Cvoice24.com


কক্সবাজারে মাদক পাচারকারীর হাতে হয়রানির শিকার হচ্ছে পর্যটক

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৭ জুন ২০১৯
কক্সবাজারে মাদক পাচারকারীর হাতে হয়রানির শিকার হচ্ছে পর্যটক

ফেনসিডিলের বোতল হাতে চিহ্নিত মাদক পাচারকারী সুমন। ছবিটি শনিবার বিকালে সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে তোলা

ফেনসিডিলের বোতল হাতে যুবকটির নাম মো. সুমন (২৮)। তিনি পেশায় রিকশাচালক হলেও তার মূল কাজ পর্যটকের কাছে ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাজা, মদ ও পতিতা পৌঁছে দেয়া। এ অপকর্মের পাশাপাশি তিনি পর্যটকদের নানাভাবে প্রতারিত করে আসছেন। তার প্রতারণার মধ্যে রয়েছে কমিশনের লোভে হোটেলের খারাপ রুম বুকিং, পতিতাদের সাথে চুক্তি করে পর্যটকের টাকা হাতানো ও মাদক বিক্রি করা। এমনকি তিনি আসল মাদক বিক্রির পাশাপাশি খালি মদের বোতলে পানি ঢুকিয়ে আসল মদ বলে চালিয়ে দেন। ঠিক একইভাবে তার হাতে থাকা ফেনসিডিলের বোতলে ফেনসিডিলের পরির্বতে রয়েছে  পানি।

গত শনিবার বিকালে সুগন্ধা পয়েন্টের সামনে স্থানীয় যুবকদের কাছে হাতেনাতে ধরা খাওয়ার পরে পানিভর্তি ফেনসিডিলের তথ্যটি বেরিয়ে আসে। যদিও তিনি ওই এলাকায় পরিচিত পেশাদার মাদক বিক্রেতা।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, শুধু সুমন নয়, হোটেল-মোটেল জোনে প্রায় ২০ জনের বেশি এই ধরনের রিকশা ও টমটম (অটোরিকশা) চালক রয়েছে। যারা কমিশনের লোভে  পর্যটকদের কাছে মাদক ও পতিতা সরবরাহ করে। এসব সরবরাহের পাশাপাশি তারা কৌশলে পর্যটকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে সর্বস্ব। অনেকে পতিতাদের মাধ্যমে জিম্মি করে অথবা দূরবর্তী স্থানে নিয়ে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয় বেড়াতে আসা পর্যটকের কাছ থেকে। এছাড়া পর্যটকের কাছে মাদক-পতিতা পৌঁছে দেওয়া পর কৌশলে তাদেরই মানুষ পাঠিয়ে থানা-পুলিশের ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়। 

এদিকে পর্যটকেরা সম্মান ও প্রশাসনের ভয়ে সবকিছু দিয়ে কোনভাবে নিজেকে রক্ষা করছে। গোপন তথ্যে জানা যায়, এসব অপকর্মের সাথে হোটেল ও কটেজের কিছু অসাধু লোকজনও জড়িত রয়েছে।

এ ধরনের অপকর্মের সাথে জড়িত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন যুবকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কলাতলী ও হোটেল-মোটেল জোনে এই ধরনের প্রায় ২০-২৫ জন টমটম ও রিকশাচালক রয়েছে। যাদের প্রধান টার্গেট থাকে  যুবকদের। এই প্রতারক চক্র বাস টার্মিনাল, কলাতলী ও সুগন্ধা পয়েন্টে উঁৎপেতে থাকে কখন পর্যটকেরা বাস থেকে নামবে। আর সাথে সাথে ঝাঁপিয়ে পড়ে, কার আগে কে পর্যটককে তার রিকশা বা টমটমে উঠাবে। আর একবার তুলতে পারলেই পাতা হয় প্রতারণার ফাঁদ। তারা পর্যটকের ধরন দেখেই রুম বুকিং থেকে শুরু করে নানা ধরনের কুপ্রস্তাব দিয়ে থাকে। এরই মধ্যে মাদক ও পতিতার প্রস্তাবও দিয়ে ফেলে। অনেক সময় পর্যটকদের  অনেকে আগ বাড়িয়ে এসব প্রত্যাশা করে। আর তখনই পর্যটক পড়ে প্রতারণার ফাঁদে।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার কটেজ ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি কাজী রাসেল আহম্মদ নোবেল জানান, ‘এসব প্রতারক একদম নাই বলব না। কিছুদিন আগেও পর্যটক হয়রানি করা এক প্রতারককে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তবে পর্যটকের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করাই হচ্ছে আমাদের মূল উদ্দেশ্য। যার পরিপ্রেক্ষিতে পুরো হোটেল-মোটেল জোন সিসিটিভি ক্যামরার আওতায় আনা হয়েছে। এসববের পাশাপাশি প্রত্যেক কটেজকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। আর এ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ, জেলা পুলিশ ও র‌্যাব-১৫ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।’

এ ব্যাপারে কক্সবাজার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন জানান, হোটেল-মোটেল জোনসহ পর্যটক ভ্রমণের স্থানগুলোতে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে প্রশাসন। তবে এসব ক্ষেত্রে পর্যটকদেরও সচেতন হওয়া উচিত। যেসব পর্যটক সতর্ক নয় এবং মাদক প্রত্যাশা করে তারাই এই অপরাধীদের জালে আটকা পড়ে। তবে ওই এলাকায় প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং দিন দিন আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি হচ্ছে। আর প্রচেষ্টা রয়েছে বেড়াতে আসা পর্যটকেরা ভ্রমণ শেষে যেন নিরাপদে বাড়ি পৌঁছাতে পারে।

সিভয়েস/আই

ওমর ফারুক হিরু, কক্সবাজার  

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়