুল পরিমাণ গুলি।

কক্সবাজার মাদক নিরাময় কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক দিদারুল আলম রাশেদ জানান, মাদক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের এ সাঁড়াশি অভিযানকে স্বাগত জানাই। এই অভিযান অনেক আগে থেকে শুরু করা দরকার ছিল। এতে করে অনেক যুবক ভয়ঙ্কর মাদক থেকে মুক্ত থাকত। নিজেকে অন্ধকার জগতে ঠেলে দিতো না। 

কিন্তু মানবাধিকার কর্মী কলিম উল্লাহ বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি জানান, সবার প্রত্যাশা সমাজ ও দেশ থেকে মাদক নির্মূল হোক। তবে 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত হওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত সমাধান নয়। এ ক্ষেত্রে গোড়ায় কাজ করতে হবে। যেখান থেকে মাদক আসছে ওই পথ বন্ধ করতে হবে।
তিনি আরো জানান, এ পর্যন্ত অনেক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন মাদকসহ আটক হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। তাই প্রশাসনের কাছে অনুরোধ থাকবে আইন যেন সবার জন্য সমান থাকে।  

এ ব্যাপারে কক্সবাজার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানান, মাদক ও মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে। তাদের কোনভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। আর এই অপরাধী প্রশাসনের হোক বা খুবই প্রভাবশালী লোক হোক সেটা কোন ব্যাপার না। তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হবে। তারা যেখানেই থাকুক না কেন তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।  তাই সময় থাকতে নিজেদের শুধরে না নিলে পরিণতি হবে খুবই ভয়ঙ্কর।

সিভয়েস/আই

ওমর ফারক হিরু

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়