এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে ঠিকাদার নিয়োগ অনিয়ম অনুসন্ধানে দুদক

প্রকাশিত: ১৫:৫১, ১৩ জুন ২০১৯
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে ঠিকাদার নিয়োগ অনিয়ম অনুসন্ধানে দুদক

চট্টগ্রামে বহুল আলোচিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ বিষয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)

চট্টগ্রামের যোগাযোগ খাতে অবকাঠামোগত উন্নয়নে স্মরণকালে সবচেয়ে বড় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান এই তথ্য স্বীকার করেছেন।

নগরীর লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই প্রকল্পটির দরপত্র আহবানের পর থেকেই দরপত্রে নিয়ম না মানার অভিযোগ উঠে। সিডিএ’র তৎকালীন চেয়ারম্যান আব্দুচ ছালামের পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে দরপত্রের শর্তে বিভিন্ন পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে মন্তব্য অভিযোগকারীদের। প্রথমে দরপত্রে বিগত ১০ বছরে চার লেইন বিশিষ্ট তিন কিলোমিটার উড়ালসড়ক নির্মাণের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ থাকলেও পরে তা সংশোধন করে চার লেইন বিশিষ্ট আট কিলোমিটার উড়ালসড়ক নির্মাণের অভিজ্ঞতার কথা বলা হয়। অন্যদিকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ৫০০ কোটি টাকার একটি সিঙ্গেল চুক্তি থাকার শর্তও দেয়া হয়।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ সিডিএ’র তৎকালীন চেয়ারম্যানের পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে দরপত্রে এই সংশোধনীগুলো আনা হয়।

আলোচিত এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দরপত্রে অংশ নেয় ম্যাক্সর‌্যাংকিন জেভি, চায়না হারবাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড, চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো কোম্পানি লিমিটেড, সিচুয়ান রোড এন্ড ব্রিজ কর্পোরেশন লিমিটেড, আব্দুল মোমেন জেবি, হেগো তমা মীর আখতার জেভি।

হাজার ৮৫৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকায় কাজটি পায় ম্যাক্স র‌্যাংকিন জেভি। তবে দরপত্রে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস অনুসরণ না করা আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করতে না পারার অভিযোগ উঠে সেসময়। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক।

এই বিষয়ে সিডিএ’র বর্তমান চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের ব্যাপারে দুদক থেকে চিঠি এসেছে৷ পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ না করে অনিয়ম দুর্নীতির আশ্রয় নেয়ার অভিযোগের কথা বলা হয়েছে চিঠিতে। এই প্রকল্পের অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাপারে দুদক অনুসন্ধান করছে।

গত ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়েছে গত ফেব্রুয়ারিতে। দীর্ঘ সাড়ে ১৬ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটির এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি পিলারের পাইলিং কাজ শেষ হয়েছে। পুরো প্রকল্পের মাটি পরীক্ষার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে আছে।

তবে বন্দরের পাশ ঘেঁষে যাওয়া প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বন্দরের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে বলে এরই মধ্যে অভিযোগ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এই বিষয়ে বন্দরের সচিব ওমর ফারুক সিভয়েসকে বলেন, প্রকল্পটির কারণে যাতে বন্দরের কাজে কোন সমস্যা না হয় সেজন্য ব্যবস্থা নিতে আমরা সিডিএ’কে অনুরোধ করেছিলাম। আমাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটির নকশা রিভিউ করতে এরই মধ্যে আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

এই বিষয়ে জানতে সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক মাহফুজুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সিভয়েসকে তিনি বলেন, এই দরপত্রে দশটি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছিল। এদের মধ্যে চার প্রতিষ্ঠান শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। বাকি যে ছয় প্রতিষ্ঠান শর্ত পূরণে সক্ষম হয়েছে তাদের মধ্যে সর্বনিম্ম দরদাতার তালিকা আমরা প্রধানমন্ত্রীর দফতর জাতীয় ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটিতে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে অনুমোদন পাওয়ার পরে আমরা কাজ দিয়েছি। সব নিয়ম মেনেই কাজ দেয়া হয়েছে। এটা একটা বড় প্রকল্প। কাজ না পেলে যে কেউ অভিযোগ করতেই পারে। দুদক তদন্ত করছে, আমরা তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছি।

অন্যদিকে বন্দরের অনুরোধের প্রেক্ষিতে প্রকল্পের নকশা রিনিউ করার ব্যাপারে তিনি বলেন, ব্যাপারটা ঠিক ওই রকম না। আমাদের প্রকল্পের কারণে যাতে ভবিষ্যতে বন্দরের কাজে কোন ব্যাঘাত না ঘটে তা নিশ্চিত করতে বন্দরের প্রতিনিধি নিয়ে একটা কমিটি করা হয়েছে। তারা এই বিষয়টা দেখবে। ইতোমধ্যে ১০ এপ্রিল এই কমিটি একটি সভা করেছে। আগামী সপ্তাহে আবার বসে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবে। তবে এখানে নকশা রিনিউ করার কোন ব্যাপার নেই।

-সিভয়েস/এআরটি/এসএ

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়